রাজস্থানে আনন্দ ভ্রমণ : পর্ব ০২

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৯

অরূপ কুমার ভট্টাচার্য

৪ অক্টোবর আমরা রাজস্থানের পিঙ্ক সিটি, জয়পুরে এসে পৌঁছেছি। ৫ অক্টোবর থেকে আমাদের রাজস্থান ভ্রমণ শুরু করব। রাজস্থান ভ্রমণ নিয়ে যখন থেকে পরিকল্পনা শুরু করেছিলাম; তখন থেকেই হাজারও প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। কোন জায়গা থেকে ভ্রমণ শুরু করব? নিজেরা ব্যবস্থা করে যাব, না ট্রাভেল এজেন্টের সাথে যাব? রাজস্থান ভ্রমণ করতে গেলে প্রায় ১৫ দিন হলে মোটামুটি ভ্রমণ সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু আমাদের পক্ষে অত দিন সময় হবে না। তাহলে কোন কোন জায়গা এবার ঘুরব?

সর্বশেষ যে ভাবনাটা আমার মাথায় খুব চেপে বসে, তাহলো খাবারের ব্যবস্থা কী হবে? ফেসবুকে একাধিক ভ্রমণ গ্রুপে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, বেশিরভাগ শুভানুধ্যায়ী খুব ভালো তথ্য দিয়েছিলেন। আবার অনেক মানুষ আমার প্রশ্নগুলো নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে আনন্দ পেয়েছিলেন। তবে ফেসবুক বন্ধুদের সহায়তায়ই আমি সন্ধান পেলাম দিল্লি নিবাসী বাঙালি এক দিদির, নাম শিউলি সেন। ফোন করলাম শিউলিদিকে। আমার রাজস্থান ভ্রমণের ইচ্ছার কথা বললাম। দিদি বললেন, যদি তার উপর ভরসা করি তবে তিনি সব ব্যবস্থা করে দেবেন।

raj-in-(6).jpg

এর পরেই শুরু হলো প্রায়দিন ফোন আর আলোচনা। জানতে পারলাম, দীপ ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল নামে শিউলি দিদির একটি ট্রাভেল এজেন্সি আছে। প্রথম দিকে আমি কিছুটা সন্দীহান ছিলাম, যাকে চাক্ষুষ করলাম না, যার পরিষেবা সম্পর্কে মাত্র একজনের কাছে জানলাম, তাকে বিশ্বাস করা কি ঠিক হচ্ছে! এ ভাবনার মধ্যেই কেন জানি না তার সঙ্গে কথা বলে আমার মন বলছিল, শিউলি সেন দিদিকে বিশ্বাস করা যায়। তাই তার মাধ্যমেই জয়পুর, জয়সালমির আর যোধপুরের হোটেল ও গাড়ি বুক করলাম।

শিউলি দিদি অতি সামান্য টাকার অ্যাডভান্সের বিনিময়ে সব বুক করে হোটেলের অ্যাডভান্স রিসিপ্ট আমাকে মেইল করে দিলেন। আমি তিন জায়গার হোটেলেই ফোন করে খবর নিলাম, আমাদের নামে রুম বুকিং হয়েছে কি-না। তিন জায়গার হোটেল থেকেই বলা হলো, আপনি নিশ্চিত থাকুন। আপনাদের নির্ধারিত দিনের জন্য রুম বুকিং করা হয়েছে। শিউলি সেন ম্যাডাম সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি নিশ্চিত হলাম!

raj-in-(6).jpg

জয়পুরে পৌঁছানোর আগের দিন শিউলি দিদি ফোন করে আমাকে গাড়ির ড্রাইভার ও আমাদের পছন্দমত একটি এসি ট্যাম্পু ট্রাভেলারের সব ইনফরমেশন দিয়ে দিলেন। ৫ অক্টোবর সকাল ৯টার মধ্যে হোটেলে চলে এলো আমাদের গাড়ি। ড্রাইভারের নাম নরেন্দ্র সিং। বেশ সুদর্শন, মিষ্টভাষি নরেন্দ্র, আমাদের জয়পুর ভ্রমণের সারথি। আমরা হোটেল ত্রিবেণী রেসিডেন্সির রেস্টুরেন্টে গরম গরম আলু পরোটা, ভেজ স্যান্ডউইচ আর ব্ল্যাক টি সহযোগে জলখাবার সেরে বেরিয়ে পড়লাম জয়পুর ভ্রমণে।

বিড়লা মন্দির দর্শন: প্রথমেই গেলাম বিড়লা মন্দির দর্শনে। জয়পুর শহরের মধ্যখানে একটি উঁচু টিলার উপর শ্বেত পাথরের তৈরি এই মন্দিরের পরিবেশ অসাধারণ। এখানে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মন্দির চত্বর থেকে জয়পুর শহরের ব্যস্ত জনজীবন বেশ দৃষ্টিনন্দন। রাজস্থানি ঘরানার স্থাপত্য বেশ কয়েকটি ছত্রি মন্দিরের গঠনশৈলীকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মন্দিরে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম অতি প্রাচীন এক কেল্লা, যেখানে দেবাদিদেব মহাদেব প্রতিষ্ঠিত আছেন। বছরে একবার বিশেষ তিথিতে এই কেল্লায় মেলার আয়োজন হয়, তখন সাধারণের যাওয়ার সুযোগ ঘটে। তাই আমাদের এই বিড়লা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকেই সেই সুদৃশ্য কেল্লা দেখা ছাড়া কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।

raj-in-(6).jpg

গণপতিবাবার মন্দির দর্শন: বিড়লা মন্দির দর্শন সম্পূর্ণ করে আমরা চললাম জয়পুরের জাগ্রত গণপতিবাবার মন্দির দর্শনে। বিড়লা মন্দিরের কাছেই এই মন্দির। বহু প্রাচীন এই মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী বিশেষ উল্লেখযোগ্য না হলেও গণপতিবাবার মূর্তি দর্শনে মনের মধ্যে এক শান্তির আবহ অনুভব করলাম।

আলবার্ট মিউজিয়াম পরিদর্শন: জয়পুরের পুরাতন শহরের দক্ষিণে ৩৬ একর ব্যাপ্ত রামনিবাস উদ্যানে গড়ে উঠেছে আলবার্ট মিউজিয়াম। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রিন্স আলবার্টের জয়পুর ভ্রমণকে বরণীয় করে তুলতে ব্রিটিশ স্থপতি স্যার স্যামুয়েল জ্যাকবের হাতে ১৮৬৭ সালে শুরু হয়ে সওয়াই রাম সিং ও সওয়াই মাধো সিংয়ের কালে তৈরি হয় ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে মিউজিয়াম তথা আলবার্ট হল।

raj-in-(6).jpg

বৈচিত্র্য আছে এর ছাদ, গম্বুজ ও অলিন্দের গঠিত কৌশলে। মহারাজাদের তৈলচিত্র, নানা চিত্রকলা, বসন-ভূষণ, রাজস্থানি সমাজ জীবন, হাতির দাঁতের নানা শিল্প, বিশ্বের প্রাচীনতম কার্পেট আমাদের মনকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করল। প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে মিউজিয়ামটি দেখে মনের ক্ষুধা তৃপ্ত হলেও পেটের ক্ষুধা বেশ বৃদ্ধি পেল। তাই আমাদের ড্রাইভার নরেন্দ্রজীকে বললাম, এবার একটা ভালো রেস্টুরেন্টে নিয়ে চলো ভুড়িভোজ করতে হবে।

raj-in-(6).jpg

নরেন্দ্রজী হাওয়া মহলের কাছে একটি গলির মধ্যে হোটেল রয়েল সেরাটনে নিয়ে গেল মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য। হোটেলটির চার তলায় রুফটপে রেস্টুরেন্ট। খাবার কেমন হবে তখনও জানি না, কিন্তু এর অবস্থানগত গুণমান দেখে সবাই মুগ্ধ। হোটেলের ছাদ থেকে সামনের দৃশ্য অপূর্ব। চারিদিক পাহাড়ে ঘেরা, আর দূরে দৃশ্যমান অম্বর ফোর্ট। আমরা সবাই ছবি তুলতেই মত্ত হয়ে গেলাম। হোটেলে খেতে এসেছি না কোন অসাধারণ ভিউ পয়েন্ট থেকে সামনের প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে এসেছি, তা যেন ভুলেই গিয়েছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ ছবি তোলার পর্ব শেষ করে খাবার অর্ডার দেওয়া হলো। বেশ সুস্বাদু আহারে আমরা ভুড়িভোজ সম্পন্ন করে এবার চললাম জয়পুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান অম্বর ফোর্ট দেখতে।

চলবে...

লেখক: সহকারী শিক্ষক, বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম শিক্ষায়তন, হলদিয়া, কলকাতা।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।