তরুণদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখেন নাসিম

মোশারফ হোসাইন
মোশারফ হোসাইন মোশারফ হোসাইন , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২২

বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হওয়ায় চেয়েছিলেন ছেলেও যেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তবে প্রযুক্তির প্রতি তীব্র ঝোঁক থাকায় বাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে পারেননি তিনি। তবে সে জায়গাটাও রঙিন করেছেন তিনি। হয়েছেন সফলদের একজন। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের কথা জানাচ্ছিলেন দেশের পরিচিত মুখ ফ্রিল্যান্সার নাসিম।

ফ্রিল্যান্সিং জগতে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অল্প বয়সে। ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করছেন। এর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং শেখাচ্ছেন অন্যদেরও।

নাসিম বলেন, তথ্য প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকেই ব্লগ ওয়েবসাইট ও ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখতাম। সেখান থেকেই কয়েকটি প্রোগ্রামিং ভাষা, ওয়েবসাইট ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট শিখেছিলেন। স্কুলে পড়ার সময় ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং জগতে কাজ শুরু করেন।

২০১৬ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা সদস্য বাবাকে হারানোর পর পরিবারকে চালানোর জন্য একমাত্র ভরসা ছিলেন নাসিম। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে তার বাবা মারা যাওয়ার পর পারিবারিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। তখন ভালো কোনো চাকরির বয়সও ছিল না নাসিমের। অভাবের সংসারে ফ্রিল্যান্সিংয়ে মনোযোগ দিয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। দিন-রাত কষ্ট করে সফল হয়েছেন।

২০১৬ সালে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে সেরা ১০ এর তালিকায় নাসিমের নাম আসে। নাসিম এখন ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রিল্যান্সার নাসিম হিসেবে সুপরিচিত। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে চালাচ্ছেন সফটওয়্যার ডেভেলপিং কোম্পানি এফএন সফটওয়্যারস অ্যান্ড ইনস্টিটিউট। ২০১৩ সালে নিজস্ব সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি শুরু করেছিলেন। তবে এটি অনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১৮ সালে।

তরুণদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখেন নাসিম

ফ্রিল্যান্সার নাসিম বলেন, যারা সমালোচনা করে তাদের কাছে আমার সফলতাই বড় জবাব। এমনও মানুষ আছেন ফেসবুকে ৫ বছর ধরে আমার সমালোচনা করছেন। এ ৫ বছরে আমার অনেক পরিবর্তন হলেও তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। না তার শব্দের পরিবর্তন হয়েছে, না তার নিজের। যারা সমালোচনা করেন, তাদের শক্তিশালী কোনো স্বপ্ন নেই। যাদের স্বপ্ন আছে, তারা কখনো সমালোচনা করেন না।

দেশের তরুণ সামাজকে এগিয়ে নিতে নাসিম নানা কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশের প্রযুক্তিখাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ব্যর্থতা আমাদের তরুণ সমাজের। আমরা সেটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। শুধু দেশ ডিজিটাল হলে হবে না, আমাদের প্রত্যেককে ডিজিটাল হতে হবে।

নাসিম স্কুল, কলেজ ও ছোটবেলার বন্ধুদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একদিন বলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো দেশীয় কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিয়ে দেশের অনেক অর্থ বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চিন্তা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের কথা নাসিমকে ভাবায়, তিনি যেহেতু একজন ফ্রিল্যান্সার। তার কাজ হলো বিদেশের অর্থ দেশে আনা। সেই ভাবনা থেকে তিনি একটি দেশীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরির কাজ শুরু করেন। যার নাম দেন ‘ই-সমাজ’।

পরীক্ষামূলকভাবে কিছুদিন আগে চালু করেছিলেন প্ল্যাটফর্মটি। তখন এটিকে মানুষ খুবই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। ১ দিনে প্রায় ২০ হাজার ব্যবহারকারী যুক্ত হয়েছিল। কারণ এটি বিদেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর চেয়ে আরও বেশি সেবামূলক। ‘ই-সমাজ’ অল্পদিনের মধ্যে অনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে, এখানে তরুণ সমাজের কর্মসংস্থান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন নাসিম।

কেএসকে/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।