সি টু সামিট
উত্তাল যমুনার বুকে এক অসম লড়াই

সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে আসছিল। সেই সাথে বাড়ছিল উত্তাল যমুনার রুদ্র রূপ। বিশাল জলরাশি, প্রবল স্রোত আর রাতের অন্ধকার, সব মিলিয়ে এক ভয়ংকর অথচ রোমাঞ্চকর যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ছিল একদল সাহসী সাঁতারুর, যারা শুধু স্বপ্ন দেখেননি, স্বপ্নের জন্য লড়তেও জানেন।
বিকেল ৪টা ১ মিনিটে যখন আমরা নদীতে নামলাম; তখন যমুনার ঢেউ যেন আমাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। শুরুতে কিছুটা সহজ মনে হলেও ধীরে ধীরে আমরা বুঝতে পারলাম, এটি শুধুই একটা শুরুর অগ্নিপরীক্ষা! নদীর গভীরতা, প্রচণ্ড স্রোত আর অদৃশ্য ভয় আমাদের পথ আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমাদের চোখ ছিল গন্তব্যের দিকে। প্রায় ৩ কিলোমিটার নদীপথ সাঁতরাতে হয়েছে।
সাঁতারের মাঝপথে এসে আমরা আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলাম। স্রোতের টান এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল, নদী যেন আমাদের আর এগোতে দেবে না। কিন্তু আমাদের সাথে ছিল অসাধারণ একদল যোদ্ধা, বাংলা চ্যানেল জয় করা হোমায়েদ ইসহাক মুন ভাই, হেলাল ভাই, শাকিল ভাই, মিরাজ ভাই, তাঁদের সহযোগিতা, সাহস আর অদম্য মনোবল আমাকে তীরে দাঁড়ানোর মুহূর্ত দিয়েছে।
শাহনাজ ও সোনিয়াও সাহসের সাথে আমাদের পাশে ছিল। কিন্তু রাতের অন্ধকারে ভয়ংকর ঢেউ আর তীব্র স্রোতের কারণে সোনিয়াকে কিছুটা আগেই নৌকায় উঠে যেতে হয়। তবু সে সাহস হারায়নি বরং আমাদের মনোবল জুগিয়ে যাচ্ছিল। আর শাহনাজ? সে একদম শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে, আমাদের দলের এক অনবদ্য অংশ হয়ে। যমুনা নদী সাঁতরানোর কঠিন চ্যালেঞ্জকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের সক্ষমতা প্রতিবারের মতো প্রমাণ করেছে।
রাত বাড়ছিল, আমরা একের পর এক ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে এগোচ্ছিলাম। দেহ ক্লান্ত, হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল, কিন্তু মন বলছিল, ‘এখনই থামা যাবে না!’ কৃতজ্ঞতা জানাই টনি ও একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণদের, যারা নৌকা থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছিল। যদিও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোও যথেষ্ট নয়।
শেষমেশ যখন আমরা তীরে পৌঁছালাম, ঘড়ির কাঁটা তখন ৭টা ৫৫ মিনিটে! ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট সময় লেগেছে পুরো নদী পার হতে। এই জয়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমরা শুধু একটা নদী পেরোইনি, পেরিয়েছি ভয়, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, সবকিছু! আর সবচেয়ে বড় কথা, আমরা প্রমাণ করেছি, যদি ইচ্ছাশক্তি আর সতীর্থদের সাহচর্য থাকে, তবে অসম্ভব বলে কিছু নেই।
এই সাঁতার শুধু ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ ছিল না বরং ছিল এক বৃহত্তর লক্ষ্য, সি টু সামিট অভিযান। যেখানে আমাদের স্বপ্ন হলো প্লাস্টিক দূষণ কমানো ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করা। এই অভিযান বৃথা যাবে না, আমাদের লড়াই চলবে। আপনাদের দোয়া আর সহযোগিতা থাকলে আমরা একদিন শুধু যমুনা নয়; পুরো পৃথিবীকে একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও টেকসই পরিবেশ উপহার দিতে পারবো। পাশে থাকুন!
এই যাত্রাপথের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শীর্ষস্থানীয় ফুড ব্র্যান্ড ‘প্রাণ’। স্ন্যাকস পার্টনার নুডলস ব্র্যান্ড ‘মিস্টার নুডলস’। রেডিও পার্টনার জাগো এফএম, নিউজ পার্টনার জাগোনিউজ২৪.কম। গিয়ার পার্টনার মাকালু-ই-ট্রেডার্স নেপাল। ওরাল হেলথ পার্টনার সিস্টেমা টুথব্রাশ।
এসইউ/এএসএম