২০২১ সালে প্রযুক্তিখাতের যত আলোচিত ঘটনা

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২১ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো আরও একটি বছর। ২০২১ সাল শুরু হয়েছিল মহামারি আবহেই। তবে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে কেটেছে বছরটি। অন্যান্য জায়গার মতো প্রযুক্তি দুনিয়ার জন্যও ২০২১ ছিল একটি উজ্জ্বল বছর। এ বছর যেমন যুক্ত হয়েছে একের পর এক প্রযুক্তিপণ্য। তেমনি চিপ সংকটে আইফোন তৈরিও কমেছে। সেই সঙ্গে ফেসবুক বিভ্রাট, ইলন মাস্কের নতুন উদ্ভাবন মিলিয়ে নতুন এক মাত্রা যুক্ত হয়েছিল বছরটিতে।

চলুন ২০২২ সালকে স্বাগত জানানোর আগেই জেনে নেওয়া যাক ২০২১ সালে প্রযুক্তিখাতের আলোচিত ঘটনাসমূহ—

ফেসবুকের মেটা ভার্সন
চলতি বছরে প্রযুক্তি বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ফেসবুকের নাম পরিবর্তন। কী নাম হবে, কবে আসবে পরিবর্তন তা নিয়ে জল্পনা কল্পনারও শেষ ছিল না মানুষের। তারপর সব কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ফেসবুকের নির্মাতা মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুকের নাম ঘোষণা করেন মেটা।

তারপরও থামেনি মেটা নিয়ে মানুষের আগ্রহ। কেন এই নাম, এর অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে, কী সুবিধাই বা বয়ে আনছে মেটা? মেটাভার্স হচ্ছে এমন একটি ডিজিটাল দুনিয়া, যেখানে ব্যবহারকারী অংশগ্রহণ করতে পারবেন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং ডিভাইস থেকে। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি অথবা অগমেন্টেড রিয়ালিটি গিয়ারের বদৌলতে ওই ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলার সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারী।

প্রযুক্তিশিল্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মেটাভার্সকে বিবেচনা করছেন মোবাইল ইন্টারনেটের উত্তরসূরি হিসেবে। ৯০-এর দশকের কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস ‘স্নো ক্র্যাশ’-এ ‘মেটাভার্স’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন লেখক নিল স্টিফেনসন। খবর প্রযুক্তি সাইট রয়টার্সের।

তবে মেটাভার্স নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের শীর্ষ মাধ্যম ফেসবুক। অক্টোবরে নাম পাল্টে ‘মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড’ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর সাবেক কর্মীদের ফাঁস করা নথিপত্রের জেরে বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেরই মাথাব্যথার কারণ এখন ‘মেটা’।

অ্যাপলের পলিস ক্লথ
বলা হচ্ছে ২০২১ সাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের জন্য ব্যস্ততম বছর ছিল। কারণ এ বছর প্রতিষ্ঠানটি চারটি আইফোন, নতুন এয়ারপড, এয়ার ট্যাগ, বহুমুখী ম্যাক এবং আইপ্যাডসহ বাজারে ছেড়েছে অ্যাপল ওয়াচ। তবে এর মধ্যে অদ্ভুত আবিষ্কার ছিল পলিস ক্লথ। যার দাম ভারতীয় রুপিতে ১ হাজার ৯৯৯ টাকা।

বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোস
বিটকয়েন নতুন কোনো বিষয় নয়। বিশ্বজুড়ে বিটকয়েনে লেনদেন বাড়ছে। তবে আলোচনার বিষয় হলো ভারত এটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ক্রিপ্টো সম্পদের বাজারমূল্য আগের বছরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। আর এ তথ্য উঠে এসেছে আইএমএফের প্রতিবেদন থেকেই।

আইএমএফের সহকারী বিভাগ প্রধান ইভান পাপ্পাজিওর্জিও বলেছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার নজর কাড়ার মতো বেড়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীলতা দেখাচ্ছে, কিন্তু বেশকিছু কৌতূহল উদ্দীপক স্ট্রেস টেস্টও হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রাখাতের যে বিষয়গুলো নিয়ে আইএমএফ সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত, তার মধ্যে প্রথমেই আছে এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যারা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাঠে নেমেছেন তাদের ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ এবং ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে আইএমএফ। এমন পরিস্থিতিতে এ খাতে যথেষ্ট নজরদারির অভাব রয়েছে এবং ভেতরের খুঁটিনাটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। এ প্রযুক্তি অর্থপাচার, সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থীগোষ্ঠীগুলোর জন্য লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে আশঙ্কা আইএমএফের। এ খাতে বিনিয়োগ আরও নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা।

চিপ সংকট
এ বছর সবচেয়ে আলোচনার বিষয় ছিল বিশ্বজুড়ে চিপ সংকট দেখা দেওয়া। ফলে প্রযুক্তি জগতে বিশাল একটা ধাক্কা লাগে। এতে গাড়ি থেকে শুরু করে স্মার্টফোন, হেডফোনের উৎপাদনও সীমিত হয়ে গেছে। চিপ সংকটের কারণে বিশ্বের গাড়ি উৎপাদন শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমেছে আইফোন তৈরিও। দশ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার আইফোন এবং আইপ্যাডের উৎপাদন অ্যাপল বন্ধ করেছে। মূলত চিপ সংকটের কারণে অ্যাপলের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।

ইলন মাস্ক
বলা যেতে পারে ২০২১ সাল ছিল ইলন মাস্কের। কারণ এ বছর তার সম্পদ অনেক বেড়েছে। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের কাতারে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন। মার্কিন সাময়িকী টাইমসের নজরে ২০২১ সালের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব বা ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হয়েছেন টেসলার সিইও ইলন মাস্ক। করোনাকালীন ২০২১ সাল অনেকের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনলেও ইলন মাস্কের জন্য ভালোই কেটেছে।

এ বছর তার কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাতা হয়ে উঠেছে। চলতি বছর টেসলার বাজারমূল্য এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারের বেশি বেড়েছে, যার ফলে এর মূল্য দাঁড়িয়েছে ফোর্ড মোটর ও জেনারেল মোটরসের সম্মিলিত মূল্যের চেয়েও বেশি। একই বছর মাস্কের রকেট কোম্পানি পুরোটাই বেসরকারি ক্রু নিয়ে মহাকাশ ঘুরে এসেছে। ব্রেইন-চিপ স্টার্টআপ নিউরালিংক এবং অবকাঠামো নির্মাতা বোরিং কোম্পানির নেতৃত্বও তার হাতে।

গুগলের প্রথম নিজস্ব প্রসেসর
অবশেষে গুগল তাদের নিজস্ব ডিজাইনের প্রসেসর ব্যবহার করে তৈরি করেছে দুটি স্মার্টফোন। পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো ফোন দুটিতে তাদের টেনসর প্রসেসরের দেখা মিলেছে। স্যামসাং এক্সিনস সিরিজের একটি প্রসেসর ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি টেনসরের মূল ক্ষমতা গেমিং বা মাল্টিটাস্কিং নয়, বরং ক্যামেরার ছবি আরও দ্রুত প্রসেস করতে পারা। পিক্সেল ফোনে এবারই প্রথম ৫০ মেগাপিক্সেল সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ ছবির তথ্য মুহূর্তেই লাইভ প্রসেস করার জন্য টেনসর প্রসেসরটি বিশেষভাবে ডিজাইন করেছে গুগল। সামনের পিক্সেলগুলোতেও গুগলের প্রসেসর দেখা যাবে।

ফোল্ডেবল ফোনে বাজার সয়লাব
আইফোন এবং স্যামসাংয়ের পাশাপাশি ভাঁজ করা ফোনের জগতে প্রবেশ করেছে অপো। শুরুতে ভাঁজযোগ্য ডিসপ্লের ফোন ছিল বলা যায় শুধু প্রযুক্তি অনুরাগীদের জন্য তৈরি বিশেষায়িত ডিভাইস। এ বছর সেটি বদলে গেছে, উল্টো বছরে সর্বাধিক বিক্রিত ফোনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ‘গ্যালাক্সি জি ফোল্ড৩’।

এ বছর নির্মাতা টিসিএলও একটি পরীক্ষামূলক ভাঁজযোগ্য ডিসপ্লের ফোন দেখিয়েছে, যদিও সেটি বাজারে আসেনি। শাওমিরও একটি ফোল্ডিং মডেল মি মিক্স আলফা বাজারে এসেছে এ বছরই। চীনা নির্মাতা অপোও বছরের শেষে তাদের ফোল্ডিং ফোন ফাইন্ড এন উন্মোচন করেছে। বেশিরভাগ প্রযুক্তি অনুরাগীই বলেছেন, অপোর ডিভাইসটির মূল্য ও ডিজাইন তাদের ভালো লেগেছে। আগামী দিনে ভাঁজযোগ্য ডিসপ্লের ফোন বাজারে নিজের স্থান শক্ত করবে সন্দেহ নেই।

গুগল পিক্সেল
এ বছর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল গুগলের নতুন দুটি ফোন নিয়ে। পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো ও ৬এ ফোনগুলো এসেছে দারুণ সব ফিচার নিয়ে। এছাড়াও ২০২২ সালেই গুগলের স্মার্টওয়াচ বাজারে আসছে বলে ঘোষণা দিয়েছে সার্চ জায়ান্টটি।

ওয়েব৩
বর্তমান ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থার পরবর্তী পর্যায় আখ্যা দিতে ব্যবহৃত পরিভাষা হচ্ছে ‘ওয়েব৩’; এর মূল ভাবনাটি ব্লকচেইন প্রযুক্তিনির্ভর যা একটি বিকেন্দ্রীক ইন্টারনেট ব্যবস্থার কথা বলে। এ কাঠামোতে প্ল্যাটফর্ম এবং অ্যাপ্লিকেশনের মালিকানাসত্ত্ব থাকবে ব্যবহারকারীর হাতে। বর্তমানের প্রচলিত ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে বলা হয় ওয়েব২; ফেসবুক এবং গুগলের মতো ‘বিগ টেক’ হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ওয়েব২ যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এনএফটি
নন-ফাঞ্জিবল টোকেন বা এনএফটি’র জনপ্রিয়তা এ বছরে ‘বিস্ফোরিত’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। সহজভাবে বললে, এনএফটি হচ্ছে এমন এক ধরনের ডিজিটাল সম্পদ; যার অস্তিত্ব সীমাবদ্ধ থাকে কেবল নির্দিষ্ট ব্লকচেইনে। বিপুল সংখ্যক কম্পিউটারের অংশগ্রহণে গঠিত হয় ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক, যে কোনো লেনদেন একসঙ্গে লিপিবদ্ধ করে রাখে নেটওয়ার্কের সবগুলো কম্পিউটার।

সম্প্রতি ছয় কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে বিপ্লি’র তৈরি এ শিল্পকর্মটি। বছরের শুরুতে সাত কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে মার্কিন শিল্পী ‘বিপল’-এর শিল্পকর্মের এনএফটি। ওই ঘটনার পরই যেন মূলধারায় গুরুত্ব পেতে শুরু করে এ প্রযুক্তি।

ডিসেন্ট্রালাইজেশন
‘ডিসেন্ট্রালাইজেশন’ বা বিকেন্দ্রীকরণ শব্দটি পুরোনো হলেও এ বছর এসে যেন নতুন রূপ পেয়েছে। ক্ষমতা ও পরিচালনার ভার কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকারের অধীনে না থেকে সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে হস্তান্তর হবে, এমনটাই বলে বিকেন্দ্রীকরণ ভাবনা।

পুরো প্রযুক্তিশিল্প আমূল পাল্টে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ বিকেন্দ্রীকরণ চিন্তার। পরিবর্তন আসবে কনটেন্টে মডারেশন থেকে শুরু করে প্রযুক্তিপণ্য ও সেবার বাজার কাঠামোতেও। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মাইক্রোব্লগিং সেবা টুইটারের কথা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর জন্য বিকেন্দ্রীক সাধারণ মান ‘ব্লুস্কাই’ নির্মাণের চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ডিএও
‘ডিসেন্ট্রালাইজড অটোনোমাস অর্গানাইজশেন’ বা ডিএও বলতে বোঝায়, একটি ইন্টারনেট নির্ভর প্ল্যাটফর্ম যার মালিকানা থাকবে এর ব্যবহারকারীর হাতে আর ব্যবস্থাটির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করবে ব্লকচেইন প্রযুক্তি। ‘স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট’ নামে পরিচিত ছোট ছোট কোড নির্ধারণ করবে দলটির নিয়ম-নীতি, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

পরাগ আগারওয়াল
টুইটারের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরাগ আগারওয়ালকে নিয়েও কম আলোচনা হয়নি প্রযুক্তি জগতে। ভারতীয় বাঙালি এ তরুণ বছরের শেষ সময়ে এসে বেশ আলোচনার জন্ম দেন। টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ৩৭ বছর বয়সী জ্যাক ডরসি অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন প্রধান নির্বাহী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরাগ আগারওয়াল। পরাগ আগারওয়াল ২০১১ সালে টুইটারে যোগ দেন এবং পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি হতে হতে প্রধান প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা পদে উন্নীত হন।

ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি
ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে নতুন ধারণার উদ্ভব ঘটে। বলা যেতে পারে এ জগত সম্পর্কে মানুষ এ বছরই প্রথম জানে। প্রযুক্তি শিল্পের জন্য ২০২১-কে ‘অদ্ভুত’ একটা বছর মনে হতেই পারে। নতুন অনেকগুলো শব্দ আর নাম জায়গা দখল করেছে সংবাদের শিরোনামে। ৯০-এর দশকে কল্পবিজ্ঞানের থেকে আসা একটি শব্দ আইনপ্রণেতা, বাজার পর্যবেক্ষক আর গবেষকদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; কোটি ডলারে বিক্রি হচ্ছে ডিজিটাল কনটেন্ট যার যৌক্তিক মূল্য প্রশ্নবিদ্ধ।

অল্টকয়েন
বিটকয়েন বাদে অন্য সব ক্রিপ্টোকারেন্সি চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয় শব্দটি। এর মধ্যে আছে বছরের আলোচিত ডিজিটাল মুদ্রা ইথেরিয়াম এবং ইলন মাস্কের বদৌলতে মূলধারায় হঠাৎ গুরুত্ব পাওয়া মুদ্রা ডোজকয়েন। ভবিষ্যৎ আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ইথেরিয়াম।

এফএসডি বেটা
চলতি বছরে ‘ফুল সেলফ-ড্রাইভিং’ বা এফএসডি সফটওয়্যারের উন্নত সংস্করণ বাজারজাত করেছিল টেসলা। টেসলার বিদ্যুৎচালিত গাড়িকে নিজ উদ্যোগে লেন পরিবর্তন আর বাঁক নেওয়ার সক্ষমতা দেয় সফটওয়্যারটি। কড়া সমালোচনা আর বিতর্কর জন্ম দিয়েছে সফটওয়্যারটির নাম। ব্যবহারকারী এবং নিয়ন্ত্রকদের একই নামের সঙ্গে কাজের মিল নেই সফটওয়্যারটির। টেসলার গাড়িগুলোকে সম্পূর্ণ স্বনিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা দেয় না সফটওয়্যারটি।

এফএবিএস বা ফ্যাবস
‘এফএবিএস’ বা ‘ফ্যাবস’ আদতে ‘সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাবরিকেশন প্ল্যান্ট’-এর সংক্ষিপ্তসার। চলতি বছরের বহুল আলোচিত চিপ ঘাটতির মুখে মূল ধারার আলোচনায় উপস্থিতি বেড়েছে শব্দটির। যানবাহন থেকে শুরু করে গ্যাজেটের চিপ ঘাটতির জন্য সার্বিকভাবে ‘ফ্যাবস’গুলোকেই দুষছেন অনেকে।

নেট জিরো
চলতি বছর গ্ল্যাসগোতে আয়োজিত কপ২৬ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের বদৌলতে জনিপ্রয়তা পেয়েছে ‘নেট জিরো’ পরিভাষাটি। বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণে বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখছে না এমন পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা দেশকে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘নেট জিরো’। জৈব জ্বালানীর ব্যবহার বন্ধ করে এবং গাছ লাগিয়ে বিদ্যমান গ্যাস শোষণ করে নেওয়ার চেষ্টার মাধ্যমে ‘নেট জিরো’ পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দেশের সরকার।

ফাইভজি যুগে পদার্পণ
ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রা ত্বরান্বিত করতে ও দেশের সব গ্রাহক যেন পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভজি) মোবাইল প্রযুক্তির অত্যাধুনিক সুবিধা উপভোগ করতে পারে, সেজন্য ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসাবে ফাইভজি সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রীয় টেলিকম অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ফাইভজি যুগে এ পদার্পণ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে’ ১২ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর রেডিসন হোটেলে ‘নিউ ইরা উইথ ৫জি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে এ সেবা চালু করা হয়। ফাইভ-জি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে তিনি এ প্রযুক্তি উদ্বোধন করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ফাইভ-জি কেবল উন্নত দেশগুলো চালু করছে। আমরাও সে সময়ে চালু করতে যাচ্ছি। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ্ এমপি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ও টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সাহাব উদ্দিন।

রাষ্ট্রয়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে দেশে চালু হলো ফাইভ-জি। ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু করতে টেলিটককে সহায়তা করছে হুয়াওয়ে ও নোকিয়া। সাইটগুলো যেসব এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে- বাংলাদেশ সচিবালয়, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল।

চালু হলো ই-সিম
বছরের শেষে দেশের প্রথম ই-সিম ব্র্যান্ড বন্ধুর হাত ধরে ইলেক্ট্রনিক সিমের জগতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে বন্ধু। ই-সিম হলো নতুন স্ট্যান্ডার্ড যা ক্যারিয়ার বদল করা বা আপনার বিদ্যমান ফোনে একটি সেকেন্ড সিম যোগ করা সহজ করে তুলবে। ই-সিমের আসল ড্রাইভটি ইন্টানেট অব থিংস থেকে এসেছে।

ব্রডব্যান্ড সেবায় ‘এক দেশ এক রেট’
ভৌগোলিক বৈষম্য দূর করে প্রান্তিক পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে চালু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ‘এক দেশ এক রেট’ ট্যারিফ। গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষা করতে দীর্ঘদিন ধরেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের এক দেশ এক রেট স্লোগান বাস্তবায়নে কাজ করে আসছিল বিটিআরসি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য জুতা
জনসম্মুখে স্বাধীনভাবে চলাচল করা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাদের জন্য তা আরও কঠিন। ফায়ার হাইড্রেন্ট, গর্ত, উঁচু-নিচু সিঁড়ি সব ধরনের রাস্তাতেই থাকে। তাই চলার সময় স্বাভাবিকভাবেই একজন অন্ধ ও কম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে অস্ট্রিয়ার স্টার্টআপ মেডিক্যাল ডিভাইস প্রস্তুতকারক টেক-ইনোভেশন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা নিয়ে এসেছে বিশেষ স্মার্ট জুতা।

‘ইনোমেক’ নামের এ স্মার্ট জুতা অন্ধ ও কম দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কার্যকর, যা তাদের চলাচল আরও সহজ করে তুলবে। ইনোমেকে রয়েছে বিশেষ কয়েকটি সেন্সর। এটি অন্ধ ও কম দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিকে সামনে থাকা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে অ্যাকোস্টিক ও ভিজ্যুয়াল সতর্কতা সংকেত দেবে। কম্পন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সতর্ক করা ছাড়াও এই স্মার্ট জুতায় রয়েছে একটি অন্তর্নিমিত ব্যাটারি, একটি প্রসেসিং ইউনিট এবং বেতার সংযোগ।

জুতাগুলোর সামনের অংশে আছে পানি ও ধুলা প্রতিরোধী আবরণ। এটি যে কোনো আবহাওয়া ও প্রতিকূল পরিবেশে সুরক্ষা দেবে। কার্যকারিতা, ব্যবহারযোগ্যতা এবং স্বাচ্ছন্দ্য—তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইনোমেক। এটি উন্নতমানের চামড়া দিয়ে তৈরি। ফলে জীর্ণ হলে বা ছিঁড়ে গেলে সহজেই ঠিক করা যায়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি এসব স্মার্ট জুতায় কোনো হিল নেই। এছাড়া জুতার মধ্যে থাকা মেটাল ট্র্যাকের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে সহজে সংযুক্ত করা যায়।

ট্র্যাকটি এমনভাবে ডিজাইন ও সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী ইলেকট্রনিক ডিভাইসটিকে সংযুক্ত এবং বিচ্ছিন্ন করতে পারেন। ইনোমেকের ব্যাটারির কার্যকারিতা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে এবং এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। একটি ইএসবি-সি ক্যাবল ব্যবহার করে এটি রিচার্জ করা যায়। এই জুতাটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের জন্য উপযোগী বলে জানিয়েছে টেক-ইনোভেশন।

২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত স্মার্টফোন
হাতের মুঠোয় পুরো দুনিয়াকে এনে দিয়েছে স্মার্টফোন। প্রযুক্তির প্রায় সব কিছুই এখন স্মার্টফোনে। অফিস থেকে বিনোদন সঙ্গে জীবনযাপনের প্রতিটি পদেই স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কী নেই স্মার্টফোনে। এটি বদলে দিচ্ছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই।

মহামারির পুরো সময়টা স্কুল-কলেজ, অফিস সবকিছুই চলেছে ঘরে বসেই। যার অন্যতম মাধ্যম ছিল স্মার্টফোন। স্মার্টফোনকে ঘিরে উন্মাদনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ উন্মাদনার জন্য উঠে আসছে একের পর এক নতুন নতুন স্মার্টফোন কোম্পানি। বছরজুড়ে একগুচ্ছ স্মার্টফোন বাজারে এনেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এ তালিকায় আইফোনের এ বছর লঞ্চ হওয়া ১৩ সিরিজের ফোনগুলোই শীর্ষে। এছাড়াও অন্যান্য কোম্পানির স্মার্টফোন রয়েছে এ তালিকায়।

এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ১.০৪ বিলিয়নেরও বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে। যা ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসের তুলনায় প্রায় ৮৮.৬ মিলিয়ন বেশি। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে অ্যাপলের আইফোন ১২। এরপরের অবস্থানে রয়েছে গ্যালাক্সি এ১২। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ২০১৯ এ লঞ্চ হওয়া আইফোন ১১।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইফোন এখন মানুষের কাছে একটি আভিজাত্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে স্মার্টফোনের মধ্যে আইফোন কেনার প্রতিই মানুষের এখন ঝোঁক বেশি। নতুন মডেলের তুলনায় পুরোনোটার দাম খানিকটা কম হওয়ায় আগের মডেলটি বেশি কিনেছেন ব্যবহারকারীরা। বিশ্বে আইফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে এ বছরের শেষ দিকে এসে চিপ সংকটের কারণে এর উৎপাদন অনেক কমে যায়। ফলে বেশ আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।

ইন্টেলের ফিরে আসা
গত কয়েক বছরে ইন্টেলের সাফল্য সামান্যই, শুরুতে তারা এএমডির কাছে বাজারের নেতৃত্ব হারায়, এরপর অ্যাপল তাদের ম্যাক থেকে ইন্টেল প্রসেসর বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু নতুন লিডারশিপ এবং রোডম্যাপে ইন্টেল আবারও তাদের অবস্থান ফিরে পেতে শুরু করেছে। তাদের ১২তম প্রজন্মের প্রসেসরগুলো বর্তমান এএমডি প্রসেসরের চেয়ে শক্তিশালী এবং তাদের দাবি, ১২তম প্রজন্মের ল্যাপটপগুলো অ্যাপল প্রসেসরকে পারফরম্যান্সে ছাড়িয়ে যাবে। নতুন প্রসেসরগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে পারফরম্যান্স এবং এফিশিয়েন্সি কোর, ঠিক যেমনটা এআরএম প্রসেসরে দেখা যায়। ইন্টেলের দাবি, এই সিস্টেম ব্যবহারের ফলে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ দুটিতেই অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় এবং তাপ উৎপাদন কমে আসবে।

নতুন উইন্ডোজের দেখা মিলল
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের সর্বশেষ সংস্করণ বাজারে এনেছে মাইক্রোসফট। ইউজার ইন্টারফেসে উইন্ডোজ ১০-এর সঙ্গে তেমন বড় পার্থক্য নেই, অ্যাপের দিক থেকেও উইন্ডোজ ১০-এর সঙ্গে এখনো উইন্ডোজ ১১-এর মিল রয়েছে অনেক। তবে আগামী দিনে উইন্ডোজ ১১ নতুন সব ফিচারসমৃদ্ধ হয়ে ১০-এর থেকে বহুগুণ এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। তবে উইন্ডোজ ১১ খুব সমাদৃত হয়নি, মূলত মাইক্রোসফট নতুন হার্ডওয়্যার ছাড়া সব পুরোনো পিসিকে উইন্ডোজ ১১ সমর্থন থেকে বাদ দিয়েছে। এর সঙ্গে বাদ পড়েছে ৩২বিট অপারেটিং সিস্টেম সমর্থন এবং সিকিউরবুট ছাড়া পিসি চালনা। মাইক্রোসফটের দাবি, তারা আগামীর কথা চিন্তা করে পুরোনো প্ল্যাটফর্ম সমর্থন বাদ দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতের সফটওয়্যার বর্তমানের হার্ডওয়্যারকে সমর্থন করার জন্য পিছিয়ে না থাকে।

অনিবন্ধিত ফোন বন্ধ
দেশে অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধে গত ১ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যবস্থা চালু করে বিটিআরসি। যদিও পরে মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে সরকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যে কোনো মোবাইল সেট নেটওয়ার্কে চালু হলে- তা বন্ধ না করতে বিটিআরসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল সেট বৈধভাবে আমদানি হোক কিংবা অন্য কোনোভাবে আসুক, তা গ্রাহক ব্যবহার শুরু করলে আর বন্ধ করা হবে না।

প্রথমবারের মতো ভ্যাট দেয় ফেসবুক, গুগল ও অ্যামাজন
মাসিক রিটার্ন জমা দিয়ে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো ভ্যাট দিয়েছে অ্যামাজন। গত আগস্টে সরকারি কোষাগারে প্রায় ৫৩ লাখ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট জমা দেয় বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ই-কমার্স জায়ান্ট। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিয়েছে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস বাংলাদেশ।

এর আগে গত মাসে প্রথমবারের মতো কোনো অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ভ্যাট রিটার্ন দিয়ে ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছিল। চলতি মাসেই বৈশ্বিক আরেক প্রতিষ্ঠান গুগল ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে। এভাবে অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসাবে একের পর এক রিটার্ন জমা দিয়ে ভ্যাট দেওয়া শুরু করল বৈশ্বিক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

বড় হচ্ছে মোবাইল গেমিং খাত
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের এ মোবাইল গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন অ্যাক্টিভ প্লেয়ার আছে, যারা নিয়মিত নানা ধরনের মোবাইল গেমস খেলছেন। গেমিংয়ের এ বিলিয়ন ডলার বাজার ধরতে দেশে শতাধিক গেমিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান; আসছে বিদেশি বিনিয়োগ।

২০১৯ সালে ভারতের প্রথম সারির মোবাইল গেমস নির্মাতা কোম্পানি মুনফ্রগ ল্যাবস্ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এবং এখানে তাদের অঙ্গসংগঠন উলকা গেমস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে সুইডেনভিত্তিক মোবাইল গেমস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্টিলফ্রন্ট গ্রুপ। এর মাধ্যমে উলকা গেমস লিমিটেড বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল গেমিং কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো।

ক্ষতিকর অ্যাপ ও গেম বন্ধ
দেশে টিকটক ও লাইকির মতো ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তার আড়ালে চলছিল মাদক ব্যবসা ও মানবপাচারের মতো ভয়াবহ সব অপয়াধ। এর প্রমাণ মেলার পরই হাইকোর্টের মাধ্যমে রুল জারি করা হয় এসব প্ল্যাটফর্ম বন্ধের। এসবের আড়ালে বাড়ছিল কিশোর অপরাধও। তবে শুধু এ প্ল্যাটফর্মগুলোই নয় সঙ্গে কিছু গেমিং অ্যাপও বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরমধ্যে রয়েছে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম। তরুণ সমাজ এসব গেম এবং অ্যাপে আসক্ত হয়ে পড়ছিল দিনদিন। যা তাদের মেধা বিকাশেও বাধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

শীর্ষে টিকটক
গুগলকে পেছনে ফেলে এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন সাইট টিকটক। চীনের তৈরি ভাইরাল এ ভিডিও অ্যাপটি মার্কিন সার্চ ইঞ্জিন গুগলের চেয়েও বেশি ‘হিট’ বলে জানিয়েছে আইটি নিরাপত্তা কোম্পানি ক্লাউডফ্লেয়ার। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাংকিং অনুযায়ী টিকটক চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও জুন মাসে গুগলকে টপকে এক নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে। এরপর জুলাইয়ে গুগল শীর্ষে ফিরলেও আগস্ট থেকে আবারও শীর্ষস্থান দখল করে নেয় টিকটক। এর আগের বছরের হিসাব অনুযায়ী গুগল ছিল শীর্ষে। এরপর শীর্ষ দশে ছিল টিকটক, অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট ও নেটফ্লিক্সসহ কয়েকটি সাইট। নিজস্ব ওয়েব ট্রাফিক পর্যবেক্ষণ টুল ক্লাউডফ্লেয়ার রেডার ব্যবহার করে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।

টিকটকের শীর্ষে ওঠার কারণ- বছরজুড়ে চলা করোনা মহামারি। করোনায় লকডাউনের কারণে মানুষ ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে এবং বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টিকটক ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আরেক কোম্পানি সেন্সর টাওয়ার জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে তিনশ কোটি বারেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে টিকটক।

শীর্ষে যে অ্যাপগুলো
বছরজুড়ে চোখ ধাঁধানো সব প্রযুক্তিতে মেতে ছিলেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা। সঙ্গে ছিল নজরকাড়া কিছু অ্যাপ্লিকেশনও। নতুন কিছু অ্যাপ যেমন দৃষ্টি কেড়েছে সবার, তেমনি পুরোনোগুলোর জনপ্রিয়তাও বেড়েছে সমান তালে।

প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটেছে সবখানেই। মহামারিতে ঘরবন্দি সময়টাতে বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনাগোনা। গবেষণা বলছে, এ পরিসংখ্যান ৭২ শতাংশ। শিক্ষা থেকে শুরু করে সব ধরনের সেবায় অ্যাপের ব্যবহার। এগুলোর ব্যবহার অনলাইন কার্যক্রমের ধারাই বদলে দিয়েছে।

জীবন বদলে প্রযুক্তির ব্যবহারকে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে অ্যাপস। চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২১ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ১০ অ্যাপের তালিকা। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট কুবকোর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয় এ তালিকা। এ তালিকায় রয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, টুইটার, উইচ্যাট, লিঙ্কডইন, স্ন্যাপচ্যাট, জুম।

ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার
নানা আয়োজনে পালিত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন, উপকৃত সব জনগণ’—এ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার দিবসটি পালন করা হয়। ২০১৯ সালে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার’ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার।

এবার ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২১ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠান শ্রেণিতে পেয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও গ্রামীণফোন। জাতীয় পর্যায়ে সরকারি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২১’ অর্জন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ‘সবার ঢাকা অ্যাপস’ এবং ‘ডিজিটাল হাট’ উদ্যোগের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া বেশকিছু খাতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

বেসিস নির্বাচন
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নির্বাহী পরিষদের (২০২২-২০২৩) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে গুলশান শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়। এরপর গণনা এবং ফলাফল প্রকাশ করা হয়। নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এস এম কামাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। এবার নির্বাচনে ৮৭৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭১২ জন। নির্বাচনে জেনারেল ক্যাটাগরিতে ৫৫০, অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরিতে ১৩০, আফিলিয়েট ক্যাটাগরিতে ৩০ জন ভোটার ভোট দেন।

১১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি, জেনারেল সদস্য ক্যাটাগরির ৮টি পদের জন্য ২৪ জন, অ্যাসোসিয়েট সদস্য ক্যাটাগরির একটি পদের জন্য দুইজন, অ্যাফিলিয়েট সদস্য ক্যাটাগরির একটি পদের জন্য দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্যাটাগরির একটি পদের জন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এ পদের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

নির্বাচনে জেনারেল সদস্য ক্যাটাগরিতে ৩৫২ ভোট পেয়ে স্পেকট্রাম সফটওয়্যার অ্যান্ড কনসালটিং (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিকুর রহমান, ৩২২ ভোট পেয়ে ড্রিম৭১ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশাদ কবির, ২৬৯ ভোট পেয়ে টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লাহ নেয়ামুল করিম, ২৬৮ ভোট পেয়ে টিম ক্রিয়েটিভের সিইও রাসেল টি আহমেদ, ২৬৩ ভোট পেয়ে এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু দাউদ খান, ২৬৩ ভোট পেয়ে টেকনোগ্রাম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ কে এম আহমেদুল ইসলাম বাবু, ২৬০ ভোট পেয়ে গিগা টেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিরা জুবেরি হিমিকা এবং ২৫১ ভোট পেয়ে অ্যাডভান্সড ইআরপি (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল নির্বাচিত হন।

নির্বাচনে অ্যাসোসিয়েট সদস্য ক্যাটাগরিতে ৬৭ ভোট পেয়ে ড্রিমার্জ ল্যাব লিমিটেডের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর হোসেন খান এবং অ্যাফিলিয়েট সদস্য ক্যাটাগরিতে ১৬ ভোট পেয়ে পাঠাও লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফাহিম আহমেদ নির্বাচিত হন। ইন্টারন্যাশনাল সদস্য ক্যাটাগরির একটি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

কেএসকে/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।