ই-মেইলের আত্মকাহিনি
রাজীব হোসেন আনান
আমার আবিষ্কারকরা ঠিক কী ভেবে আমায় জন্ম দিয়েছিলেন সঠিক জানি না। তবে জন্মের পর মনে হয় আমাকে আবেগহীনতার ছবক দেওয়া হয়েছিল। তা না হলে এত বয়স হলো আমার, কিন্ত আমার কাছে আবেগের তেমন কোনো স্থান বরাদ্দ নেই।
নিজেকে গড়ে নেওয়ার যদি কোনো সুযোগ থাকতো, তাহলে আমি নিশ্চয়ই আবেগহীনতার বাহক হতে চাইতাম না।
প্রতিনিয়ত আমি কোটি কোটি বার্তা নিয়ে ছুটছি পৃথিবীময়, কিন্ত কী আশ্চর্য! এগুলোর কোনোটির মধ্যেই আবেগের স্পন্দন নেই। পুরো জীবনটাকেই বড্ড নিষ্প্রাণ মনে হচ্ছে।
আমার গায়ে এখন আপাদমস্তক লেপ্টে আছে চূড়ান্ত কর্পোরেট তকমা। অথচ আমি কি হতে পারতাম না কোনো এক উড়ন্ত পাখি! যাকে দেখলে, যাকে পড়লে মায়া হতো। হয়নি তো!
আজ আমার খুব মনে পড়ছে আমার পূর্বসুরী চিঠির কথা। আমি তার অযোগ্য উত্তরসুরী। একটি চিঠির জন্য বাবা-মা, ভাই-বোন, প্রেমিক-প্রেমিকা কী অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করত।
চিঠির হাতের লেখার মধ্যে প্রেরককে অনুভব করার চেষ্টা করত। তদ্রুপ প্রেরকও একটি ফিরতি চিঠির প্রহর গুনতেন। বাড়িতে পোস্টম্যান ঢুকলে তারা মেহমান আসার থেকেও বেশি খুশী হতেন।
আপনি সেসব দিন দেখেছেন কি না জানি না। আমার একদম ছোট্ট বয়সের স্মৃতি এবং শোনা গল্প এটি। আমি এই সময়ে চিঠির আধুনিক রূপ হলেও আমার মধ্যে সে অনূভুতি বিলীন হয়ে গেছে। সে দায় আমাকে পোড়াচ্ছে জন্ম থেকে।
তবে এতসব হতাশার মাঝেও কিছু আশার বাণী আমার পালে এখনো হাওয়া দিচ্ছে। ইদানিং কেউ কেউ আমার মাধ্যমে আবেগের আদান-প্রদান করছেন। যা অত্যন্ত স্থির, শান্ত এবং সুচিন্তিত। যা আমাকে আন্দোলিত করছে, জোগাচ্ছে বেঁচে থাকার রসদ।
আমি এমন একটি সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষায়, যেদিন কর্পোরেট বার্তার পাশাপাশি মানুষের আবেগ-অনুভূতির বার্তা নিয়ে হাওয়ায় ভেসে ছুটব নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
এসইউ/জিকেএস