বিলাইছড়ির ‘মুপ্পোছড়া’ ঝরনায় একদিন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৯

রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার আরও একটি অপরূপ ঝরনা হচ্ছে ‘মুপ্পোছড়া’ ঝরনা। আমরা ১১ জনের যে টিম বিলাইছড়ি উপজেলা সদর থেকে বাঙ্গালকাটা আদামের ঘাটে বোট থেকে নেমে স্থানীয় গাইড সুমন চাকমার সহযোগিতায় পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা পথ আর ছড়া দিয়ে নকাটাছড়া ঝরনায় গিয়েছিলাম। সে নকাটাছড়া ঝরনা থেকে বেরিয়ে পড়লাম ‘মুপ্পোছড়া’ ঝরনার উদ্দেশে।

নকাটাছড়া ঝরনার পাশেই উঁচু পাহাড়ের পথ বেয়ে উপরে উঠে আবারও পেলাম একটি ছড়ার সন্ধান। সে ছড়াটি ঠিক নকাটা ঝরনার উপরের অংশ থেকে আবারও শুরু হয়ে চলে গেছে মুপ্পোছড়া ঝরনার দিকে। যাওয়ার পথে প্রথমে দেখা মিলল বেশ কয়েকজন পাহাড়ি দুষ্টু ছেলের। তারা ছড়ার জলে কখনো গা ভাসিয়ে দিচ্ছে, আবার কখনো একে অন্যকে জল ছুঁড়ে মেতে উঠেছে খেলায়।

belaichari

এই দুষ্টু পালের দুষ্টুমি দেখে ছড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে থাকি আমরা। আবারও সেই ছোট-বড় নুড়ি পাথর আর পাহাড়ি পথের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয় আমাদের। এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে সেই আকাশচুম্বী উঁচু উঁচু পাহাড় আর পাহাড়কে ঢেকে রাখা অজস্র সবুজ গাছপালা।

পাহাড় আর গাছপালা দেখতে দেখতে এগিয়ে যেতেই শোনা যায় পাহাড়ের কত শত পাখির সুমধুর ডাক। কখনো আবার কানে ভেসে আসে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। একদিকে মানুষের কোন কোলাহল নেই, অন্যদিকে পাহাড়ি শতশত পাখির ডাক আর ছড়া দিয়ে বয়ে যাওয়া জলের শব্দ মনমুগ্ধকর এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। মুহূর্তেই যেন পাহাড়বাসী হওয়ার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলে।

belaichari

ছড়ার কিছু অংশে পানি বেশি থাকায় নামতে হয় হাঁটু সমান পানিতে। আবার কোন কোন স্থানে বড় বড় নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে সতর্ক থেকে পা ফেলে এগিয়ে যেতে হয় মূল ঝরনার দিকে। এভাবে এগোতে এগোতে দেখা মেলে আরও একটি পাহাড়ি রাস্তা। সে রাস্তা যথেষ্ট পিচ্ছিল বলে সতর্ক হয়ে এগিয়ে যেতে হয়। পাহাড়টি বেয়ে খানিকটা উপরে উঠলেই দেখা মেলে প্রায় পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ ফুট উঁচু ‘মুপ্পোছড়া’ ঝরনার।

belaichari

বিশাল এ ঝরনা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলবে যে কোন পর্যটক। পাথরের সৃষ্টি আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে নেমে আসা অজস্র জলধারা দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হবেন। প্রায় পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ ফুট উপর থেকে ঝরে পড়া জল দেখে কবিতা লিখতে বসে যেতে পারেন অনেকেই। ঝরনার জলে গা ভাসিয়ে কিছুটা শুদ্ধ করে নিতে পারেন নিজেকে। তবে সতর্ক থাকতে হবে, ঝরনার জল ঝরে পড়া পাথরগুলো বেশ পিচ্ছিল।

এভাবে ‘মুপ্পোছড়া’ ঝরনা দেখে আবারও পাহাড়ি পথে ছড়া বেয়ে নেমে এলাম বাঙ্গালকাটা আদামে। সেখানে ঘাটের পাশে রয়েছে পাহাড়িদের দোকান। নেমে আসতে আসতে ক্লান্ত শরীর যেন আর পা ফেলতে চাইছে না। তখনই এ আদামের দোকানে আদা, তেজপাতা দিয়ে তৈরি এক কাপ রং চা খেয়ে শরীর একটু তাজা করে নিলাম। সাথে চলল পাহাড়িদের তামাক (হুক্কা বা দাবা) নামে পরিচিত একটি ধূমপান (এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর)।

belaichari

নকাটাছড়া ও মুপ্পোছড়া ঝরনা দেখে বাঙ্গালকাটা ঘাট থেকে আবারও ভাড়া করা বোটটি নিয়ে আসতে থাকলাম বিলাইছড়ি উপজেলা সদরের দিকে। আসতে আসতে সন্ধ্যা নেমে এলো। কিছুক্ষণ বৃষ্টি হওয়ার কারণে এ সময়ে আকাশে দেখা মিলল গোধূলির। একদিকে হ্রদের স্বচ্ছ জল, দূর পাহাড়ের ছায়া আর আকাশের গোধূলি বোটের ছাদে বসে দেখতে দেখতে চলে এলাম বিলাইছড়ি সদরের ঘাটে।

সাইফুল উদ্দীন/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।