বরফের পাহাড়ঘেরা সোলাং ভ্যালি

আরিফুল ইসলাম আরমান
আরিফুল ইসলাম আরমান আরিফুল ইসলাম আরমান
প্রকাশিত: ০১:৪৮ পিএম, ০৬ মে ২০১৮

বাস ছুটে চলছে মানালির উদ্দেশে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। জেগে দেখি চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন। বাস চলছে ধীরে ধীরে। মানালির আবহাওয়া ৬ ডিগ্রির নিচে। আপডেট জেনেছিলাম আগেই। কিন্তু বাসে ওঠার আগে শীতের কাপড় পরে নেওয়া হয়নি।

পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা এক রেস্টুরেন্টে দাঁড়ালো বাস। ঘড়িতে রাত ২টা। নামতে গিয়ে বুঝতে পারলাম বাইরে কী অবস্থা। এত শীত এর আগে কখনো অনুভূত হয়েছে বলে মনে হয় না। বাসের গেট থেকেই ফিরলাম সিটে। কিছু সময় চলার পর আবারো বিরতি। মোবাইল নেটওয়ার্ক জানান দিচ্ছিল, আমরা এখন পাঞ্জাব প্রদেশে। নেমে শীতের কাপড় জড়িয়ে নিলাম। হালকা নাশতাও খেয়ে নিলাম।

মানালিতে তখন ভোর। দূর থেকে পাহাড়ের চূড়ায় সাদা সাদা কী যেন দেখা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, হিমালয়ের বরফের পাহাড়। একটু পরেই মনে হলো, পাহাড়ের চারপাশজুড়ে বরফের আবরণ। পুরোটাই বরফ নয়। এরকম দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে পৌঁছে গেলাম মানালিতে। মল রোড থেকে একটু দূরেই বাসস্ট্যান্ড।

solang-in-(1)

বাস থেকে নামতেই দালালদের দৌরাত্ম্য। একজনের পরামর্শে তার গাড়িতেই ছুটলাম হোটেলের উদ্দেশে। পছন্দ হলো না। নিজেরাই খোঁজা শুরু করলাম। মল রোডের পাশেই ১৫০০ রুপিতে পেয়ে গেলাম দারুণ এক হোটেল। তখনও সকালের খাবার খাওয়া হয়নি। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলাম। আজই ঘুরতে যাবো সোলাং ভ্যালি।

ছিমছাম শহর মানালি। রাস্তার পাশে সারি সারি দোকান। একপাশে এইচআরটিসি বাসস্ট্যান্ড। দোকানগুলোর সামনে দিয়ে পরিচ্ছন্ন হাঁটার পথ। এই নিয়ে মল রোড। সকালের নাস্তা সেরে মল রোড থেকেই সোলাং ভ্যালি যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করে নিলাম ১ হাজার টাকায়।

solang-in-(2)

বিহাস নদীর তীর দিয়ে গাড়ি ছুটে চলছে সোলাং ভ্যালির উদ্দেশে। পাথরের ফাঁক দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বরফগলা পানি। চারদিকের গাছগুলোতে কোন পাতা নেই। জানা গেল, এগুলোই আপেলের গাছ। শীতের এই সময়টায় গাছে পাতা বা ফল কিছুই থাকে না।

সোলাং ভ্যালি পৌঁছার আগেই রাস্তার পাশে সারি সারি দোকান। এসব দোকান থেকেই ভাড়া করে নিতে হবে বিশেষ জুতা ও পোশাক। যা ছাড়া সোলাং ভ্যালিতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। জনপ্রতি ২৫০ রুপিতে পোশাক ও জুতা ভাড়া করে নিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম সোলাং ভ্যালির খুব কাছে।

solang-in-(3)

প্রথমে ভেবেছিলাম ট্যাক্সিতেই চলে যেতে পারবো সোলাং ভ্যালিতে। কিন্তু ট্যাক্সি চালক আমাদের খানিকটা দূরেই নামিয়ে দিলেন। জানালেন, এখান থেকে ঘোড়া বা মটরচালিত বিশেষ যানে যেতে হবে পাহাড়ের উপরে। সেখানেই সোলাং ভ্যালি। দেরি না করে বিশেষ পোশাক ও জুতা পরে মটরচালিত বিশেষ যানে ছুটলাম সোলাং ভ্যালিতে। নিচে থেকে উপরে যাওয়া-আসা ৩ হাজার রুপি।

চারদিকে ছোট ছোট পাথর। এর মাঝ দিয়েই সরু পথ। এই পথ ধরেই মটর যান চলছে সোলাং ভ্যালির পথে। অনেকে হেঁটেই চলছেন। কিন্তু তাতে পরিশ্রম বেশি। কিন্তু মটর যানে ভ্যালিতে যাওয়া সত্যিই রোমাঞ্চকর।

solang-in-(4)

দু’পাশে উঁচু পাহাড়। মাঝে একটু জায়গায় বরফাচ্ছন্ন। কয়েকদিন আগেই স্নো-ফল হয়েছে। তাই জমে আছে। সেখানেই মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। গাড়ি থেকে নেমে আমরাও যোগ দিলাম। বরফ গলে পানি চলে যাচ্ছে বিহাস নদীতে। পানিতে পা ভিজিয়ে আমরা এখন সোলাং ভ্যালিতে। বড় বড় পাথরে মুড়িয়ে আছে স্নো-ফলের বরফ। হাতে নিতেই মিলিয়ে যাচ্ছে সব। কেউ কেউ বরফগুলো বল বানিয়ে একে অন্যের দিকে ছুঁড়ছেন। এ এক অন্যরকম অনুভূতি।

এই ভ্যালিতেই একটি ছোট্ট ঘর। কেউ থাকেন বলে মনে হয় না। পুরোটাই বরফাচ্ছন্ন। সময় কাটছে ছবি তুলে। নিজ শহর থেকে হাজার মাইল দূরে এখানে আসা কেবলই বরফের সৌন্দর্য দেখতে। বরফের মাঝ দিয়ে অনেকে স্ক্যাটিং করছেন নিজ উদ্যোগে। কেউ বা আবার উপরের পাহাড় থেকে প্যারারাইডিং করছেন। ছোট্ট শিশুরাও বিশেষ পোশাকে বরফ নিয়ে আনন্দে মেতেছে।

solang-in-(5)

চারপাশে পাহাড় থাকায় এখানে সূর্যের আলো সরাসরি পৌঁছে না। তাই স্নো-ফলের বরফগুলো কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত জমে থাকে। বরফের মাঝে কেটে গেল অনেক সময়। দুপুর গড়িয়েছে। মটর যানে করে সোলাং ভ্যালি থেকে ফিরে এলাম নিচে। ট্যাক্সিতে উঠে মল রোডের উদ্দেশে। পেছনে সোলাং ভ্যালি। দু’পাশে বরফাচ্ছন্ন পাহাড়ের সারি। বিহাস নদীর তীর ধরে গাড়ি ছুঁটে চলছে।

> আগামী পর্বে থাকছে মল রোডের গল্প।

এএ/এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।