মহানবীর চুল-দাড়ি দেখতে তুরস্কের জাদুঘরে পর্যটকদের ভিড়
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফিরতি ফ্লাইট। বিকেল তিনটার মধ্যে ইস্তাম্বুলের নতুন বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিতে হবে। আগের দিন সন্ধ্যায় টার্কিশ এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (বাংলাদেশ) এমরাহ কারকা সফররত বাংলাদেশের মিডিয়াকর্মীদের বলে দিয়েছিলেন, সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করে ৯টার মধ্যে হোটেল থেকে লাগেজসহ চেকআউট করতে হবে। দেরি করলে ব্লু-মস্ক, তোপকাপি প্রাসাদসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর কোনোটাই ভালো করে দেখা হবে না।
বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এসে ঐতিহাসিক সুলতান সুলেমানের তোপকাপি রাজ্যে ঘুরে না গেলে সফরটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে- এমন উপলব্ধি করে মিডিয়াকর্মীদের সবাই সকাল ৯টার মধ্যেই নাস্তা সেরে লাগেজ গুছিয়ে চেকআউট করে গাড়িতে উঠে পড়লেন।
গাড়িতে উঠে এমরাহ কারকা একজন গাইডকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আজ সারাটা দিন উনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন বলে জানালেন। এ-ও বললেন, যেখানে যাবেন সেখানকার ঘটনা স্থান-কাল-পাত্র ইত্যাদি বর্ণনা করবেন তিনি। শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত মার্সিডিজ বেঞ্চ চালকও দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। দক্ষ গাইড রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তোপকাপি প্রাসাদসহ অন্যান্য স্থাপনার আগাম বর্ণনা দিয়ে রাখলেন।
দেশ থেকে যাওয়ার সময় কয়েকজন বন্ধু বলে দিয়েছিলেন, ‘সুলতান সুলেমানের আমলের তোপকাপি প্রাসাদে গেলে অবশ্যই ইসলামিক মিউজিয়ামটি না দেখে আসবে না।’ প্রশ্ন করেছিলাম, ‘ওখানে কী আছে?’ জবাবে তারা বলেছিল, ‘ওই মিউজিয়ামে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবাদের ব্যবহৃত বেশ কিছু জিনিসপত্র। মহানবীর দাঁত, দাড়ি, পায়ের ছাপসহ ব্যবহার্য দ্রব্যাদি রয়েছে ‘
খলিফারা মক্কা-মদিনা থেকে মহানবীর স্মৃতিগুলোর সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। গাইড জানালেন, জাদুঘরে মহানবীর দাঁত, চুল, দাড়ি, তখনকার আমলে চামড়ার ওপর লেখা চিঠি, জুতা, পবিত্র মক্কার কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদ পাথর, ধনুক, তরবারি, পোশাকাদি ছাড়াও খলিফা আবু বকর, হযরত আলী ও হযরত ওসমানের ব্যবহৃত তলোয়ার-সবই রয়েছে ওই মিউজিয়ামে।
তোপকাপি প্রাসাদের বাইরে লম্বা লাইন। আমরা দাঁড়িয়ে আছি। হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিষ্টানসহ সকল জাতির পর্যটকরা শত শত বছরের পুরোনো এই প্রাসাদ দেখতে ছুটে আসছেন। প্রথম দফা গেট পেরোতেই গাইড বললেন, ‘এখন থেকে যতক্ষণ প্রাসাদে থাকবেন ততক্ষণ কল্পনা করুন ওই আমলে কী কী হতো।’ কোথায় সৈন্য-সামন্ত থাকতেন, কোথায় বসে সুলতান সুলেমানসহ অন্যান্যরা বিচার-আচার করতেন, কোথায় রান্না হতো, কোথা থেকে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হতো-একে একে সবাই বলতে লাগলেন তিনি। যতই ঘুরছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। কিন্তু মনে মনে সেই ইসলামিক মিউজিয়ামটি খুঁজে বেড়াচ্ছি। প্রথম গেটে টিকিট না লাগলেও দ্বিতীয় গেটে এসে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হলো-এটাই হচ্ছে মূল প্রাসাদ।
অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেও সেই মিউজিয়ামের দেখা পেলাম না। হঠাৎ করে চোখে পড়ল বেশ কিছুটা দূরে দীর্ঘ একটি লাইন। গাইড জানালেন, এই সেই জাদুঘর। জাদুঘরের সামনে থেকে সাপের মতো এঁকেবেঁকে মানুষ ভেতরে প্রবেশের জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। প্রবেশপথের সামনে মানুষের বেশ বড়সড় জটলা। ৫-৭ মিনিট পরপর ২০-৩০ জন করে পর্যটককে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
টার্কিশ এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (বাংলাদেশ) এমরাহ কারকা এ সময় বলেন, ‘এটি হচ্ছে সেই মিউজিয়াম যেখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাঁত, দাড়ি ও পোশাক সংরক্ষিত আছে। এছাড়া মক্কা-মদিনার বেশকিছু স্মৃতিচিহ্নও এ মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকেই এ মিউজিয়ামে প্রবেশের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিন্তু এমরাহ বললেন, ‘যত বড় লাইন দেখা যাচ্ছে তাতে দেড়-দুই ঘণ্টাতেও ভেতরে প্রবেশ করা যাবে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। একটু লক্ষ্য করতেই বুঝলাম তিনি সঠিক কথাই বলেছেন। শুরুটা দেখা গেলেও লাইন এত বড় যে শেষ পর্যন্ত কে আছে তা বোঝাই যায় না।
প্রবেশদ্বারের সামনে লেখা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। সময় স্বল্পতার কারণে মহানবীর দাঁত, দাড়ি, জুতাসহ বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন না দেখেই ফিরতে হলো।
এমইউ/এসআর/এমএস