ঘোরের মাঝেই ঘুরে এলাম সুলতান সুলেমানের রাজ্যে
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সুলতান সুলেমানের টপকাপি প্রাসাদের সামনে ভারি অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রাসাদরক্ষী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পর্যটকরা দীর্ঘ লাইনে প্রাসাদে প্রবেশের জন্য অপক্ষো করছেন।
প্রাসাদের প্রথম গেটে বিনা বাধায় প্রবেশের অনুমতি মিললো। ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই সবুজ ঘাসের চত্বরের দুই পাশে লম্বা লম্বা গাছের সারি। হাতের বাম পাশে মসজিদ ও মন্দিরের মতো একটি পুরোনো স্থাপনা। ধারণা করা হয়, এখানে দোয়া/উপাসনা করে মূল প্রাসাদে যেতেন প্রজারা।
প্রাসাদের প্রথম ফটকে কোনো বাধা না এলেও দ্বিতীয় ফটকে (মূল প্রাসাদে প্রবেশ করতে) টিকিট দেখিয়ে দেহ তল্লাশির পর তবেই প্রবেশ করা সম্ভব হলো। প্রাসাদের দ্বিতীয় প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই গাইড ফিসফিস করে বললেন, সুলতান সুলেমানের মূল প্রাসাদে প্রবেশ করেছেন।
জানালেন, অটোম্যান সাম্রাজ্যের (উসমানীয় খিলাফত) এক প্রতাপশালী শাসক সুলতান সুলেমান একটানা ৪৬ বছর (১৫২০-১৫৬৬) শাসন করেছেন। একাই তিনটি মহাদেশের (এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা) বিশাল অংশ শাসন করেছেন তিনি।
সম্প্রতি টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল (গণমাধ্যম) তুরস্ক সফর করেন। সফরকালে সুলতান সুলেমানের টপকাপি প্রাসাদ পরিদর্শনের সময় সাথে থাকা গাইড এভাবেই ১৫শ’ শতকের ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করছিলেন।
গাইড বলছিলেন, চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন আপনি ফিরে গেছেন কয়েকশ বছর আগের সেই রাজপ্রাসাদে। এই যে বামে পুরোনো লম্বা ঘর দেখছেন, এখানে সুলতানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা থাকতেন। তাদের খাওয়া-দাওয়া ও বেতন-ভাতা সময় মতো দেয়ার ব্যাপারে সুলতান সতর্ক থাকতেন।
দেহরক্ষীসহ প্রাসাদের সবার জন্য অদূরে পদপদবি ভেদে বিভিন্ন ধরনের রান্না হতো। সৈনিকরা কেউ খাবার না পেলে কিংবা মাস শেষে বেতন না পেলে রাজপ্রাসাদের দিকে চামচ উচিয়ে ধরে প্রতিবাদ জানাতেন। এতেই রাজা তাদের সমস্যা বুঝে ফেলতেন।
প্রাসাদ চত্বরের একটি স্থানে পার্লামেন্ট বসতো। ঘুরে ফিরে সামনে এগুতেই সুলতান সুলেমান ও পরবর্তী বিভিন্ন রাজপরিবারের রাজ সদস্য ও তাদের সৈন্য সামন্তদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র চোখে পড়ে। একেকটি তলোয়ার ৬/৭ ফুট লম্বা। গাইড জানালেন, ‘যখন রাজা ও সৈন্যরা যুদ্ধে বের হতেন তখন আত্মরক্ষায় বুকের বর্ম ও অস্ত্রসহ প্রায় ৭০ কেজি ওজন বহন করতে হতো।’ তলোয়ারের আকার দেখেও সহজেই অনুমান করা যায় ওই সময়ের মানুষ কত লম্বা ও শক্তিশালী ছিলেন।
পার্লামেন্ট থেকে সামনে এগুতেই হেরেমখানা। হেরেমখানায় ওই আমলে ব্যবহৃত বিশাল আকারের খাট দেখতে পেলাম। গাইড বললেন, এখানে সুলতান সুলেমান, তার মা, বোন, স্ত্রী ও সন্তানরা থাকতেন। রাজার মা দাসি পছন্দ করে ছেলের সেবার জন্য লেখাপড়া শিখিয়ে পাঠাতেন। দাসিদের মধ্যে কেউ তার স্ত্রী হতেন, আবার কেউবা হতেন না। কেউ কেউ রাজকীয় আদব কায়দা শেখার জন্য তাদের সন্তানদের রানীমার কাছে পাঠাতেন।
বসফরাস প্রণালীর তীরে অবস্থিত এ প্রাসাদটির সর্বত্রই শত শত বছর আগের স্মৃতি বহন করছে। প্রাসাদ পরিদর্শনে ক্ষণিকের জন্য পর্যটকরা হারিয়ে যান শত বছর আগের যুগে। বসফরাস প্রণালীর সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে রাজা বাদশাদের স্মৃতি জাগানিয়া বিভিন্ন স্থান দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হন।
এমইউ/আরএস/জেআইএম