সোনারগাঁওয়ে আনন্দ ভ্রমণে একদিন

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০২:৪৭ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নগরের ব্যস্ততা ফেলে একদিনের জন্য আনন্দ ভ্রমণে যাওয়া যায় ঢাকার আশেপাশেই। রাজধানীর অদূরেই ঈশা খাঁর স্মৃতিবিজড়িত সোনারগাঁও। একদিনের অবসরে সেখান থেকে ঘুরে এসেছে ঢাকাস্থ মাদারীপুর সাংবাদিক সমিতির সদস্যগণ। গত ৯ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী এ ফ্যামিলি ডে আনন্দঘন হয়ে উঠেছে সবার অংশগ্রহণে।

সকাল ৯টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বর থেকে একটি বাস ছেড়ে যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও অভিমুখে। সংগঠনের সভাপতি মামুন ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এবিএম সেলিমের তত্ত্বাবধানে সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ মান্নান মিয়ার সঞ্চালনে যাত্রা শুরু হয়। শনিবার হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা থাকায় পৌঁছতে বেশি সময় লাগে না।

in-(1)

সকাল সাড়ে দশটার দিকে ফ্যামিলি ডে’র বাসটি পৌঁছায় সোনারগাঁওয়ের পর্যটন পিকনিক স্পটে। সেখানে ঈশা খাঁর স্ত্রীর ব্যবহৃত ৫০ বিঘা জমি নিয়ে অবস্থান করা পুকুরের পাশে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। সবাই যার যার মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ঘুরতে বের হয়ে যান।

পিকনিক স্পট থেকে ৩-৪ মিনিট পায়ে হেঁটে চলে যান ঈশা খাঁর আমলের রাজধানী সোনারগাঁওয়ের রাজকীয় ভবন দেখতে। পাশেই লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। জাদুঘরে রয়েছে জমিদারী আমলের বিভিন্ন তৈজসপত্র থেকে শুরু করে জমিদারদের ব্যবহৃত অনেক নিদর্শন। জাদুঘরে প্রবেশ করতে জনপ্রতি দিতে হয় ৩০ টাকা করে। চার বছরের নিচের শিশু ও প্রতিবন্ধিদের জন্য প্রবেশ একদম ফ্রি।

in-(2)

সোনারগাঁও জাদুঘরের প্রধান বৈশিষ্ট্য গ্রামীণ সব আসবাবপত্র, ঘর-বাড়ি, কৃষি যন্ত্রপাতি, নকশি কাঁথা, হাড়ি-পাতিল, নারীদের অলংকার প্রভৃতি। প্রবেশ পথের মুখেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত চিত্রকর্ম অবলম্বনে বানানো গরুর গাড়ির ভাস্কর্য। তিন তলা বিশিষ্ট জাদুঘরের বিভিন্ন নিদর্শন দেখতে দেখতে দর্শনার্থীরা হারিয়ে যান গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যে।

স্থানীয় মাঠেই চলছে লোক ও কারুশিল্প প্রদর্শনী মেলা। হরেকরকম পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। তাঁতপণ্য, বাঁশ-কাঠ-বেত দিয়ে তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, পিতলের জিনিসপত্র, নকশি কাঁথা, বিছানা চাদর, শীতের চাদর প্রভৃতি কিনতে পাওয়া যায়।

in-(3)

পাশের ময়ূরখচিত মঞ্চে চলছে সাংস্কৃতিক পর্ব। লোক সংগীত ও বাউল গানের জমজমাট আসর জমে সেখানে। দেশি-বিদেশি শ্রোতারা উপভোগ করেন সেই গান। পাশের জলাশয়ে নৌকা ভ্রমণ করছেন অনেকেই। এক অন্ধ বাউল বেহালা বাজিয়ে গান করছেন আপনমনে। শ্রোতারা তাকে আর্থিক সহায়তা করছেন।

জাদুঘর চত্বর এলাকা ঘুরে সবাই চলে যান পানাম সিটি। পানাম নগর নারায়ণগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর-প্রাচীন সোনারগাঁওয়ের এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে। যা বাংলার বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। সোনারগাঁওয়ের ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে।

in-(4)

সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে উত্তর দিকে হাঁটাপথেই পৌঁছানো যায় অর্ধ্বচন্দ্রাকৃতি পানাম পুলে। পুলটির দৈর্ঘ ছিল ৭২ ফুট আর প্রস্থ ১৫.৫ ফুট, মাঝখানটা উঁচু। এই পুল পেরিয়েই পানাম নগর এবং নগরী চিরে চলে যাওয়া পানাম সড়ক। আর সড়কের দু’পাশে সারি সারি আবাসিক একতলা ও দ্বিতল বাড়িতে ভরপুর পানাম নগর।

ঐতিহাসিক এসব স্থান ঘুরে দুপুর ২টার মধ্যে সবাই উপস্থিত হন পর্যটন পিকনিক স্পটে। সেখানে দুপুরের খাবার শেষে শুরু হয় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পর্ব। নারীদের বালিশ বদলের পাশাপাশি পুরুষরাও অংশ নেয় বালিশ বদল খেলায়। শিশুরা অংশ নেয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতায়। বালিশ বদলে তিন নারী ও তিন পুরুষকে পুরস্কৃত করা হয়। শিশুদের সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র। এছাড়া উপহার হিসেবে পুরুষদের টি-শার্ট এবং নারীদের তোয়ালে দেওয়া হয়।

in-(5)

বিকেল পাঁচটার দিকে শেষ হয়ে যায় সব আয়োজন। এবার ফেরার পালা। দলীয় ছবি তোলার পর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সবাই গাড়িতে উঠে বসেন। গাড়ি ছাড়ে ঢাকার উদ্দেশে। সন্ধ্যা সাতটায় গাড়ি পৌঁছায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে। সেখান থেকে সবাই বিদায় নেন যার যার গন্তব্যের দিকে। একটি আনন্দঘন মুহূর্ত সবার জন্য স্মৃতিময় হয়ে ওঠে। পারস্পারিক পরিচিতি ও সৌহার্দ বাড়াতে একদিনের এ আয়োজন মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন সবাই।

একদিনের এ আয়োজনে উপস্থিত থেকে সাফল্যমণ্ডিত করেন সৈয়দ আফজাল হোসেন, জিএম মাসুদ ঢালী, সিকদার আবদুস সালাম, মিজানুর রহমান, মঞ্জুরুল করিম, নাসিমুল আহসান, আবুল খায়ের খান, আশুতোষ, শামীম আহসান প্রমুখ।

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।