নিরাপদ ভ্রমণে সড়কে শৃঙ্খলা আনা জরুরি

উম্মে সালমা
সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনোভাবেই কমানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ভ্রমণ যেন ক্রমশই অনিরাপদ হয়ে উঠছে। ঈদের ছুটির পর থেকে দেশের প্রতিটি প্রান্তে সড়ক দুর্ঘটনার খবর প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে টানা কিছুদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকায়ও বাস দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতি বছর এ দুর্ঘটনার হার ও সংখ্যা বাড়ছে।
একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ০.৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ৪.২২ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ৩.৮৮ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৩.৪৩ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ১৫.৭০ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ১.২০ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৭.১৪ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ২২.৭৪ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ৬৮.৯২ শতাংশ।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত, ১০ হাজার ৩৭২ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত, ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৪৮টি দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত, ১৫২ জন আহত এবং ১০৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৪ সালে দেশে প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ জনের। এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ সালে। সেবার সড়কে মৃত্যু হয়েছিল ৫ হাজার ৮৪ জনের।
বিগত বছরগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনার খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সড়কে দুর্ঘটনায় যানবাহনের সংখ্যার বিচারেও মোটরসাইকেল রয়েছে শীর্ষে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া ও বর্তমানে তা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠার পেছনে আছে নীতিগত দুর্বলতা। সরকার এখন মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পন্থার কথা বললেও এটি সহজে সম্ভব নয়। মোটরসাইকেল সহজলভ্য হলেও চলার উপযুক্ত সড়ক নেই। মোটরসাইকেল এখন যাতায়াত ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়েছে এবং জীবিকার পথ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দক্ষ চালক ও মোটরসাইকেলের চলাচল উপযোগী সড়ক করতে হবে আগে।
জনবহুল এ দেশে যান চলাচলে শৃঙ্খলার অভাব এবং সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা যথেষ্ট উপযুক্ত না হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। মূলত অশিক্ষিত চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশে ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালক কর্তৃক বেপরোয়া গতিতে যান চালানো।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যেভাবেই হোক, সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সচেতন হতে হবে পথচারীদেরও। একই সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত।
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। এমতাবস্থায় সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সচেষ্ট হতে হবে। যাত্রী সাধারণের সচেতনতাও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি, আমরা কোনোমতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। নিরাপদ ভ্রমণে তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।
এসইউ/জেআইএম