পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে ভুতিয়ার বিলের পদ্মফুল
বৃষ্টিশূন্য মেঘের ছায়ায় ফুটে আছে পদ্ম আর শাপলা। রোদের তীব্রতায় ফুলগুলো অনেকটা নির্জীব। ভুতিয়ার বিলের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা ও গহীন বৃত্তান্ত কেবল খুলনার তেরখাদা উপজেলাবাসীই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে। বিলটির দিকে তাকালে সবুজ-সোনালি ধানের পরিবর্তে পদ্ম, শাপলা আর পানির ঢেউ চোখে পড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন রঙের মেলা বসেছে। শরতের আকাশে মেঘের ভেলার নিচে দিগন্ত জোড়া পদ্ম আর শাপলা ফুলের মেলা।
বিলের এমন মনোরম পরিবেশ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরন্ত থেকে অনেক ভ্রমণপ্রেমী বেড়াতে আসেন। পদ্মফুলের সৌন্দর্য তাদের স্বাগত জানায়। ভুতিয়ার বিলে প্রতিবছরের মতো এবারও পদ্মফুল আর শাপলা ফুটেছে। এরই মাধ্যমে মৌসুমী কর্মসংস্থান চাঙা হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে বেড়েছে তেরখাদা উপজেলার সুনাম। ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতিতে নৌকার কদর বেড়েছে।
পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে খুলনা শহর থেকে আসা ইমরান হোসেন, মীম ইসলাম, সামসুর রহমান ও রাকিব বলেন, ‘তেরখাদার ভুতিয়ার বিল অসাধারণ। না দেখলে বিশ্বাস হয় না। ফুল ফুটে আছে, পদ্মপাতার উপরে পানি টলমল করছে। ছোট ছোট পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। হোগলাবন আর পানিতে ভাসমন পদ্মপাতার মধ্যদিয়ে ছোট ডিঙ্গি নৌকা চলছে। চারদিকের পদ্মফুল যেন দর্শনার্থীকে স্বাগত জানাচ্ছে। তবে খারাপ লাগে, যখন দর্শনার্থীরা বেশি বেশি করে পদ্মফুল তুলে নষ্ট করে।’
জানা যায়, গত কয়েক বছর প্রকৃতিপ্রেমীদের পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করাতে নৌকার মাঝি হয়েছেন তেরখাদার অনেকেই। দেশি মাছের ভান্ডার পদ্মবিল। কৈ, শিং, মাগুরের মজুদ এখানে। এ ছাড়া রয়েছে শোল, গজার, রয়না, খলিশা, পুঁটিসহ দেশি অনেক প্রজাতির মাছ। শীতে পানি কমতেই জাল, পোলো নিয়ে মাছ ধরতে নামেন অনেকেই। চারদিকে তখন উৎসবের আনন্দ।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভুতিয়ার বিলের আয়তন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে মাত্র ৪০-৫০ হেক্টর জমিতে পদ্মফুল ফোটে। বাকি অংশ আগাছা ও শ্যাওলায় ভরা থাকে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তেরখাদা উপজেলা ও নড়াইল জেলার অংশবিশেষ নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ভুতিয়ার বিলটির সৃষ্টি। ২০০৩ সাল থেকে ভুতিয়ার বিলের ২০ হাজার একর জমি স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। ফলে ভুতিয়ার বিল পাড়ের মানুষের মধ্যে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। তীরবর্তী এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজারও পরিবার অভাবের তাড়নায় কাজের সন্ধানে শহরে পাড়ি জমিয়েছে। যেসব পরিবারের গায়ে মাছের গন্ধ ছিল, তারা এখন শহরমুখী হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। যারা এলাকায় টিকে আছেন; তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকায় করে শাপলা-শালুক তোলা আর মাছ ধরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, ‘পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ ব্যপারে উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা আছে। পর্যটন খাতকে কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায়, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ভবিষ্যতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘এখানকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি, মৎস্য এবং ব্যবসা। ভুতিয়ার বিল নিয়ে সরকারের বড় পরিকল্পনা আছে। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। ফলে এখানকার মানুষের আয় ও সম্মান বেড়ে যায়। এলাকাকে আরও সুন্দর করে তুলতে বিশেষ নজর রয়েছে।’
আলমগীর হান্নান/এসইউ/এএ/জেআইএম