প্রযুক্তি ও গাড়ি খাতে রতন টাটার যত অবদান
লবণ থেকে সফটওয়্যার, কী নেই টাটা গ্রুপে? দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন রতন টাটা। ১৫৫ বছরের পুরোনো টাটা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামশেদজি টাটা। তাকে ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে ইস্পাত থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, উড়োজাহাজ থেকে লবণের মতো খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে।
রতন টাটা, টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পপতি। তার নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ অটোমোবাইল ও প্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। রতন টাটা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সেবা সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন।
রতন টাটার নেতৃত্বে টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে প্রধান হলো-
টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আইটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। এটি ভারতীয় বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি যা তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা এবং পরামর্শে বিশেষজ্ঞ। মুম্বাইতে সদর দফতর, এটি টাটা গ্রুপের একটি অংশ এবং ৪৬টি দেশে ১৫০টি স্থানে কাজ করে। এটি বাজার মূলধনের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি। ২০২৪ সালের হিসাবে, টিসিএস ফরচুন ইন্ডিয়া ৫০০-এর তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড। এটি মূলত টাটা কম্পিউটার সিস্টেম নামে পরিচিত, টাটা সন্স লিমিটেড দ্বারা ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
টাটা এলেক্সি
ডিজিটাল সলিউশন এবং প্রোডাক্ট ডিজাইনিংয়ে বিশেষজ্ঞ। এর কাজ হচ্ছে গ্রাহকদের ডিজাইন চিন্তাভাবনা এবং আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস), ক্লাউড, মোবিলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলোকে পুনরায় কল্পনা করতে সহায়তা করে। টাটা এলেক্সি বিশ্বের ১৫টি দেশে ৩৫টিরও বেশি স্থানে রয়েছে।
- আরও পড়ুন
- টাটা মোটরসের নতুন ৩ গাড়ি আসছে বাজারে
টাটা কমিউনিকেশনস
যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি সেবায় বিশেষজ্ঞ। এটি একটি ভারতীয় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি। টাটা গ্রুপ দ্বারা অধিগ্রহণের আগে এটি একটি সরকারী মালিকানাধীন টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারী এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগ, যোগাযোগ মন্ত্রনালয় এবং ভারত সরকারের মালিকানাধীন ছিল। প্রথম মনমোহন সিং মন্ত্রক সরকারের অধীনে এটি ২০০৮ সালে টাটা গ্রুপের কাছে বিক্রি হয়েছিল এটি।
টাটা ডিজিটাল
ই-কমার্স এবং ডিজিটাল সেবা প্রদান করে। টাটা ডিজিটাল অগ্রগামী, বিশ্বাস এবং নীতির একই মূল্যবোধের উপর নির্মিত হয়েছে যা টাটা গ্রুপকে ভারতের বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং এর সবচেয়ে মূল্যবান ব্র্যান্ডে পরিণত করেছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবনকে সহজ করতে এবং সমৃদ্ধ ভোক্তাদের অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য এই বুদ্ধিমত্তা এবং গভীর প্রযুক্তির দক্ষতাকে একত্রিত করা। এছাড়াও টাটা গোষ্ঠীর অধীনে বিভিন্ন সাবসিডিয়ারি এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা আইটি ও প্রযুক্তি খাতে কাজ করে।
অটোমোবাইল খাতে ব্যবসা
রতন টাটার অধীনে টাটা মোটর্স ১৯৯৮ সালে ভারতের প্রথম সস্তা গাড়ি, টাটা ন্যানো, বাজারে নিয়ে আসে। এটি মূলত নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবহণের বিকল্প হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছিল। যদিও ন্যানো ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়নি, তবে এটি টাটা মোটর্সের উদ্ভাবনী চেতনার প্রতীক হয়ে আছে। ভারতীয় মুদ্রায় যার দাম ছিল মাত্র ১ লাখ রুপি।
এছাড়া টাটা মোটর্সের অন্যান্য মডেল যেমন টাটা ইন্ডিকা, টাটা হেক্সা এবং টাটা অ্যাডভেঞ্চার ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ২০০৮ সালে, টাটা মোটর্স জাগুয়ার ও ল্যান্ড রোভার কিনে বিশ্বের বিলাসবহুল অটোমোবাইল বাজারে প্রবেশ করে, যা টাটা গ্রুপের আন্তর্জাতিক উপস্থিতি বাড়াতে সাহায্য করেছে।
রতন টাটার ভিশন ছিল টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করা, যা তাকে বৈদ্যুতিক গাড়ির উন্নয়ন ও উত্পাদনে উৎসাহিত করেছে। টাটা মোটর্স বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে নজর দিচ্ছে এবং টাটা টিয়াগো ইভি ও টাটা নেক্সন ইভি এর মতো মডেল তৈরি করছে।
রতন টাটার অধীনে টাটা গ্রুপ প্রযুক্তি ও অটোমোবাইল খাতে উদ্ভাবন এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছে। তার নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর জোর দিচ্ছে, যা বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও সহজতর করবে।
এছাড়া টাটা গ্রুপ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উপর গুরুত্বারোপ করছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই মডেল তৈরি করবে। এই উদ্যোগগুলো রতন টাটার ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির একটি অংশ, যেখানে তিনি সমাজের কল্যাণে অবদান রাখার চেষ্টা করছেন।
গাড়ি ক্ষেত্রে টাটা গোষ্ঠীর সংস্থাগুলি হল টাটা মোটরস, জ্যাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, টাটা অটোকম্প সিস্টেম। এদিকে কনজিউমার প্রোডাক্ট ক্ষেত্রে টাটার সংস্থাগুলো হলো-টাটা কেমিক্যাব, টাটা কনজিউমার প্রোডাক্ট, টাইটান কোম্পনি, ভোল্টাস, ইনফিনিটি রিটেল, ট্রেন্ট। আর ইনফ্রাস্ট্রাকচর ক্ষেত্রে টাটার সংস্থাগুলো হল - টাটা পাওয়ার, টাটা প্রোজেক্ট, টাটা রিয়েলটি, টাটা হাউজিং, টাটা কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার।
কেএসকে/জিকেএস