সম্ভাবনাময় বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাজেট সহায়তার আহ্বান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:০৮ পিএম, ০৭ জুন ২০২১

আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাবনাময় বিপিও বা বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং শিল্পের উন্নয়নে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)।

সোমবার (৭ জুন) সংবাদমাধ্যমে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেনের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত বিপিও, যেখানে ৬০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশীয় বিপিও কাজের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিপিও শিল্প নিয়ে কাজ করে দেশ অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশীয় বিপিও শিল্পের বাজার প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালের মধ্যে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কেননা এই খাতে প্রযুক্তিনির্ভর কাজের চাহিদা বাড়ায় শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

করোনা মহামারি চলাকালে জরুরি সেবার আওতায় বিপিও শিল্পের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২৪ ঘণ্টা কলসেন্টার সেবা, জরুরি সেবা ও ব্যাক-অফিসের মতো সেবাসমূহ প্রদান করে বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের সুনাম, তেমনি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। এরপরেও প্রস্তাবিত বাজেটে এই শিল্পকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার ও গুরুত্ব প্রদানের অংশ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বাজেট এক হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। তাছাড়া ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক, পাবলিকেশনস, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিং ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এগুলো অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করে বাক্কো।

ডাটাবেজ, অপারেটিং সিস্টেম, ডেভেলপমেন্ট টুলস, প্রোডাকটিভিটি কমিউনিকেশন অ্যান্ড কোলাবোরেটিভ সফটওয়্যার ফর অটোমেটিক ডাটা প্রসেসিং মেশিন আমদানি পর্যায়ে এবং মডেম, ইথারনেট, ইন্টারফেস কার্ড, নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, অপারেটিং সিস্টেমস, ডেভেলপমেন্ট টুলসসহ আরও অনেক সরঞ্জামাদিতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে মুসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারঘোষিত বাজেট— ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হবে বলে আশা করা যায়। সন্দেহ নেই যে, সরকারের সব উদ্যোগ ও পরিকল্পনা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং একমাত্র বিপিও অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী এক অগ্রজ সৈনিক।

সামগ্রিক বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাক্কো প্রকাশিত বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিল যার আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা মনে করি আরও কিছু বিষয় এই বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। সেগুলো হলো-

>> আইসিটি সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় কর্মসংস্থান তৈরির খাত হলো বিপিও। এজন্য এ খাতের আওতা ও পরিধি বাড়াতে হলে এই শিল্পের প্রধান পরিচালক তাদের ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করতে হবে এবং এজন্য এই শিল্পে যেসব ইন্ডাস্ট্রি তাদের কাজ আউটসোর্সিং করবে তাদের বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে আকৃষ্ট করতে হবে। কারণ আরেকটি শিল্প তখনই আউটসোর্সিংয়ে আকৃষ্ট হবে যখন সে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। কিন্তু এই অপার সম্ভাবনাময় খাতের উন্নয়নে এই ধরনের কোনো উদ্যোগ প্রস্তাবিত বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি।

>> বিপিও খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর পাঁচ শতাংশ হারে উৎসে মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি দেয়া না হলে গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী সেবা বাবদ ব্যয় আরও বেড়ে যাবে এবং আরও অনেক গ্রাহক বিপিও সেবা নিতে অনুৎসাহিত করবে । বাক্কোর দেয়া তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর ৫% হারে উৎসে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব আমলে নেয়া হয়নি।

>> বিপিও শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা ও উন্নয়নে কনসালটেন্সি সার্ভিস, অডিট এবং অ্যাডভাইজরি ও সম্মানি খাতের ওপর বিদ্যমান উৎসে মূল্য সংযোজন কর শিথিলকরণ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা উক্ত বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে। আইটি শিল্পের বলিষ্ঠ অবস্থান তৈরিতে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান আইন শিথিল না করা হলে নির্দিষ্ট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কষ্টসাধ্য হবে। যেহেতু বর্তমানে আইটি সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকর্ম বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে সংকুলান করা হচ্ছে এবং এই খাতে সরকারি অনুদানও নেই, সেক্ষেত্রে গবেষণা সংক্রান্ত এই ব্যয় অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সংকুলান করা সম্ভব হবে না।

>> আইটি পরিষেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কম্পিউটার ও কম্পিউটারসামগ্রী ক্রয়ে মূল্য সংযোজন কর এবং উৎসে কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করার বিষয়টিও প্রস্তাবিত বাজেটে বিবেচনা করা হয়নি।

>> দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং জনশক্তির কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বিপিও শিল্পে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সুদৃষ্টি। সেলক্ষ্যে বিপিও শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সহজ শর্তে ঋণ এবং সেন্টার অফ এক্সেলেন্স গড়ে তোলার জন্য তিনশ কোটি টাকার তহবিল রাখার প্রস্তাব করা হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তা উপেক্ষিত হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এইচএস/এআরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।