কেন এত জনপ্রিয় রয়্যাল এনফিল্ড বাইক?
বহুল প্রতীক্ষার পর অবশেষে বিশ্বমানের রাজকীয় মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড রয়্যাল এনফিল্ড দেশের বাজারে কার্যক্রম শুরু করেছে। এতদিন দেশের রাস্তায় উচ্চতর সিসির বাইক চালানোর অনুমতি না থাকলেও আগামীকাল থেকে সেই আফসোস থেকে মুক্তি পাবেন দেশের বাইকপ্রেমীরা।
এ উপলক্ষে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সোমবার রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় প্রথম ফ্ল্যাগশিপ শোরুম উদ্বোধন করে তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডটি। দাম শুরু হচ্ছে চার লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার মধ্যে।
কোম্পানিটি তাদের ক্রেতাদের প্রিমিয়াম এক্সপেরিয়েন্স নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে প্রায় ৭৯০০ বর্গফুটের ফ্লাগশিপ শোরুম এবং ৩৯০০ বর্গফুটের অতিরিক্ত একটি সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে বিক্রয়, সেবা এবং বিক্রয় পরবর্তী সেবাসহ সব প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের অনুমতি দেয়। এরপর বাজাজ, হোন্ডা, ইয়ামাহা এবং রয়েল এনফিল্ড বাংলাদেশে হায়ার সিসির বাইক আনতে তোড়জোর শুরু করে।
কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হায়ার সিসির বাইক এ দেশেই সংযোজন করতে হবে। এমনকি মোটরসাইকেলের বেশ কিছু যন্ত্রাংশ এদেশেই তৈরি করতে হবে। সেই নিয়ম মেনেই রয়্যাল এনফিল্ড ইফাদ অটোসকে দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশে এই বাইক উৎপাদন, ইঞ্জিন সংযোজন এবং বাজারজাতকরণের।
রয়্যাল এনফিল্ড কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে নতুন উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করেছে যা নেপাল, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, কলম্বিয়া এবং আর্জেন্টিনার পর স্থাপন করা বিশ্বের সপ্তম উৎপাদন ইউনিট।
কেন এত জনপ্রিয়?
মূলত বাইকটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, গুণগত মান এবং স্থায়ীত্বের কারণে রয়েল এনফিল্ড বাইকের খ্যাতি রয়েছে। বেশি সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং স্টাইলিশ লুকের কারণে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বাইকটি। শক্ত কাঠামো এবং যান্ত্রিক বিশ্বস্ততার জন্য বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল এই মোটরবাইকগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায় ব্র্যান্ডটির প্রতি মানুষের আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। বিশেষ করে দেশের মোটরসাইকেল প্রেমীরা অনেকদিন ধরে এই বাইকটির দেশের বাজারে কবে পাওয়া যাবে তা নিয়ে উদগ্রীব ছিলেন। ফলে প্রথম দিনই ক্রেতা সাধারণের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বগুড়া থেকে আগত ফাইজুল্লাহ বলেন, আমি অনেকদিন ধরেই রয়্যাল এনফিল্ডের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। ব্যবসার কাজে প্রতিবেশি দেশে গিয়ে অনেকবার বাইকটি চালিয়েছি। কিন্তু নিজের দেশে কখনো চালানোর সুযোগ হয়নি। এখন আমি সেই সুযোগ পেয়েছি।
বাইকপ্রেমী নাভিদ ইশতিয়াক তরু জাগো নিউজকে বলেন, দামের কথা বিবেচনা করলে মোটামুটি সহনীয় বলা যায়। তবে আমার কাছে মনে হয় দাম আরও একটু কম হলে ভালো হতো। তাছাড়া বাইকটির সিসি বেশি হওয়ায় এটির মাইলেজ কম হবে। ফলে যানজটপূর্ণ ঢাকার রাস্তায় বাইকটি কতটুকু মাইলেজ দেবে সেটা একটা বিষয়।
তাছাড়া, আমাদের দেশে বিদ্যমান বাইক ব্র্যান্ডগুলো এই দামে আরও উন্নতি প্রযুক্তির বাইক দিচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের দেশে মোটা চাকার বাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি কিন্তু রয়েল এনফিল্ড মডেল গুলোর টায়ার বেশি মোটা নয়। এর পাশাপাশি এই বাইকগুলো যথেষ্ট ভারী। ফলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন।
আজ থেকে দুই যুগ আগে যারা বাইকিং করত তাদের মাঝে বাইকটি বেশি জনপ্রিয় বলে আমি মনে করি। এমনকি আজকের অনুষ্ঠানে কিন্তু বেশির ভাগ অতিথিই একটু মধ্য বয়স্ক ছিল। তাই তরুণ প্রজন্মকে এই বাইকের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে আরও উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে বলে আমি মনে করি।
দাম কত?
ইফাদ মটরসের হেড অব বিজনেস অপারেশন অব রয়েল এনফিল্ড এন্ড অ্যাপোলো টায়ারস মুইদুর রহমান তানভীর জাগো নিউজকে বলেন, চারটি মডেলের বাইকের মধ্যে হান্টার ৩৫০ মডেলের দাম শুরু হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে; ক্লাসিক ৩৫০ মডেলের দাম শুরু হবে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা থেকে; বুলেট ৩৫০ মডেলের দাম শুরু হবে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে এবং মেটিওর ৩৫০ মডেলের দাম শুরু হবে চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে।
চারটি মডেলে থাকবে উন্নত ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম এবং পরিমার্জিত সিঙ্গেল-সিলিন্ডার ‘জে’ (J) সিরিজের ইঞ্জিন। এছাড়া রঙ ও ব্রেকিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে আলাদা ভেরিয়েন্ট অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হবে।
মোটরসাইকেলগুলো সবার সামনে আনা হলেও আজ থেকেই বিক্রি শুরু হবে না। রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল কিনতে হলে প্রি-বুকিং বাধ্যতামূলক। ক্রেতারা এটি ওয়েবসাইট ও শোরুম থেকে ক্রয় করতে পারবেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা থেকে অনলাইন এবং শোরুমে ২৫,০০০ টাকা ডাউন পেমেন্টে প্রি-অর্ডার করা যাবে।
কোন মডেল কেমন?
৩৫০ সিসির শ্রেণিতে রয়্যাল এনফিল্ডের প্রতিটি বাইকের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বুলেট, ক্লাসিক এবং হান্টার মডেলগুলো উন্নত ইএফআই ইঞ্জিন দিয়ে চলবে।
ক্লাসিক ৩৫০ বাইকটি শুধুমাত্র রয়্যাল এনফিল্ডের একটি আইকনিক মডেলই নয় বরং কোম্পানিটির সবচেয়ে বিক্রি হওয়া বাইকও বটে। এখনও প্রতি মাসে রয়্যাল এনফিল্ডের বিক্রি হওয়া বাইকগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ক্লাসিক ৩৫০। এই মডেলে একটি একক সিলিন্ডার এবং এয়ারকুল্ড ৩৪৯ সিসি ইঞ্জিন রয়েছে। এটি ৬ হাজার ১০০ আরপিএমে ২০.২ বিএইচপির হর্স পাওয়ার এবং ৪ হাজার আরপিএমে ২৭ এনএমের টর্ক উৎপন্ন করে।
হান্টার ৩৫০ মডেলের বাইকের সামনে থাকছে গোলাকার হেডলাইট, হ্যান্ডলবারের দুই পাশে দুটি রিয়ার ভিউ মিরর, টার্ন ইন্ডিকেটর এবং কনসোল। সঙ্গে থাকছে রোটারি সুইচ, টিয়ার-ড্রপ শেইপের ফুয়েল ট্যাংক।
অন্যদিকে রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০ অনেকটা প্রাচীন ধাঁচের মোটরবাইক। বাইকটির বর্তমান সংস্করণে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্রেকিং ব্যবস্থা খারাপ রাস্তাতেও স্থিরভাবে বাইক চালাতে ও থামাতে সাহায্য করে। বাইকটি মূলত দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয়।
অপরদিকে রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০ হলো আধুনিক ঘরানার অভিজাত বাইক। এটির ক্লাসিক স্টাইলের কনসোল প্যানেল এবং শক্তিশালী গোলাকার হেডলাইট বেশ আকর্ষণীয়। ডিলাররাও বলছেন নতুন প্রজন্মের রয়্যাল এনফিল্ড মডেলগুলো ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি আরও উন্নত পারফরম্যান্স নিশ্চিত করবে।
এসআরএস/এমআরএম/এমএস