গতিমান এক্সপ্রেসে তাজমহলের পথে

আরিফুল ইসলাম আরমান
আরিফুল ইসলাম আরমান আরিফুল ইসলাম আরমান
প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৮
ছবি: সংগৃহিত

রাজধানী শহর। ট্রাফিম জ্যাম না থাকলে কি হয়! কিন্তু দিল্লি তো পুরোই উল্টো। সাত সকালে বের হয়েছি। নিজামুদ্দিন স্টেশনে যাবো আগ্রা যাওয়ার টিকিট নিতে। উদ্দেশে তাজমহল দেখা। বাসেও যাওয়া যায়। বাসের চেয়ে ট্রেনই নাকি ভালো। খরচ বাসের চেয়ে ৩ গুণ। তবে দিল্লি থেকে আগ্রা যাওয়ার ট্রেন গতিমান এক্সপ্রেস সত্যিই নাকি ‘গতিমান’। তাই মিস করলাম না।

নিজামুদ্দিন স্টেশনের পথে। উবার, ট্যাক্সির দেখা নেই। দামাদামি করে অটোরিকশাতেই। পরিচ্ছন্ন পথঘাট। রিকশাগুলো থেমে যায় বড় রাস্তার পাশেই। রাস্তায় শুধু ট্যাক্সি, প্রাইভেটকার আর বাস। ফুটপাতে দোকানপাট নেই বললেই চলে। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে গাছগুলো। স্বাচ্ছন্দে হাঁটছেন পথচারি। কোথাও কোথাও মানুষের জটলা। চায়ের আড্ডা।

নিজামুদ্দিন স্টেশনের নিচতলায় তথ্য কেন্দ্র। জানা গেল, দোতলায় বিদেশি কোটায় মিলবে টিকিট। একজন জানালেন, গতিমান এক্সপ্রেসের অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাবে পাশের টিকিট বুকিং সেন্টারে। দিল্লি স্টেশনেও এই টিকিট পাওয়া যায়। হোটেলের কাছেই ছিল। কিন্তু না জানার কারণেই নিজামুদ্দিন স্টেশনে।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে খুঁজতে লাগলাম টিকিট বুকিং সেন্টার। ছোট্ট একটি কাউন্টার। উপরে লেখা টিকিট বুকিং সেন্টার। পাসপোর্ট জমা দিয়ে টিকিট নেওয়ার সবকিছু চূড়ান্ত। হঠাৎ মনে হল, টিকিট নেওয়ার সবকিছুই হচ্ছে অনলাইনে। আবার টিকিটের দামের চেয়ে বেশি টাকাও চাচ্ছে। সঠিক জায়গায় এসেছি তো? একটু সময় নিয়ে পাশে গেলাম। দেখা মিলল আসল বুকিং সেন্টারের।

khwaja nizamuddin railway station

চারদিকে বড় বড় গাছপালা। গেইটও জরাজীর্ণ। ব্রিটিশ আমলের ভবন। দেখের বোঝার উপায় নেই এটি টিকিট বুকিং সেন্টার। ভেতর ঢুকতেই তথ্য কেন্দ্র। অপেক্ষার পর একটি ফরম দিয়ে বললেন, এটি পূরণ করে নিয়ে আসুন।

দেশে টিকিট নেওয়ার সময় কাউন্টারে সেকি চিৎকার চেচামেচি। সোমবারের টিকিট দিয়েন। কিন্তু সোমবার কত তারিখ তা বলার বালাই নেই। এসি না নন এসি? এরকম নানা সমস্যা তো রয়েছেই। সে সব সমাধানের সুন্দর একটা পথ করেছে ভারতীয় রেলওয়ে। যে ফরমটি দিয়েছে তাতেই লিখতে হলো এসব তথ্য।

টিকিট নেওয়ার জন্য অনেকগুলো কাউন্টার। বাড়তি ভিড় নেই। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টিকিট নেওয়ার জন্য আলাদা কাউন্টার। সেখানেই মিলল টিকিট। চারজনের জন্য আলাদা আলাদা টিকিট। দিল্লির নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে যাওয়া-আসা জনপ্রতি ১৫০০ রুপি করে নিয়েছিল সম্ভবত।

গতিমান এক্সপ্রেস ভারতের সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন। এটি শুধু নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে যাওয়া-আসা করে। দিল্লি থেকে আগ্রার ২০০ কিলোমিটার পথ যেতে এই ট্রেনে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। শুক্রবার বাদে প্রতিদিনই এই ট্রেন নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে ছাড়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। আগ্রায় পৌঁছায় সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে। আর আগ্রা থেকে বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে দিল্লির নিজামুদ্দিন স্টেশনে পৌঁছায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। মূলত পর্যটকদের জন্যই এই ট্রেনটি চালু করেছে ভারতীয় রেলওয়ে। পুরো ট্রেনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ট্রেন। ভারতে আগে কখনো ট্রেনে উঠিনি। কীভাবে ট্রেন খুঁজে বের করতে হবে সে বিষয়েও ধারণা নেই। তাই যেতে হবে আগেই। সাড়ে ৬টায় পৌঁছে গেলাম স্টেশনে। বিশাল ওয়েটিং রুম। মনে হচ্ছে লঞ্চের ডেকে চাদর বিছিয়ে ঘুমিয়েছেন যাত্রীরা।

ডিসপ্লেতে দেখাচ্ছে ৮টা ১০ মিনিটে ১০ নাম্বার প্লাটফর্ম থেকে গতিমান এক্সপ্রেস আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পাশাপাশি দু'টি করে সিট। টিকিট চেকার এসে টিকিট না দেখেই হাতে থাকা তালিকার সাথে নাম মিলিয়ে নিলেন।

বিমান আর ট্রেনের মধ্যে পার্থক্য করতে একটু সমস্যাই হল। বিমানবালাদের মতো গতিমান এক্সপ্রেসেও রয়েছে ‘ট্রেনবালা’। চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সিটেই ছিল টাইমস অব ইন্ডিয়া।

food of gotiman express

ভেজ নাকি নন-ভেজ? কোনটা খাবেন? জেনে নিলেন ট্রেনবালা। ১০ মিনিট পরেই চলে এলো খাবার। সুন্দর ট্রেতে সাজানো খাবার। ভেজিটেবল ফ্রাইড রাইস, ব্রেড, স্লাইস কেক, জেলি, সস, টকলেটসহ আরো অনেক কিছু। ডেজার্ট হিসেবে ছিল সুস্বাদু পেপে। ছিল সুন্দর প্যাকেটে মোড়ানো টি-ব্যাগ ও চিনি। পরিবেশনটাও ছিল দেখার মত।

ট্রেন ছুটে চলছে সমানতালে। কোন ঝাঁকি নেই। চারপাশে কেবলই সবুজ আর সবুজ। বাংলাদেশেই আছেন! এমনটা ভাবলেও অবাক হবেন না।

এই কামড়ায় আমরা চারজনই বাঙালি। বাকিরা ভিনদেশি। ব্যাগ, লাগেজ তাকে রেখে সবাই ব্যস্ত টাইমস অব ইন্ডিয়া নিয়ে। কেউ আবার ব্যস্ত স্মার্টফোনে। শিশুও আছে অনেকের সাথে।

Ariful Islam Arman

১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটেই ট্রেন পৌঁছে গেল আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে। স্টেশনের বাইরে থেকে ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে ঘুরে দেখলাম তাজমহল ও আগ্রা ফোর্ট।

এবার ফেরার পালা। ৫টা ৫০ মিনিটে আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে নিজামুদ্দিন স্টেশনের উদ্দেশে। ৫টার আগেই পৌঁছে গেলাম স্টেশনে। সকালে নেমেছিলাম স্টেশনের ৪ নাম্বার প্লাটফর্মে। ফেরার সময়ও ট্রেনটি ওই প্লাটফর্মেই।

ঠিক সময়েই ট্রেন চলতে শুরু করলো। কয়েক মিনিট পরেই চলে এলো খাবার। সকালের চেয়ে খাবারের স্বাদ কোন অংশে কম নয়। ৮টা না বাজতেই পৌঁছে গেলাম নিজামুদ্দিন স্টেশনে।

রাতের এই সময়টায় ভিড় কম হওয়ার কথা থাকলেও বেড়েই চলছে। একটু পরপরই ট্রেন এসে থামছে। প্লাটফর্ম জুড়ে মানুষের ভিড়।

স্টেশনের বাইরে হলুদ ট্যাক্সির হাকডাক। যে যার মতো করে ভাড়া চাইছে। উপায় না দেখে উবার নিয়ে ফিরলাম হোটেলে।

এএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।