ইউটিউবে ফিল্ম মেকিং নিয়ে কাজ করছেন জুবায়ের
বুয়েটে বন্ধুদের সঙ্গে শর্ট ফিল্ম বানানোর মধ্যদিয়েই ফিল্ম মেকিংয়ের হাতেখড়ি জুবায়ের তালুকদারের। বুয়েটে চান্স পাওয়ার খুশিতে বাবার কিনে দেওয়া ক্যামেরা আর মাঝারি ধরনের কম্পিউটার দিয়েই শুরু করেন ফিল্ম মেকিং। বর্তমানে ইউটিউবে তার ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার। জুবায়ের তালুকদারের ফিল্ম মেকিং এবং ইউটিউব জার্নির গল্প শোনাচ্ছেন মমিনুল হক রাকিব—
২০১৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে বুয়েটে ভর্তি হন জুবায়ের তালুকদার। তখন বাবার কিনে দেওয়া ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রথম বন্ধুদের সঙ্গে শর্ট ফিল্ম শুট করেন। এ কাজে বেশ মজা পেয়েছিলেন। তারপর ‘ডিস্কবারিং ঢাকা’ নামে একটি ডকুমেন্টরি শুট করেন। শুটিং এবং ঘোরাঘুরি একসঙ্গে হওয়ায় ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করেন। জুবায়ের এবং তার বন্ধুদের করা প্রথম শর্ট ফিল্মটি ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ নির্বাচিত হয়। ফেস্টিভ্যালে সমবয়সী অন্যান্য কন্টেন্ট নির্মাতাদের সঙ্গ এবং অভিজ্ঞতাই জুবায়েরকে ফিল্ম মেকিংয়ের প্রতি আসক্ত করে তোলে।
জুবায়ের তালুকদার নিজেকে ইউটিউবার নয় বরং একজন ফিল্ম মেকার হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার শুরুটা ফিল্ম মেকিং দিয়ে। ফিল্ম মেকিংয়ের খুঁটিনাটি নিয়ে পরবর্তীতে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড করা শুরু করি। তাই নিজেকে একজন ফিল্ম মেকার হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’
২০১৬ সালে তিনি নিজের নামে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। কিন্তু তিনি নিয়মিত ভিডিও আপলোড দিতেন না। ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারিতে সব কিছু থমকে গেলে তিনি ফিল্ম মেকিং সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড দেওয়া শুরু করেন। অনেক মানুষ তার টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখে ফিল্ম মেকিংয়ে আগ্রহী হন। মানুষের সাড়া এবং ভালোবাসাই তাকে ইউটিউবে নিয়মিত হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। বর্তমানে তার চ্যানেল ‘Jubaer Talukder’ এ ৯০টি ভিডিও আছে। সাবস্ক্রাইবার ১ লাখ ৬৫ হাজার।
ফিল্ম মেকিংয়ের জন্য আইডিয়া এবং স্কিলের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তরুণ এ ফিল্ম মেকার। তিনি মনে করেন, ফিল্ম মেকিং শুরুর জন্য ক্যামেরা কিংবা অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট জরুরি নয়। নিজের ব্যবহৃত স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়েও আইডিয়া এবং স্কিল থাকলে উন্নতমানের ফিল্ম মেকিং সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে ফিল্ম মেকিং বা ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন জানতে চাইলে জুবায়ের বলেন, ‘এতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বেশ সুযোগ আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন ভিডিও নির্ভর হয়ে গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রমোশনাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে ভিডিওকে প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে। তাই বলা যায়, দিন দিন ফিল্ম মেকিং বা ফটোগ্রাফি ক্যারিয়ার হিসেবে বেশ সুবিধাজনক এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
তবে একজন ফিল্ম মেকার বা ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে জোর দিয়েছেন এ ফিল্ম মেকার। কমিউনিকেশন স্কিল না থাকার কারণে ভালো কাজ পারা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়তে হবে। ফিল্ম মেকিংয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রচুর ধৈর্যশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
জুবায়েরের পছন্দের ফিল্ম মেকার পিটার জ্যাকসন। পিটার জ্যাকসন লর্ড অব দ্য রিংসের পরিচালক। বাংলাদেশের মধ্যে জহির রায়হান এবং অমিতাভ রেজা চৌধুরী। ফিল্ম মেকিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান তিনি। প্রোডাক্ট বেইজড কাজে বেশি আগ্রহী। এ ছাড়া ইউটিউরের মাধ্যমে ফিল্ম মেকিংকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ফিল্ম মেকিংয়ের টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড করে যাবেন তিনি।
এসইউ/জিকেএস