মেধাবীদের নিয়ে ফেসবুকে দুই শিক্ষার্থীর সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম
কাস্টওয়ে অন দ্যা মুন (Castaway on the moon)-এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম। নাচ-গান হতে শুরু করে ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফিসহ সব ধরনের মেধাবীদের তীর্থস্থান এ প্ল্যাটফর্মটি। চাইলে এখানে যে কেউই তার সুপ্ত প্রতিভা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন। কাস্টওয়ে অন দ্যা মুন-এর (COTM) বিভিন্ন দিক জানাচ্ছেন, মমিনুল হক রাকিব-
আরিফা শবনম এবং শাহজালাল আলিফ কাস্টওয়ে অন দ্যা মুন প্ল্যাটফর্মটি প্রতিষ্ঠা করেন। আরিফা বর্তমানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের এর উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আর আলিফ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারির কারণে সবাই যখন ঘরবন্দি হয়ে ছিল তখন এই দুইজন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন।
যেখানে যে কেউ নির্দ্বিধায় তার প্রতিভা একঝাঁক দর্শকের সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন। তখন যেহেতু সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর ছিল তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই এই গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে গ্রুপটিতে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার সদস্য রয়েছে।
গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আলিফ মনে করেন বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগ্য এবং মেধাবীদের চেয়ে অযোগ্য ব্যক্তিরা বেশি সাড়া পাচ্ছেন এবং এর পেছনে দর্শকদের দায়ী করেছেন তিনি। আমরা মেধাবীদের অনুপ্রাণিত না করে অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়ে ট্রোল কিংবা মজা করে সেই ব্যক্তির কাজ কে সবার সামনে তুলে ধরি। পাশাপাশি মেধাবী ব্যক্তিদের কাজ পর্দার অন্তরালেই থেকে যায় বলে মনে করেন আলিফ।
বাংলাদেশে প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের প্ল্যাটফর্ম ছিল না বেশ কয়েকবছর আগেও। কেউ চাইলেই তার ক্রিয়েটিভ কাজ দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে পারতেন না। কিন্তু এখন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাস্টওয়ে অন দ্যা মুন-এর মতো আরো বেশ কয়েকটি গ্রুপ কাজ করছে মেধাবীদের একটি সুস্থ এবং সুন্দর প্ল্যাটফর্ম উপহার দিতে।
এই গ্রুপ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে আলিফ বলেন, গ্রুপের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি দর্শক এবং আর্টিস্ট উভয়ের জন্য একটি নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে আমাদের গ্রুপটি রাখতে। এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। এছাড়া গ্রুপ থেকে আমরা প্রতিবছর একটি মেগা ইভেন্ট আয়োজন করবো। যেখানে দেশ এবং দেশের বাইরের প্রতিযোগিরা অংশগ্রহণ করতে পারবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। ইতিপূর্বে আমরা একটি মেগা ইভেন্ট আয়োজন করেছি যেখানে প্রচুর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগী পেয়েছি। প্রতিবছর আমাদের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
ফেসবুকে গ্রুপ পরিচালনা করতে গিয়ে কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন জানতে চেয়েছিলাম গ্রুপের অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা আরিফা শবনম এর কাছে। তিনি বলেন, "গ্রুপ বড় হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী এবং ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছে। তারা মেন্টালি এক এক রকম। সুতরাং তাদের অভিযোগগুলোও ভিন্ন ধরনের যদিও আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করি। কারণ আমাদের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্টিস্টদের নিরাপত্তা। সেটা আমরা দেয়ার চেষ্টা করি। কারণ আমাদের কাছে কোয়ান্টিটি এর থেকেও কোয়ালিটি টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এত বড় একটা প্লাটফর্মের মেইনটেনেন্স একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য, যেটি আমাদের প্রতিনিয়ত ফেইস করতে হচ্ছে।
আরিফা শবনম আরও বলেন, "এই কাজটিকে সহজ করতে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাচ্ছেন আমাদের ডেডিকেটেড প্যানেল মেম্বারসরা। বর্তমান সময়ে এ ধরনের আরও অনেক প্লাটফর্মের আত্নপ্রকাশ হয়েছে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এটি খুব পজেটিভ একটি বিষয়। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি, কোনো দ্বিধা ছাড়া সময় দিয়েছি এই প্লাটফর্মটি গুছিয়ে সুন্দর করে তুলতে। তার বিনিময় মানুষ আমাদের ভালোবেসেছে, অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি বিগত এক বছর । আবার অনেক ঘৃণা ও পেয়েছি। তবে আমরা কৃতজ্ঞ সকলের প্রতি"।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে সবার আগে নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন আলিফ। কারো ছবি কিংবা গান অথবা নাচ এর ভিডিওতে বাজে মন্তব্য করাটা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না যদি না মানসিকতা পরিবর্তন হয়। সবাইকে সুস্থ এবং সুন্দর পরিবেশ বজায় রেখে ভালো এবং মেধাবীদের কাজকে অনুপ্রাণিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
এমএমএফ/এএসএম