ঘুম ঘুম চোখে অন্য এক শহর

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক চাঁদপুর
প্রকাশিত: ১২:৪০ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ভোর সাড়ে পাঁচটায় পৌঁছলাম চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে। প্রেসক্লাব ভবন দেখেই আমরা অবাক। জেলা শহরে এতো জায়গাজুড়ে তিনতলা ভবন নিয়ে প্রেসক্লাব। অবাক হওয়ার মতোই। সোডিয়াম আলোয় কোনো এক জাদুর শহর বলে মনে হলো। ঘুম ঘুম চোখে যেন পা রাখলাম অন্য এক শহরে। হয়তো আরো অনেক বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

সড়কবাতির নিচে দাঁড়িয়ে সোহাগ ভাই একটি সেলফি তুললেন। প্রেসক্লাবের পাশেই হোটেল গ্রান্ড হিলশা। হোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। জেলা শহরে চমৎকার হোটেল। হোটেলের রুম আগেই বুক করে রেখেছিলেন ইকরাম চৌধুরী ভাই। মেইন গেটে দাঁড়িয়ে হোটেলে ফোন দিলেন সোহাগ ভাই। সিকিউরিটি গার্ড এসে গেট খুলে দিলেন। বললেন, ‘আপনারা আসবেন বলেই অপেক্ষা করছিলাম।’ আমরা ভেতরে ঢুকে রিসিপশনে গিয়ে দাঁড়াতেই রিসিপশনিস্ট বললেন, ‘আপনারা প্রেসক্লাবের গেস্ট?’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য রুম বুক করা আছে। একটি সিঙ্গেল এবং একটি ডাবল।’

chadpur

সবই ঠিক ছিল, তবে রুমের ভাড়ার কথা শুনে আমরা থতমত খেয়ে গেলাম। জেলা শহরে এতো ভাড়া কী করে হয়? আর এতো বাজেটও তো আমাদের নেই। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। সোহাগ ভাই কথা বললেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে। রিসিপশনিস্ট কথা বললেন ম্যানেজারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘আপনারা রুমে যান। বাকিটা আমরা দেখছি।’ হোটেল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হলো। যদিও আমাদের জন্য বিশেষ কমিশন ছিল। তারপরও বাজেটের চেয়ে ভাড়া বেশিই মনে হলো। কী আর করা? আপাতত একদিন থাকবো ভেবেই উঠতে হলো।

ইকরাম ভাই হয়তো ভেবেছেন- ঢাকা থেকে আমরা যাচ্ছি, তাই নিম্ন বা মধ্যম মানের হোটেলে না রেখে পাঁচতারকা হোটেলে রাখলেই ভালো হবে। তার আতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ। তার বিশাল হৃদয়ের অসীম ভালোবাসা তাৎক্ষণিক আমাদের কাছে পাহাড়সম মনে হলো। ব্যাগ কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছিলো না। তবে আনোয়ার ভাই লঞ্চে ঘুমিয়েছিলেন। তাকে বেশ চনমনে মনে হচ্ছিল। কিন্তু আমি আর সোহাগ ভাই নির্ঘুম ছিলাম। টের পাচ্ছি এখন।

chadpur

হোটলের বোর্ডার তথ্য পূরণ করে চাবি নিয়ে ঢুলু ঢুলু শরীরে উঠে গেলাম সিঁড়ি বেয়ে। সিঙ্গেল বেডটি ২০৮ নম্বর। আর ডাবল বেডটি ৩০৮ নম্বরে। মনে মনে ভাবছি, সিঙ্গেলে বোধহয় আনোয়ার ভাই-ই থাকবেন। কারণ তিনি তো আবার কারো সঙ্গে ঘুমাতে পারেন না। কিন্তু না- দেখলাম, তিনি আমার সঙ্গেই উপরে উঠছেন। অর্থাৎ আমরা সোহাগ ভাইকে তার রুমে রেখে বের হয়ে গেলাম। সোহাগ ভাই দোতলায় একা থাকবেন। আমরা দু’জন তিনতলায় থাকবো।

ভ্রমণে কারো সঙ্গ না পেলে আমার পানসে লাগে। আমি নিশ্চিত, আমি একা থাকবো না। হয় আনোয়ার ভাই, নয় সোহাগ ভাই- কেউ না কেউ তো আমার সঙ্গে থাকছেনই। তাই রুমে এসে মনের আনন্দে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। এটুকু সময় তো একটু ঘুমুতে হবে। কিন্তু আনোয়ার ভাই তো দোকান খুলে (টিভি) বসেছেন। খুলেছেন তো খুলেছেন, তা-ও আবার গোপাল ভাঁড়ের কার্টুন না কী যেন?

chadpur

আলো এবং শব্দ থাকলে আমার ঘুম হয় না। তাই লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। হোটেলটি চমৎকার। সফেদ বিছানা-বালিশ। ছিমছাম, সাজানো-গোছানো। ‘আমি নেতা হবো’ সিনেমার শুটিং করতে এসে শাকিব খান এই হোটেলেই উঠেছিলেন। সেই কথা ভেবে টাকার দুঃখ কিছুটা হয়তো ভুলে যেতে পারি। তবে এ পর্যন্ত এসে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে যে, চাঁদপুরের প্রত্যেকটি মানুষই কেমন অতিথিপরায়ণ। তাদের আতিথেয়তা মুগ্ধ হওয়ার মতো। তখন থেকেই আন্দাজ করছিলাম যে, এ শহরের মানুষ অতিথিদের মর্যাদা দিতে জানেন। কারণ লঞ্চ থেকে এই হোটেল পর্যন্ত কেউই অতিথিদের সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ করেননি।

chadpur

সকালে ঘুম না ভাঙতেই চলে এলেন ইকরাম ভাই। এরআগে সকাল আটটার দিকে নাস্তার জন্য ঢেকে গেলেন হোটেলের বয়। আমরা নাস্তা নেইনি। কারণ লঞ্চ থেকে নেমেই তো বরিশাল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে ভরপুর খেয়ে নিয়েছিলাম। ইকরাম ভাই এসে পড়ায় দ্রুত ফ্রেস হয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, সময় সকাল এগারোটা। হায় হায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের স্পট ভিজিটে যেতে হবে।

chadpur

দ্রুত বের হয়ে রাস্তায় নামতেই ইকরাম ভাই বেশ কয়েকবার কিছু খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। কোনো রেস্টুরেন্ট দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন। আমরাই বরং সময় নিচ্ছিলাম। তাকে বললাম, ‘জুট মিল দেখার পর একবারে দুপুরে ভারি খাবার খেয়ে নেবো।’ আসলে আমাদের পেটে তখন কোনো ক্ষুধা ছিলো না।

এসইউ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।