গান্ধী আশ্রম হতে পারে অপার সম্ভাবনার পর্যটন কেন্দ্র

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

মহাত্মা গান্ধী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ১৯২৫ সালে নওগাঁর আত্রাইয়ে এসেছিলেন। উপজেলার তেতুঁলিয়া গ্রামে আশ্রম গড়ে ছিলেন, যা ‘গান্ধী আশ্রম’ নামে পরিচিত। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে আত্রাই রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে এটি অবস্থিত। একসময় দেখভালের অভাবে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকলেও এখন নজরদারি বেড়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও সাংসদের। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ে তুললে গুরুত্ব আরও বাড়বে। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আশ্রমটিকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার দাবি সচেতন মহলের।

Gandi-cover.jpg

জানা যায়, ইংরেজ সামাজ্যবাদের নির্যাতনে বিরুদ্ধে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা মহাত্মা গান্ধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনমনে জায়গা করে নেন তিনি। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ১৯২৫ সালে নওগাঁর আত্রাইয়ে এসেছিলেন। সে সময় তিনি আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন তেতুঁলিয়া গ্রামে অবস্থান করে এলাকার অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করেছিলেন। একই সাথে এলাকাবাসীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে এখানে খদ্দর কাপড় তৈরির তাঁতশিল্প স্থাপন ও খাঁটি সরিষার তেলের জন্য ঘানি স্থাপনসহ অনেক স্মৃতিচিহ্ন গড়ে তোলেন। তৎকালীন বানভাসি মানুষদের সহযোগিতা করতে তিনি স্থাপন করেন বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি (বিআরসি)।

বর্তমান সরকার ও ভারতীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় আশ্রমটিতে মহাত্মা গান্ধী ও পিসি রায় মেমোরিয়াল হল গড়ে উঠেছে। একতলা ভবনটি দ্বিতলায় উন্নীত করা হচ্ছে। গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত গুদাম ঘরটিও সংস্কার করা হচ্ছে। এছাড়াও নওগাঁ জেলা পরিষদের অর্থায়নে সেখানে বাউন্ডারি ওয়াল ও দৃষ্টিনন্দন গেট নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি গান্ধীজির ম্যুরাল অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও আশ্রমের অনেকটা জায়গায় চাষ করা হচ্ছে তুঁত গাছ। প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দেখতে আসেন। শুধু তাই নয়; প্রতি সপ্তাহে একজন ডাক্তার এসে রোগী দেখেন।

Gandi-cover.jpg

স্থানীয় আনোয়ার হোসেন, রুহুল আমিনসহ কয়েকজন বলেন, ‘গান্ধী আশ্রমের পাশে অনেক জায়গা বেদখল রয়েছে। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল তৈরি করা হলে গরিব-অসহায় মানুষসহ অনেকেই উপকৃত হবে।’

গান্ধী আশ্রম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. নিরঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘এখানে প্রতি বছর আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয় গান্ধীর জন্মোৎসব। আশ্রমের আরও উন্নয়নের পাশাপাশি একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের স্থানীয় সাংসদ ও ভারতীয় অর্থায়নে এখন অনেক উন্নয়ন হয়েছে।’

Gandi-cover.jpg

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছানাউল ইসলাম বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিধন্য গান্ধী আশ্রমটি এখন আর অবহেলিত নয়। উন্নয়নের ছোঁয়ায় এটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে চলেছে। এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুললে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে গান্ধী আশ্রমের পাশে সুদৃশ্য বসার জায়গা তৈরি করা হয়েছে।’

নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, ‘ঐতিহাসিক গান্ধী আশ্রমটি একসময় অবহেলিত ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আশ্রমটির মর্যাদা অনেক বেড়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এখানে এনেছি। নিজস্ব অর্থায়ন এবং ভারত সরকারের সহায়তায় আশ্রমটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগানোর চেষ্টা করে আসছি। এখনো অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে।’

আব্বাস আলী/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।