রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়িতে যা যা দেখলাম

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৫

বিলকিস নাহার মিতু

বন্ধুদের ৪-৫ জনের যে একটা সার্কেল; তার মধ্যে কারোরই বিয়ে হয়নি। বিয়ে না হওয়ার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই শ্বশুরবাড়ি নিয়ে একটু আগ্রহ বেশি। আমরা ভাবলাম, আমাদের শ্বশুরবাড়ি যাওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের যেহেতু শ্বশুরবাড়ি নেই; তাই জায়গা ঠিক করলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ফুলতলা উপজেলায়। উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণডিহি গ্রাম। এখানেই রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি। যা রবীন্দ্র কমপ্লেক্স নামে পরিচিত।

বিজ্ঞাপন

রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দৌলতপুর থেকে অটোতে উঠলাম আমি, বৃষ্টি, সুমি ও সুমাইয়া। দৌলতপুর থেকে প্রথমে গেলাম ফুলতলা উপজেলায়। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া। এরপরে ফুলতলা থেকে ভ্যানে দক্ষিণডিহি রওয়ানা দিলাম। ভাড়া নিলো ২০ টাকা করে। ফুলতলা উপজেলা থেকে দক্ষিনডিহি যাওয়ার পথটুকু অসম্ভব ভালো লেগেছে। কারণ চারদিকে সবুজ ধানক্ষেত দোলা দিচ্ছে। আমাদের মনে হলো, আমরা ছায়া সুনিবিড় গ্রামে প্রবেশ করেছি। যেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি। আমরা আনন্দে গেয়ে উঠলাম, ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ, আমার মন ভুলায় রে।’ ভ্যান চলছে আঁকাবাঁকা সর্পিল গতিতে। দেখা যাচ্ছে পাশেই ভৈরব নদী।

রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়িতে যা যা দেখলাম

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আমরা গান গাইতে গাইতে পৌঁছে গেলাম রবীন্দ্র কমপ্লেক্সের সামনে। গেটের বাইরে থেকে দেখতে পাচ্ছি সাদা দোতলা ভবন আমাদের আকর্ষণ করছে। যেটার বয়স ১২০-১২৫ বছর। ভেতরে প্রবেশ করতে ১০ টাকা করে টিকিট কাটতে হবে। বরাবরের মতো সুমি আমাদের গাইড দিয়ে যেমন আনলো; তেমনই টিকিট কাটারও দায়িত্ব ওর। টিকিট পেয়ে আমরা ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখি, দুধারে গাছ লাগানো সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য। ওরা তিনজন সমানতালে তার ওপর হাত বুলিয়ে ছোটাছুটি করছে। এরপর হাতের বামদিকেই একটা ফোয়ারা আর নাগরদোলা চোখে পড়ল। একটি নাগরদোলা দখল করা আছে। বাকি একটা খালি দেখতেই আমরা চারজন দখল করার জন্য দিলাম দৌড়। যেমন প্রাইমারির বাচ্চারা বেঞ্চ দখলের জন্য দৌড়ায়।

নাগরদোলায় চারজনেরই বসার জায়গা ছিল। আমরাও চারজনই ছিলাম। এবার সমস্যা হলো নাগরদোলা ঘোরাবে কে? কোনো রকমে প্রাণপণে পা দিয়ে ঠেলে নাগরদোলায় চড়ি। তারপর আমি তখনই নেমে গিয়ে ওদের একটি ঘুরানি দিয়ে চলে গেলাম ফুলের ভিডিও করতে। ওরাও সঙ্গে এলো। নাম না জানা একটি ফুল দেখলাম, যা দেখতে শিরীষ ফুলের মতো গঠন হলেও সাদা ধরনের ফুল বেশ চমৎকার লাগলো। এরপর ফুল ধরে চারজন মন ভরে ছবি তুলে দেখলাম, একটা আম গাছের সাথে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ছোট্ট একখানি ঘর। যে যার মতো পারছে উঠছে আর নানা স্টাইলে ছবি তুলছে। কতক্ষণ আমরাও অপেক্ষা করলাম ওখানে ওঠার জন্য।

রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়িতে যা যা দেখলাম

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

এরপর সুমি, বৃষ্টি, সুমাইয়া উঠলো কাঠের ঘরটায়। বেশ কয়েকটি ছবি তুলে আমরা এখন ঢুকবো রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরালয়ে। ঘরের সিঁড়ির দুপাশে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মৃণালিনী দেবীর মূর্তি। হঠাৎ আমার শরীরটা অন্যরকম আনন্দে পুলকিত হয়ে উঠলো এটা ভেবে যে, এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পা দিয়েছিলেন। আমরাও সেই পথে প্রবেশ করলাম। ঘরের নিচতলায় রয়েছে বড় বড় জানালা এবং পাঠাগার। যেখানে সংগ্রহ করা আছে রবীন্দ্রনাথের অনেকগুলো বই। এ ছাড়া আছে অনেক ছবি। আমরা দোতলায় উঠলাম। এ বাড়ির সিঁড়ি অনেক সুন্দর করে বানানো। দোতলায় প্রবেশ করতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় আকৃতির একটি ছবি বাঁধানো দেখতে পেলাম। এখানে ছবি বা ভিডিও ধারণ করায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কাউকে আমি মানতে দেখিনি।

রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়িতে যা যা দেখলাম

বিজ্ঞাপন

সুমি এবং বৃষ্টি এদের দুজনকে দেখলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার সাথে নানা ধরনের প্রেমময়ী ভঙ্গিতে দুজন ছবি তুললো। দেখে ভাবলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে আমার এই দুই বান্ধবী তার সাহিত্যে জায়গা করে নিতো। তাদের কবির প্রতি এমন প্রেমময়ী আবেদনের কারণে। এখানে সংরক্ষিত আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাতের লেখা বেশ কয়েকটি কবিতা এবং গীতাঞ্জলি। এ ছাড়া আছে রবীন্দ্রনাথের রাজকীয় পাগড়ি পরা ছবি। ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তোলা ছবিসহ অনেক ছবি এখানে সংরক্ষণ করা আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের হাতের আঁকা ছবিও এ জাদুঘরে আছে। আমরা দোতলার বারান্দায় গেলাম। যেখান থেকে ঠান্ডা শীতল বাতাস প্রবেশ করছে। ওপর থেকে দেখলাম অসংখ্য দর্শক এসেছে জায়গাটি দেখতে। বাড়ির ডানপাশে আছে মৃণালিনী মঞ্চ। যেখানে ২৫ বৈশাখ ও ২২ শ্রাবণ মেলা হয়ে থাকে।

আমরা চারপাশটা দেখে আবারও দৌলতপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। আবারও মনের আনন্দে বেসুরো গলায় গান ধরলাম চারজন। খুলনার মধ্যে গ্রাম্য শান্তি পেতে হলে অবশ্যই রবীন্দ্র কমপ্লেক্স ঘুরে আসতে হবে। আমি নিশ্চিত, এখানে এলে মন খুঁজে পাবে এক অন্য সুখের মোহনা।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

বিজ্ঞাপন

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।