ছেড়া দ্বীপে নীল-সবুজের হাতছানি
চারদিকে নীল সমুদ্র, তার মাঝে একখণ্ড সবুজের বন। দূর থেকে দেখলে বনই মনে হয়। বলছি বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্ব দক্ষিণের বিন্দু ছেড়া দ্বীপের কথা। স্থানীয়রা স্থানটিকে সেরাদিয়া বা ছেড়াদিয়াও বলে। সেন্টমার্টিন থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্বীপটি। ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন হুসাইন আরমান-
কলেজ থেকে সেন্টমার্টিন ট্যুরে গিয়েছিলাম। সেই সুবাদে অনিন্দ্য সুন্দর সবুজ বন আর কালো প্রবালের সমষ্টি ছেড়া দ্বীপেও পা রাখার সুযোগ হয়। ভ্রমণের ২য় দিন সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট থেকে সকাল ৯টার দিকে একটি ট্রলারে উঠি আমরা ২৫ জনের মত। অন্য একটি ট্রলারে আরো ২৫ জন।
আমি চালকের আসনের পাশেই বসি। এখান থেকে খুব সুন্দরভাবে চারপাশের সমুদ্র দেখা যায়। ট্রলারের পেছনের দিকে সবচেয়ে উঁচু অংশে বসে টাইটানিকের নায়ক জ্যাকের মত একটু ভাব নেয়ার চেষ্টা করলাম। এটি টাইটানিক না হলেও অনুভূতি কিন্তু কোন অংশে কম না। ততক্ষণে সূর্য বেশ ভালোভাবে জ্বলে উঠেছে। রোদের হাত থেকে বাঁচার জন্য মাথার ওপর ত্রিপল দেয়া হলো। দাঁড়িয়ে-বসে সেলফিতে সবাই স্মৃতি ধরে রাখছে নীল সাগরের সাথে।
> আরও পড়ুন- শীতকালে ভ্রমণে যে ধরনের পোশাক পরবেন
যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম হয়তো অতটা সুন্দর হবে না। কিন্তু কাছাকাছি যেতেই দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হলাম। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে সারি সারি নারিকেল গাছ। মনে হচ্ছে- যেন একটু পরেই প্যারেড শুরু হবে, তাই সুন্দর পরিপাটি হয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ঝাউ গাছগুলোও তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে সজারুর কাঁটার মত দাঁড়িয়ে থেকে।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাই। এই দ্বীপের পানি এত স্বচ্ছ যে, সমুদ্রের তলদেশের মাছের বিচরণও দেখা যায়। সাদা-কালো অসংখ্য পাথর দেখা যাচ্ছে, এ যেন পাথরের রাজ্য। এত স্বচ্ছ নীল পানি দেখলে যে সাঁতার জানে না, তারও এই পানিতে গোসল করতে ইচ্ছে করবে। আমারও করেছিলো, যেহতু বাড়তি কোন জামা-কাপড় নেইনি। তাই ইচ্ছাটা কবর দিয়ে ট্রলার থেকে নামার প্রস্তুতি নিলাম। ট্রলার থেকে ছোট ডিঙ্গি নৌকা করে দ্বীপে নামতে হয়। পানি কম হওয়ায় ট্রলার পাড়ে আসতে পারে না। নৌকা থেকে সাবধানে নামতে হয়, কারণ পাথরগুলো ধারালো। অসাবধানতায় যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এই দ্বীপের আয়তন মাত্র তিন কিলোমিটার। নৌকা থেকে মনে হচ্ছে, পাথরের দেশে পা দিয়েছি। জীবিত-মৃত, সাদা-কালো নানা আকারের-রঙের পাথর আর পাথর। একটু হেঁটে পাথরের রাজ্য পেরিয়ে গেলাম কেয়া বনের কাছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালিতে বনের রূপ ধারন করেছে দ্বীপটি। তবে কেয়া গাছের আধিক্যই বেশি। রোদের আলোতে বালিগুলো চিকচিক করছে। প্রতিনিয়ত ঢেউ এসে পাথরের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে। পাথরের ফাঁকে ছোট ছোট মাছগুলো দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
> আরও পড়ুন- রাস্তার মাঝে দাগ দেওয়া হয় কেন?
একপাশ থেকে আরেকপাশ দেখা যায়। সবুজের চারপাশে বালি, আবার বালির চারপাশে প্রবালের বসাবস। এর পরেই সমুদ্রের নীল জগৎ। প্রকৃতির এক অপূর্ব সমাহার। ধাপে ধাপে সাজানো সবকিছু। তবে সমুদ্র স্বৈরশাসকের মত সবকিছুতে অাধিপত্য বিস্তার করে। কারণ জোয়ার এলে এই দ্বীপের প্রায় অর্ধেক পানিতে ডুবে যায়।
ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়েছিলাম কিন্তু প্রণয়টা হয়নি। কারণ একটু পরেই ফিরতে হবে। এখানে পর্যটকদের রাতে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। ১৯৯৭ সাল থেকে এই দ্বীপে একটি মাত্র পরিবার বসবাস করে। তবে আমাদের সাথে তাদের দেখা হয়নি। কেয়া বনের সবুজ আর প্রবালের একবুক ভালোবাসা নিয়ে আবার ফিরে এলাম সেন্টমার্টিন। আবার কখনো সুযোগ পেলে পুরনো প্রেমের আবেদন নিয়ে যাবো পাথরের দেশে।
এসইউ/জেআইএম