সিলেট ভ্রমণের আগে যে বিষয়গুলো জেনে নেবেন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:১৯ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

ব্যস্তময় জীবনে কিছুটা সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন সবুজঘেরা চায়ের দেশ সিলেটে। তবে নতুন কোন জায়গায় যেতে অবশ্যই নির্দেশনার দরকার। কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কোন কোন স্থানে ঘুরবেন- এসব নিয়ে পরিকল্পনা করলে ভালো হয়। সিলেট ঘুরে এসে ভ্রমণের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন নূর মোহাম্মদ-

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার রিপোর্টার্স ক্লাবের ৯ জন সদস্য সিলেটের উদ্দেশে ভ্রমণ করি। তারা হলেন- নূরে আলম রনি, আল-আমিন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, বায়জিদ আহমেদ, মোবারক হোসেন, নূর মোহাম্মদ, তারেক পাঠান, আল-আমিন মুন্সী, সাইফুল ইসলাম। আগে থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখি।

যে জায়গাগুলোতে আমরা ৪ দিনের সফর করে এলাম, তা হলো- পান্থুমাই, বিছনাকান্দি, হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরানের মাজার, রাতারগুল, লালাখাল। তবে জাফলং ও সংগ্রামপুঞ্জিও ঘুরে আসতে পারেন। আমরা যেতে পারিনি সময়ের অভাবে। এছাড়া শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট, মাধবপুর লেক ও ন্যাশনাল টি গার্ডেন, বধ্যভূমি ৭১, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, সাত রঙের চা দেখতে পারেন।

শ্রীমঙ্গলে গেলে হোটেল পানসীতে অন্তত একবেলা খাবেন। এখানকার খাবারের মান খুব উন্নত। উপরের সিরিয়াল অনুযায়ী আমরা ঘুরে এসেছি। এভাবে ঘুরলে সহজ হবে। তবে ভালো লেগেছে বলে একটি স্পটেই বেশি সময় নষ্ট করবেন না। পরে অন্য স্পট মিস করতে পারেন।

Sylhet

ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে শ্রীমঙ্গলও যেতে পারেন। যদিও আমাদের আগে সিলেট যাওয়ার কথা ছিল। রাত সোয়া ১১টার ট্রেনে চড়ে রাত সাড়ে ৩টায় শ্রীমঙ্গল স্টেশনে পৌঁছাই। স্টেশন থেকে আগে বুক করা হোটেল স্কাই পার্কে চলে যাই।

ঘোরাঘুরি: সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে হোটেল পানসীতে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ি। ট্রেন স্টেশন বা বাস স্টপের সাথে প্রচুর মাইক্রো বা সিএনজি পাবেন। সারাদিনের জন্য ১৫০০ টাকায় বলে নেবেন আমরা এই স্পটগুলো ঘুরবো। স্পটগুলো শ্রীমঙ্গলের ১৫ কি.মিটারের মধ্যেই। দুপুরে খাওয়ার জন্য পাশেই ছোট হোটেল পাবেন। একই গ্লাসে সাত স্তরে সাত রঙের চায়ের কথা অনেকেরই জানা। শৈল্পিক ও আকর্ষণীয় এ চায়ের নামডাক অনেক আগেই বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে গেছে। শ্রীমঙ্গলে যারা বেড়াতে আসেন তারা সাতরঙ চায়ের স্বাদ নিতে ভোলেন না।

> আরও পড়ুন- সুুন্দরবনে চারটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে

আমরা ৯ জন গিয়েছিলাম, তাই ৩২০০ টাকায় ২টি সিএনজি ভাড়া করি। ড্রাইভারকে বললেই এসব স্থানে নিয়ে যাবে। উপরের সিরিয়াল অনুযায়ী ঘুরলে আর সময় নষ্ট হবে না। সারাদিনের ঘোরাঘুরি শেষে ডিনার করে হোটেলে পৌঁছে যাই।

পরদিন সকালে শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে ১১টার ট্রেনে চড়ে বিকেল ৩টায় সিলেট স্টেশনে পৌঁছাই। স্টেশন থেকে সিএনজি করে হোটেল গোলশানে গিয়ে উঠি। বিকেল ৫টার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ি হজরত শাহ্জালাল ও শাহ্পরানের মাজার জিয়ারতের জন্য। জিয়ারতের সময় জুতা চুরি থেকে সতর্ক থাকবেন। মাজার জিয়ারত শেষে রাতের সিলেট শহরটাও ঘুরে দেখতে পারেন। ডিনার শেষ করে আমরা আবার হোটেলে পৌঁছে যাই।

Sylhet

সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা করে ২টি সিএনজি ভাড়া করি ৩,০০০ টাকায়। উদ্দেশ্য পান্থুমাই ও বিছনাকান্দি। যাওয়ার সময় কিছু খাবার ও পানি নিয়ে যাবেন। কারণ সেখানে খাবারের ব্যবস্থা নাই। আমরা সকাল ১১টার মধ্যেই হাদারপাড় গোয়াইন ঘাটে পৌঁছে যাই। পরে ঘাট থেকে পান্থুমাই ও বিছনাকান্দির জন্য ১,৫০০ টাকায় ২টি স্পটে ঘোরার জন্য নৌকা ভাড়া করি। প্রথমে পান্থুমাই গেলে নৌকা থেকে নেমে প্রায় ১ ঘণ্টা হেঁটে যেতে হবে। এরপর পান্থুমাই ঘুরে ওই নৌকাতে উঠলে ২৫ মিনিট লাগবে বিছনাকান্দি যেতে। যদি সময় নষ্ট করেন তাহলে মাঝি বলবে সময় নেই যে কোন একটিতে যেতে হবে।

যদি চিন্তা করেন একটি স্পটে যাবেন তাহলে অবশ্যই বিছনাকান্দি। সেক্ষেত্রে নৌকা ভাড়া হবে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। রাত ৯টার মধ্যে সিলেট শহরে চলে আসি। অবশ্যই গোয়াইন ঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে পলাশ থানার এক সাবেক পুলিশ অফিসারের আতিথেয়তায় ডিনারটাও সেরে ফেলি।

আজও সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে ২টি সিএনজি ভাড়া করি ৩২০০ টাকায়। উদ্দেশ্য রাতারগুল ও লালাখাল। সকাল ১০টায় রাতারগুলের ঘাটে পৌঁছে যাই। ঘাট থেকে আমরা ৯ জন তাই বড় একটি নৌকা ভাড়া করি ৭০০ টাকায়। দুপুর ১২টায় আমরা রাতারগুল থেকে লালাখালের উদ্দেশ্যে রওনা হই। দুপুর ২টার দিকে লালাখালে পৌঁছে হালকা খাবার খেয়ে লঞ্চ ভাড়া করি ১ ঘণ্টা ৬০০ টাকা। সময় দেখে নেবেন, ১ মিনিট বেশি ঘুরলেই ২ ঘণ্টার ভাড়া রেখে দেবে। লালাখাল থেকে আমরা সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সিলেট শহরে এসে কিছু কেনাকাটা করে নেই। পরে ডিনার শেষে ১০টার মধ্যে হোটেলে পৌঁছে যাই। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ৭টার ট্রেনে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হই।

Sylhet

ঢাকা থেকে সিলেট: বাসে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় গাবতলী এবং সায়েদাবাদ থেকে। বাসগুলো সকাল থেকে রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেড়ে যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে।

> আরও পড়ুন- বান্দরবানের কোথায় কী দেখবেন

ট্রেনে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস।

এছাড়াও ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশসহ বেশকিছু এয়ারের বিমান প্রতিদিন যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে।

কোথায় থাকবেন: সিলেটে থাকার মতো অনেকগুলো হোটেল আছে। তবে ঈদের সময় সিট সংকট থাকতে পারে। তাই যাওয়ার ২-৩ দিন আগে বুকিং দিলে ভালো হয়। এছাড়াও সিলেট শহরের সব জায়গায় বেশকিছু হোটেল আছে।

কোথায় খাবেন: খাওয়ার জন্য সিলেটের জিন্দাবাজারে বেশ ভালো তিনটি খাওয়ার হোটেল আছে। এগুলোতে প্রায় ২৯ প্রকারের ভর্তা পাওয়া যায়। গাড়িতে সব সময় রুটি, কলা, কেক, বিস্কুট, পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন রাখবেন।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।