বাংলাদেশে ইন্টারনেট কেন এত ব্যয়বহুল, জানেন না সচিব
ইন্টারনেটের গতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে। অথচ বাংলাদেশে ইন্টারনেটের খরচ সবচেয়ে বেশি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার কেন ব্যয়বহুল- তা জানেন না ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন রচিত ‘ডিজিটাল রূপান্তর ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, বইয়ে বলা হয়েছে ইন্টারনেটের গতি এখনও শ্লথ, এখনও ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে এত ব্যয়বহুল ডাটা কেন?- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান সচিব। অবশ্য এর উত্তরে এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, একসময় এক এমবিপিএস কিনতে হতো এক হাজার ৮০০ টাকায়, এখন ১৮০ টাকায় কেনেন, কোনটা সাশ্রয়ী?
অবশ্য এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা দেন বিডিজবসের সিইও ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, স্পেকট্রাম খরচ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। এত ব্যয়বহুল স্পেকট্রাম পৃথিবীর কোথাও নেই। এ বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের নজর দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএম’র গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন রচিত ‘ডিজিটাল রূপান্তর ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ শিরোনামের বইটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকাশনা সংস্থা পেলগ্রেভ মেকমিলান সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে বাংলাদেশ মূল্যায়ন সমিতি (বিইএস) বইটির প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান। আলোচক হিসেবে ছিলেন বেসিসের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হাবিবুল্লাহ এন করিম, এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, বেসিসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিডিজবসের সিইও এ কে এম ফাহিম মাশরুর প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ মূল্যায়ন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আবুল কালাম আজাদ।
এ সময় খলিলুর রহমান বলেন, এখন থেকে চিরদিনের জন্য ডাটা কেনা যাবে। প্যাকেজের কোনো সমস্যা নাই। আর আমরা ফোর-জি প্রাধান্য দিচ্ছি, সেটা ডেভেলপ করছি। তবে ফাইভ-জি চালু হলেও সবখানে আমরা তা চালু করবো না। শুধু ঢাকা ও টুঙ্গিপাড়ায় তা পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছে।
সাইবার বুলিং সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো অপরাধ নেই যা আমরা ডিটেক্ট (শনাক্ত) করতে পারি নাই। এক্ষেত্রে আমরা আরও সক্রিয় হবো। তবে, আমাদের সীমানার বাইরের অপরাধ আমরা শনাক্ত করতে পারি না।
বইটিতে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের ওপর প্রথম আন্তর্জাতিক একটি প্রকাশনা, যেখানে বাংলাদেশে বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঘটে যাওয়া ডিজিটাল রূপান্তর ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বইটিতে গবেষণা নির্ভর ১৪টি অধ্যায়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন, ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র, ডিজিটালাইজেশনের বর্তমান অবস্থা, ডিজটালাইজেশন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রতিষ্ঠান গঠন, আইটি ইন্ডাস্ট্রি উন্নয়ন, গ্রামাঞ্চলে ডিজিটালাইজেশনের অবস্থা, মানবসম্পদ ও স্কিল গ্যাপ, বিভিন্ন সেক্টরে ডিজিটালাইজেশনের রূপান্তরের প্রভাব, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ডিজিটালাইজেশনের প্রভাব এবং টেকসই উন্নয়নে ডিজিটালাইজেশনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বইয়ের লেখক ড. মনজুর হোসাইন বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে উন্নয়নের স্বার্থে ডিজিটালাইজেশন নীতিকে প্রাধান্য দেওয়া সঠিক ও সময়োচিত। তবে অনেক সূচকে আমরা প্রতিবেশীদের থেকে পিছিয়ে। ডিজিটাল সেবার অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ এখনও বঞ্চিত রয়েছে মূলত আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে। ডিজিটাল ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে অনেকেরই সক্ষমতা নেই।
তিনি বলেন, ডিজিটাল অসাম্যতা ব্যাপক আকারে বিদ্যমান, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। ইন্টারনেটের গতি শ্লথ, খরচ গ্রামীণ জনগণের নাগালের বাইরে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের ডাটা প্যাকেজগুলো জনবান্ধব না।
বইয়ে ডিজিটাল ফাইন্যান্স এবং ই-কমার্সের প্রতি অধিক জোর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ডিজিটাল ফাইন্যান্সের মাধ্যমে ব্যাংকবহির্ভূত বিশাল জনগোষ্ঠীকে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাক্সেস দেওয়া সম্ভব হবে এবং ক্যাশলেস সোসাইটিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং জনগণের লেনদেন খরচ কমাবে।
ড. মনজুর হোসাইন বলেন, ই-গভর্নেন্সে যথেষ্ঠ অগ্রগতি হলেও পুরোপুরি ব্যবহার এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তাই যেসব ই-অবকাঠামো তৈরি হয়েছে তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয় বইটিতে। তাহলেই সরকারি কাজে গতি ও স্বচ্ছতা আনা সম্ভব।
এমওএস/কেএসআর/জেআইএম