পায়রার বিকল্প স্মার্টফোন
আগেকার দিনের বাংলা সিনেমাগুলো দেখেছেন? যেখানে রাজা-বাদশারা বার্তা পৌঁছাতে কবুতরের ব্যবহার করতো। কিংবা প্রেমিকা পায়রার পায়ে প্রেমিকের জন্য লেখা চিঠি বেঁধে উড়িয়ে দিত। শুধু সিনেমায় নয় প্রাচীনকালে বার্তা বা চিঠি পাঠাতে একই পন্থা অবলম্বন করা হতো।
বিশ্বযুদ্ধের সময় পায়রাই সৈনিকদের বার্তা এক ব্যারাক থেকে অন্য ব্যারাকে পৌঁছে দিত। কালের বিবর্তনে পায়রার যুগ উঠে গেছে। বার্তা পাঠানো কিংবা কথা বলার জন্য ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ফোন।
আর ইন্টারনেটের যুগে ই-মেইল, ফেসবুকের মতো অনেক আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয়। এখন বার্তা লিখতে বা টাইপ কর এক ক্লিকেই পৌঁছে যাচ্ছে গন্তব্যে। তাই পায়রা দিয়ে বার্তা পাঠানোর ব্যাপারটা এখন রূপকথার গল্পের মতো মনে হয়।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোনের ব্যাক ক্যামেরা বেশিরভাগ সময় বাঁ-দিকে কেন থাকে?
অথচ প্রাচীনকালে কবুতরের বিকল্প ভাবাই দায় ছিল। কারণ তখনো শুরু হয়নি মোবাইলের যুগ। কবুতর বাঁ পায়রা যেই পথে একবার যায় সেই পথ আর কখনো ভোলে না। বৈজ্ঞানিকভাবেও এটি প্রমাণিত। এই বিশেষ গুণের কারণে সে সময়ে কবুতর ছিল আস্থার প্রতীক।
মিশরীয়রা প্রথম কবুতর দিয়ে চিঠি পাঠানো শুরু করে। ধীরে ধীরে অন্যরাও এই প্রথা শিখে ফেলে। রোমান সেনারা দুই হাজার বছর আগে কবুতর দিয়ে চিঠি আদান-প্রদান করতো। জুলিয়াস সিজারের সাম্রাজ্যকালে পায়রা বার্তাবাহক হিসেবে ব্যবহার হতো। এছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেও ফ্রান্স, জার্মানি এবং রাশিয়া প্রচুর পরিমাণে পায়রা সংরক্ষণ করে রেখেছিল।
কবুতরের স্নায়ু বিশেষ ধরনের যা অনেকটা স্মার্টফোনের জিপিএসের মতো। এই বিশেষ স্নায়ুতন্ত্র থাকায় কবুতর কখনো তার পথ ভুল করে না। সূর্যের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে পায়রা ঠিকই নিজের ফেরার রাস্তা খুঁজে নেয়। এমনকি নতুন পথ খুঁজে বের করতেও কবুতরের স্নায়ুতন্ত্র যথেষ্ট দক্ষ।
আরও পড়ুন: মোবাইল ফোন আসক্তি কমাবেন যেভাবে
অনেক গবেষক বলেছেন, কবুতরের শরীরে ৫৩ ধরনের বিশেষ কোষের একটি অংশ আছে, যা কবুতরকে চিনতে সাহায্য করে। তাই মানুষের মতো কবুতরও সহজে দিকনির্দেশ এবং জিনিসগুলোকে চিনতে পারে। এছাড়াও কবুতরের চোখের রেটিনায় বিশেষ ধরনের প্রোটিন আছে, যা সহজে দিকনির্দেশ এবং জিনিসগুলোকে চিনতে সাহায্য করে।
তাই প্রাচীনকালে বার্তা পাঠাতে কবুতর ছাড়া অন্য কোনো পাখি ব্যবহার হতো না। যদিও গত কয়েক দশক ধরে কবুতরের মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর প্রচলন শেষ হয়ে গেছে। কারণ প্রত্যেকের হাতেই এখন স্মার্টফোন। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার বাঁচিয়ে দিচ্ছে আমাদের মূল্যবান সময়।
কেএসকে/জিকেএস