২১ হাজার টাকায় শুরু করে এখন লাখোপতি মাহমুদুল

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২১

মাসুমা মুসরাত শৈলী

ভাগ্যের কাছে হেরেছেন বারবার। তবে থেমে যান নি। বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পড়াশোনায় বেশ মেধাবী ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যখন কোথাও সুযোগ হলো না তখন থেকেই শুরু। একের পর এক ব্যর্থতা। পরের বছর ভালো প্রিপারেশন নিয়ে আবারও পরীক্ষা দেন। একটুর জন্য এবারও মিস। সেসময় প্রায় ৪ মাস ডিপ্রেশনে ভুগেছেন। এভাবেই জাগো নিউজকে বলছিলেন ওয়াচ ট্যাগের স্বত্বাধিকারী মো.মাহমুদুল হাসান।

ছোটবেলা থেকেই ঘড়ির খুব শখ ছিল মাহমুদুলের। তার কাছে ছিলো ইউনিক সব ঘড়ির কালেকশন। সে যে ঘড়িই পড়তেন ,বন্ধুরা হাত থেকে খুলে নিয়ে যেতেন। পুরনো হলেও সেগুলোর জন্য বন্ধুরা প্রায়ই তাকে মূল্য দিত। যা তিনি যে দামে কিনেছেন তার থেকে খুব বেশি কম নয়।

তখনই তার ঘড়ি নিয়ে কিছু করার কথা ভাবনায় আসে। একদিন তার বন্ধু সুদয় সাহা তাকে ফেসবুকে একটা পেজ খোলার পরামর্শ দেয়। যেখানে তারা ঘড়ি বিক্রি করবে। বন্ধু কথায় ভরসা পেলেন। সাহস করে দুজনে পার্টনারশীপে নেমে পড়েন ব্যবসায়। মাত্র ২১ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা ব্যবসায় এখন তার মূলধন ৩ লাখ।

২০১৮ সালে ফেসবুকে ওয়াচ ট্যাগ নামে পেজ খোলেন তারা। তাদের দুজনের সঙ্গে আরও একজন যুক্ত হয়েছিলেন। তবে কিছুদিন পর তিনি চলে যান। এদিকে ঘড়ির ব্যাপারে ধারণা থাকলেও কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন। কেমন দামে বিক্রি করবেন। কীভাবে তাদের পণ্য পৌঁছাবে মানুষের কাছে তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন মাহমুদুল। কেননা কোনো কিছু করার আগে সে সম্পর্কে জানতে হয় ,পড়াশোনা করতে হয়।

এতো অল্প টাকায় ইম্পোর্ট করাও যাবেনা। আবার এর থেকে বেশি খরচ করেও শুরু করা সম্ভবনা। তখন ভাবলেন আসেপাশের পরিচিত কারা আছেন যারা ইম্পোর্ট এক্সপোর্টের ব্যবসা করেন। তখন তাদের মাধ্যমেই দেশের বাইরে থেকে ঘড়ি আনাতে থাকেন। তবে অল্প আনার কারণে তাদের খরচ বেশি পড়ত। তারপরও এটাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

jagonews24

মাহমুদুল আরও জানান, প্রথমদিকে ঢাকার ভেতরের অনেক জায়গায় তারা নিজেরা গিয়ে ডেলিভারি দিয়েছেন। এরপর যখন ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক অর্ডার আসতে শুরু করল, তখন তারা বিভিন্ন কুরিয়ার কোম্পানি দিয়ে সেগুলো পাঠাতেন। ছোট শিশুদের যেভাবে যত্নে বড় করেন বাবা-মা, তেমনই ওয়াচ ট্যাগকেও তারা একটু একটু করে এই অবস্থানে এনেছেন।

এখন মাহমুদুলের অধীনে কাজ করছেন আরও ৩ জন। একজন কন্টেন্ড ক্রিয়েটর, গ্রাফিক্স ডিজাইনার ও একজন ইন্সট্যান্ড প্রডাক্ট ডেলিভারির জন্য আছেন। তার কাজ হলো কোনো কাস্টমারের ইমার্জেন্সি থাকলে পণ্য পৌঁছে দেওয়া। সেজন্য চার্জ একটু বেশি লাগে তবে তা বহন করে কোম্পানি।

পড়াশোনায় এক সময় অনীহা চলে আসে মাহমুদুলের। ২০১৫ সালের শেষ দিকে ঠিক করলেন ইউএস চলে যাবেন। তবে ভিসা না হওয়ার কারণে আর যাওয়া হলো না। তখন ২০১৬ সাল। শেষমেশ ইস্টওয়েস্ট ভার্সিটিতে ভর্তি হন মাহমুদুল। ৩ বছর বিরতির পর পড়াশোনাটাও ঠিকমতো করতে পারছিলেন না। ফেল করে বসেন এক বিষয়ে। তবে এর ঠিক পরের সেমিস্টারেই ভালো ফলাফল করায় স্কলারসিপ পান। যখন বুঝতে পেরেছেন আরেকটা সেমিস্টার ভালো করলে আবারও স্কলারশিপ পাবেন। তখনই ঠিক করলেন স্কলারশিপরে টাকা দিয়ে ব্যবসা করবে, কিন্ত কি ভাবেনি। সেই টাকায় কাজে লাগিয়েছিলেন ওয়াচ ট্যাগ গড়ার সময়।

ব্যবসা করার ভাবনা মাহমুদুলের আসে পরিবারের মানুষদের দেখে। মাহমুদুল হাসানের অনুপ্রেরনা তার পরিবার। বাবাও চাইতেন ছেলে ব্যবসা করবে। পরিবারকে সব সময় পাশে পেয়েছেন মাহমুদুল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই বিভিন্ন প্রোগ্রামে শিক্ষকরা মাহমুদুলকে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে বলতেন। অন্যরাও যেন তার মতো উদ্যোক্তা হতে পারে সে জন্য উৎসাহ দিতে বলতেন। মাহমুদুলও সবাইকে বেকার না থেকে আর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করার কথা বলতেন। তিনি সবাইকে তার হার না মানার গল্প শোনাতেন।

মাহমুদুলের পণ্য যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাদের পণ্যের ওয়ারেন্টি থাকে একবছর। তার আগে নষ্ট হলে সম্পূর্ণ দায়ভার নেন ওয়াচ ট্যাগ। ঢাকার বাইরে হলে পাঠানোর দায়িত্ব কাস্টমারের এবং ব্যাক করার দায়িত্ব নেন তারা। তখন তাদের একটু লস হয়। তবে বড় ধরনের লসের শিকার হননি কখনও।

মাহমুদুল বলেন, যদি মূলধন ঠিক থাকে তবে লসের চান্স কম। তবে করোনাতে তাদের ব্যবসা বন্ধ ছিলো অনেকদিন। প্রথম ২ বছর তিনি কোনো লাভের টাকা নিতেননা। এটাকেই রিইনভেস্ট করতেন ব্যবসায়।

বর্তমানে ৫ টি ব্র্যান্ড (চাইনা) নিয়ে কাজ করছেন তারা। ভবিষ্যতে ইউএস এবং ইন্ডিয়ার কালেকশনও আনবেন। ওয়াচ ট্যাগে বর্তমানে ১ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার ঘড়ি রয়েছে। ভবিষ্যতে ২০-৩০ হাজার টাকার পণ্য রাখবেন তারা। বিশেষ বিশেষ দিনে বিভিন্ন অফার রাখা হয় নিয়মিত ক্রেতাদের জন্য। কাস্টমার এরই মধ্যে ওয়াচ ট্যাগের উপর আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটও আছে এখন। ট্রেডলাইন্সেও নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই শোরুম দেওয়ার কথা চিন্তা করছেন তারা।

যে কেউ চাইলেই এই ব্যবসা করতে পারেন। তবে নতুন যারা এই ব্যবসা করতে চান, তাহলে অবশ্যই এইদিক সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হবে। এভাবেই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ দিচ্ছিলেন মাহমুদুল।

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।