সুলতানি ও মুঘল আমলের কুতুব শাহী মসজিদ

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২৭ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। তেমনি একটি নিদর্শন কুতুব শাহী মসজিদ। কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত এ নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শাহরিয়ার কাসেম-

বন্ধুবর আবু সুফিয়ানের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায়। তিনি প্রায়ই তার এলাকার গল্প বলতেন। আমারও বেশ ভালো লাগত। তিনি ভাটি অঞ্চলের কথা শোনাতেন। ভাবতাম, যদি একবার সেখানে যেতে পারতাম। যদিও তিনি আমাকে অনেকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তার কথার মাঝে প্রায়ই বিখ্যাত দরবেশ কুতুব শাহের প্রসঙ্গ থাকতো। কুতুব শাহ সম্পর্কে অনেক জেনেছি কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি।

kutub-cover

অবশেষে এবছরই গ্রামের ছোট ভাইদের উদ্যোগে অষ্টগ্রাম গেলাম। সেখানে গিয়ে আবু সুফিয়ান ও কুতুব শাহের কথা মনে পড়ল। আমি কিছু না ভেবেই রিকশা নিয়ে গেলাম কুতুব শাহের দরবারে। বিশাল দীঘির পাড়ে অবস্থিত কুতুব শাহী মসজিদ।

kutub-cover

বাঙালির ইতিহাস হাজার বছরের। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাকে শাসন করেছেন দেশি-বিদেশি অনেক শাসক। তখন নিজেদের প্রয়োজনেই তারা গড়েছেন অনেক স্থাপনা। সময়ের ধারায় যা আজ প্রত্নসম্পদে পরিণত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, কারুকাজ খঁচিত দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকাসহ অনেক কিছু।

শতশত বছর আগে গড়ে ওঠা এমনই অনেক নিদর্শন এখনও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। তবে সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অনেক প্রত্নসম্পদ। তার মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের কুতুব শাহী মসজিদ অন্যতম। শিগগিরই এর সংস্কার না হলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে প্রায় সাড়ে চারশ’ বছরের পুরনো এই মসজিদ। দেশের প্রত্নসম্পদের তালিকা থেকে হারিয়ে যাবে আরও একটি নিদর্শন।

kutub-cover

বাংলার স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন অষ্টগ্রামের পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুব শাহী মসজিদ। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে একটি বৃহৎ দীঘির পাড়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। কিশোরগঞ্জের এক কামেল দরবেশ কুতুব শাহের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদের পশ্চিম পাশেই রয়েছে কুতুব শাহের সমাধি।

kutub-cover

মসজিদটি বাংলার সুলতানি ও মুঘল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যে নির্মিত। তবে মসজিদের নির্মাণকাল নিয়ে মতবিরোধ লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ ১৬শ’ শতাব্দিতে নির্মিত বললেও অধিকাংশই ১৭শ’ শতাব্দিতে নির্মিত বলে মনে করেন। আয়তকার মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ৪৬ ফুট ১১ ইঞ্চি এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২৭ ফুট ১১ ইঞ্চি। চৌচালা ঘরের চেয়েও এর কার্ণিশগুলো অনেক বাঁকা। এর চার দিকে আট কোণ বিশিষ্ট চারটি মিনার রয়েছে। বাইরের অংশে প্যানেলিংয়ের কারুকার্য রয়েছে তিনটি, উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালে ২টি করে ৪টি সর্বমোট ৭টি সুলতানি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব দেয়ালের প্রবেশ পথের বিপরীতে পশ্চিম দেওয়ালে তিনটি মেহরাব রয়েছে। ১৯০৯ সালে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।

kutub-cover

ঘুরতে গিয়ে অল্প সময়েই দেখলাম, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে মসজিদটি দেখতে। স্থানীয়দের ধারণা অনুযায়ী, প্রতিবছর মাঘ মাসে দরবেশ কুতুব শাহের ওরস অনুষ্ঠিত হয়। তাতে জমায়েত হন তার অসংখ্য ভক্ত। যখন ফিরে এলাম অষ্টগ্রাম থেকে; তখন বন্ধু আবু সুফিয়ানের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে বেশ দুঃখ পেলাম।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।