সাইবার নিরাপত্তায় করণীয়
আপনি কি বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তির সাধারণ ধারণাগুলো সম্পর্কে স্পষ্টভাবে অবগত আছেন? প্রযুক্তির হাতেই বন্দি গোটা পৃথিবী। যে সময়কে বশে এনে প্রযুক্তি রাজ করছে সারা বিশ্ব, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রযুক্তির খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা না থাকা অবাক করার বিষয়।
চলুন জেনে নিই প্রাত্যহিক জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিবিষয়ক কিছু ধারণা সম্পর্কে। আজকের পর্বে সহজ সংক্ষিপ্ত আলোচনা হবে ম্যালওয়ার কী? কীভাবে তা আপনার জন্য হয়ে ওঠে ঝুঁকির কারণ এবং ম্যালওয়ার ঝুঁকি এড়াতে আপনার করণীয়ইবা কি?
অবশ্য প্রযুক্তি নিয়ে যাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ আছে তারা সবাই কমবেশি জানেন ম্যালওয়ার কী। খুব সহজ বাংলায় ম্যালওয়ার বলতে বোঝানো হয় আপনার মোবাইল, কম্পিউটার বা যেকোনো ডিভাইজের জন্য ক্ষতিকর সফটওয়্যারকে।
ইংরেজিতে যাকে বলে ম্যলিসিয়াস সফটওয়্যার। এসব ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যারকেই ১৯৯০ সালে ইজ্রায়েল রাডাই নামের এক ব্যক্তি ম্যালওয়ার বলে সম্বোধন করেন। তারপর থেকে গোটা বিশ্বে ক্ষতিকারক সফটওয়্যারগুলোকে ম্যালওয়ার নামে ডাকার চল শুরু হয়। এর আগে অবশ্য ক্ষতিকারক এসব সফটওয়্যারগুলো কম্পিউটারের ভাইরাস বলেই পরিচিত ছিলো লোকমুখে।
এবার জানবো ম্যালওয়্যারের কার্যক্রম ও কি জন্য এটি ক্ষতিকর সে বিষয়ে। ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর এই সফটওয়্যার প্রোগ্রামগুলো আপনার ডিভাইজে আপনারই বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে। আপনি জানতেই পারবেন না যে, চুপিসারে কখন আপনার ফোনে, বা পার্সোনাল ডিভাইজে এক বা একাধিক ক্ষতিকর সফটওয়্যার চলে এসেছে।
এমনকি এরা আপনার ডিভাইজে প্রবেশ করে নিজেদের কার্যক্রম বহাল তবিয়তে চালিয়ে যেতেও সক্ষম। অর্থাৎ আপনার অগোচরে এসব ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়ার আপনার ওপর গোপনে নজরদারি করতে পারে, আপনার যেকোনো ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে, অপ্রয়োজনীয় ও অবাঞ্চিত বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে, এমনকি আপনার ডিভাইসটির কার্যক্ষমতাও এই ম্যালওয়্যারগুলো কমিয়ে দিতে পারে।
এবার চলুন ছোট্ট করে জেনে নিই কীভাবে কোনো ডিভাইজে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করে। তবে এক্ষেত্রে একটি দুটি নয়, বরং নানা ধরনের উপায় অবলম্বন করে ডিভাইজে প্রবেশ করে ম্যালওয়ার। অবাক করা বিষয় হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ম্যালওয়ার আপনার দ্বারাই অর্থাৎ ব্যবহারকারীর মাধ্যমেই প্রবেশ করে ডিভাইজে। কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন কেমন করে? আপনি যখন কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড করেন তার মাধ্যমে কিন্তু আপনি নিজের অগোচরেই ডিভাইজে ম্যালওয়ারকে প্রবেশ করাতে পারেন।
বেশিইরভাগ সময়ই খুবই প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো পেইড হিসেবে থেকে। অর্থাৎ সেই সফটওয়্যারগুলো আমাদের কিনে নিতে হয়। কিন্তু অনেকেই সেই সমস্ত দরকারি সফটওয়্যারগুলো ফ্রিতে নেওয়ার জন্য ইন্টারনেটের নানা আন-অফিশিয়াল সোর্স থেকে ডাউনলোড করে। এসব আন-অথোরাইজড জায়গা থেকে ক্রাক সফটওয়্যারগুলো ডাউললোড করলেই ডিভাইজে চলে আসবে ম্যালওয়্যার।
এসব ক্ষেত্রে আপনি যে সফটওয়্যার ইনস্টল করছেন সেটির সঙ্গে পরজীবী হয়ে ম্যালওয়ার প্রবেশ করে আপনার ডিভাইজে। আপাতদৃষ্টে দেখতে সব কিছু সাধারণ ও স্বাভাবিক মনে হলেও আন-অথোরাইজড সোর্স থেকে ডাউললোড করা সফটওয়্যারগুলো আদতে ক্ষতিকর এক্সিকিউটেবল ফাইল।
আবার কখনো কখনো কোনো আন-অরাইজড সোর্স থেকে কোনো ফাইল বা মেইল এলে আপনি যদি সেগুলো ওপেন করেন তাহলে সাথে সাথে আপনার ডিভাইজে ম্যালওয়ার প্রবেশ করতে পারে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অহরহ নানা রকম মেইল বা লিংক আসে। সেই লিংকগুলোর অথেনটিসিটি যাচাই না করে অভ্যাসবশত ক্লিক করলেই ব্যাস! ম্যালওয়্যার নিজে থেকে আপনার পার্সোনাল ডিভাইজে ইনস্টলড হয়ে যাবে।
অন্যদিকে ম্যালওয়্যার প্রবেশের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হলো নির্দিষ্ট সময় পরপর সফটওয়্যার ও সিস্টেম আপডেট না করা। এটিও কিন্তু আপনার অবহেলার জন্যই হয়ে থাকে। আসলে প্রতিটি সফটওয়্যার বা সিস্টেমেই সামান্য কিছু হলেও ত্রুটি বা বাগ থাকে। সেই ত্রুটি বা বাগগুলো ধরেই আপনার ডিভাইজটি হ্যাক করতে হ্যাকাররা সদা তৎপর।
মনে রাখতে হবে, নির্দিষ্ট সময় পরপর ডেভেলপাররা সিস্টেমের ত্রুটি বা বাগকে সমাধান করতে সিকিউরিটি আপডেট করে থাকেন। তাই ডেভেলপাররা যখন নিজেদের সিস্টেম আপডেট করে তখন আপনি যদি নিজের সফটওয়্যারটি আপডেট না করেন, তবে আপনার সফটওয়্যারে থাকা বাগকে কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা আপনার ডিভাইজে ম্যালওয়ার প্রবেশ করাতে পারবে অনায়াসেই।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় যে বিষয়টা আমরা স্পষ্ট হলাম, ডিভাইজে ম্যালওয়ার প্রবেশের ধরণ বহু থাকলেও কারণ মূলত দু’টি। এক. অসচেতনতা আর দুই. উদাসীনতা। অতএব কিসে ক্লিক করছেন, কোথায় প্রবেশ করছেন, কি ইন্সটল করছেন এবং তা কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে সচেতন হওয়া যেমন জরুরি তেমনই যখন যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখার চেষ্টা এবং নিয়মিত আপডেট থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
চলবে…
এমআরএম/জিকেএস