আমাদের আনন্দ ভ্রমণ

হাবীবাহ্ নাসরীন
হাবীবাহ্ নাসরীন হাবীবাহ্ নাসরীন , কবি ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৭:৩৯ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭

অফিসে কাজ করতে করতে মাঝে মাঝেই আমাদের মনে হয়, দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে পারলে মন্দ হতো না! যখন গুগল থেকে দূরের কোনো শহর কিংবা অরণ্যের ছবি ডাউনলোড করি তখন আমি কিংবা আমার পাশের ডেস্কে বসা সহকর্মী আনমনে বলে উঠি, ‘এখানটায় গিয়ে থাকতে পারলে বেশ হতো!’ ঝরনার ছবি দেখে করুণ চোখে চেয়ে থাকি, সাগরের ছবি দেখে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। একদিন হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আমরা প্রতিদিন অফিস করে যাই।

chandpur

তবুও তো এমনটা হয়, সত্যিই একদিন অফিস রেখে ঘুরে বেড়ানোর দিন আসে! আর সেই সুযোগটাও কিনা করে দেয় স্বয়ং অফিসই! ঠিক ধরেছেন। বলছি ফ্যামিলি ডে’র কথা। এই একটা দিন কোনো কাজ নেই। নিউজ আপ করার তাড়া নেই। জরুরি মিটিং নেই। অ্যালেক্সা র্যাংকিং নিয়ে চিন্তিত হওয়া নেই। বানান ভুল নিয়ে বকা খাওয়া নেই। যা আছে তার সবটুকুই আনন্দ। অনেক হাসি। অনেক গান। অনেক আড্ডা আর অনেক গল্প।

chandpur

শীত শুরু মানেই বনভোজনের আমেজও শুরু। আমরা বুঝি একটু তাড়াহুড়োই করে ফেললাম। শীত আসতে না আসতেই আমরা বেড়াতে চলে গেলাম চাঁদপুরে। আমরা মানে আমরা। দুইশ’ আশি জনের বিশাল বহর। ফ্যামিলি ডে বলে কথা! হালকা শীতের বাতাসকে পাত্তা না দিয়ে ভোর ছয়টায় পৌঁছে গেলাম সদরঘাট। সেখানে আমাদের জন্য প্রস্তুত ছিল পূবালী-৭। ছোটখাটো এক জাহাজ যেন! গিয়ে দেখি আমরাই প্রথম। দেখতে না দেখতে আরো অনেকেই পৌঁছে গেলেন। সবার সঙ্গে তখন কুশল বিনিময়। যারা তখনও এসে পৌঁছায়নি তাদেরকে ফোন করে তাড়া দেয়া। ঘড়িতে তখন সাড়ে আটটা বেজে গেছে। সবাই এলেও আসেনি নীলিমা! নীলিমা এলো আরও প্রায় পনেরো মিনিট পর। সে লঞ্চে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চ চলতে শুরু করলো!

chandpur

আমি, তৃষা আর যুথী মিলে একরাশ বকাঝকার মাধ্যমে নীলিমাকে স্বাগত জানালাম। যুথী সকাল থেকেই ক্ষুধায় কাতর ছিল। তাই আর দেরি না করে সকালের খাবার ডিম-খিচুড়ি বণ্টন করা হলো। খাওয়া শেষে আমরা আবার গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে লাগলাম।দোতলার ডেকে ততক্ষণে মোটামুটি সবাই জমায়েত হয়েছে। হ্যান্ডমাইকে আরমান ভাই আমাদেরকে ডাকছেন শুনে আমরাও সেখানে হাজির হলাম। দায়িত্ব পড়লো মহিলাদের লুডু খেলার তদারকির। চারজন করে সাতটি গ্রুপে লুডু খেলা হলো। বিজয়ী নির্বাচন শেষে শুরু হলো আরেক মজার খেলা। সহকর্মীদের মধ্যে একজন আরেকজনকে অনুকরণ করে দেখানো। লটারিতে যার নাম উঠবে, তাকে অনুকরণ করে দেখাতে হবে। ধর্ম ডেস্কের সহ সম্পাদক সাইফুল্লাহ্ ভাই যখন ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কের সহ সম্পাদক সুমন ভাইকে অনুকরণ করে দেখালো আমাদের তখন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার দশা।

chandpur

দম্পতিদের টিপ পরানো খেলায় সবচেয়ে বেশি মজা হয়েছিল। কারণ একেকজন টিপ পরাতে গিয়ে নিজের বউ রেখে আরেকজনের বউয়ের দিকে চলে যাচ্ছিলেন। চোখ বেঁধে রাখার কারণেই এই মজা হচ্ছিল। বিজ্ঞাপন বিভাগের ইফতেখার ভাই সদ্য বাবা হয়েছেন। পনেরো দিনের বাচ্চাকে নিয়ে তো আর পিকনিকে যাওয়া যায় না। ইফতেখার ভাই তাই একাই গেলেন। আর বনভোজেনের সারাটা পথ তিনি বিরহে কাতর ছিলেন। টিপ পরানো খেলার সময়ও তিনি মন খারাপ করে বলছিলেন, ‘ও বউ তুমি কই!’

chandpur

বেলা যখন একটা আমরা তখন চাঁদপুরে। মুনিরা ভবন নামক জায়গাটি তখন জাগো নিউজ পরিবারের পদচারণায় মুখর। যে যার মতো করে গাছের ছায়ায়, মাঠের ঘাসে জায়গা করে নিলো। শত শত কবুতর উড়ে বেড়াচ্ছিল নীল আকাশে। এদিকে মাঠে তখন বিবাহিত বনাম অবিবাহিত ফুটবল খেলা শুরু হয়েছে। বিবাহিতর পক্ষে প্রথম গোলটি দিলো ক্রীড়া বিভাগের সদ্য বিবাহিত সহ সম্পাদক শিমুল রহমান। খেলা শেষ হওয়ার আগেই ডাক পরলো দুপুরের খাবারের। নারী ও শিশুর জন্য আগে খাওয়ার ব্যবস্থা। আমরা খেতে চলে গেলাম। নাজিরশাল চালের ঝরঝরে গরম ভাতের সঙ্গে গরুর মাংস ভুনা, মুরগির রোস্ট, ইলিশ মাছের দোপেঁয়াজা, তিন রকমের ভর্তা, চাটনি ছিল। এরকম খাবার দেখে কার না জিভে জল আসে!

chandpur

খাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নেয়ার পালা। ঘাসের বিছানায় একটু গড়াগড়ি। ছোট ছোট দল হয়ে গল্প আর আড্ডা। ছবি তোলা। সুরেলা আর বেসুরো গলায় গান। আর অযথাই হাসাহাসি। হাসতে আবার কারণ লাগে নাকি! ক্রীড়া বিভাগের রিপোর্টার নির্ঝর ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে দিচ্ছিলেন। বলাবাহুল্য ছবির বিষয়বস্তু হিসেবে তিনি তুলনামূলক নারী সহকর্মীদেরই বেশি পছন্দ করছিলেন! সব ফটোগ্রাফার নারীদের ছবি তোলায় ব্যস্ত, তখন সেন্ট্রাল ডেস্কের সহ সম্পাদক সেলিম ভাই মন খারাপ করে ডেকে ডেকে বলছিলেন, ‘কেউ কি আছেন, আমার একটা ছবি তুলে দেবেন? আছেন কোনো হৃদয়বান ফটোগ্রাফার!’

chandpur

ফেরার পথে ভাটির টানে নদীর পানি নেমে গেছে। তাই ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে লঞ্চের কাছে এলাম। তারপর র‌্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণ, আবার গান, নাচ, আড্ডা। আমরা ছোট ছোট ভাগ হয়ে কেবিনে কিংবা করিডোরে বসে আড্ডা দিলাম। ইফতেখার ভাই দারুণ সব গান গেয়ে শোনালেন। দোতলায় তখন অনেক হৈ-হুল্লোড়। আমরা আমাদের কেবিনে। যুথী তার কেবিনে গিয়ে নাকডেকে ঘুম। এদিকে আমি, তৃষা, নীলিমা মিলে গল্প করছি, নদীর বুকে চাঁদ দেখে হৈ-হৈ করছি। আবার একদিন হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমরা ফিরে আসছি ব্যস্ততম শহরে।

এইচএন/এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।