ইন্টেলিজেন্ট মাইনিং হতে পারে নিরাপদ পদক্ষেপ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৪ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২১

সম্প্রতি হুয়াওয়ে চীনের শানঝিতে যৌথভাবে ইন্টেলিজেন্ট মাইনিং ইনোভেশন ল্যাব উদ্বোধন করেছে। সেখানে ৫৩ জন হুয়াওয়ের কর্মী কর্মরত আছেন। কয়লা উত্তোলন খাতে ফাইভজি প্রযুক্তির ব্যবহার, কয়লাখনিতে কাজের উন্নত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, কয়লা উত্তোলনে ইন্টেলিজেন্ট মাইনিং ইনোভেশন ল্যাবের মাধ্যমে এ খাতে কীভাবে বিশ্বে হুয়াওয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত হবে, কয়লা উত্তোলন খাতে হুয়াওয়ের গ্রহণ করা বিভিন্ন মডেল নিয়ে হুয়াওয়ের আগামী দিনের পরিকল্পনা কী- এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেন ঝেংফেই।

‘এসব কর্মী ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তিতে বেশ দক্ষ। কয়লাখনিকে সংবেদনশীল জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাই কয়লাখনিতে উন্নত পরিবেশ গ্রহণ করার জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত’- এমন প্রশ্নের উত্তরে রেন ঝেংফেই বলেন, হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। উদ্ভাবনী দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি উন্নত ও সংযুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলাই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য। নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে হুয়াওয়ে একটি পরিপূর্ণ আইসিটি সল্যুশন পোর্টফোলিও প্রতিষ্ঠা করেছে, যা গ্রাহকদের টেলিকম ও এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্ক, ডিভাইস এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সুবিধা প্রদান করে। এর পাশাপাশি, বর্তমানে হুয়াওয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে পরিচিত নয় এমন কিছু শিল্পখাত নিয়ে কাজ শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কয়লা উত্তোলন খাতের কথা। পৃথিবীব্যাপী কয়লা উত্তোলনের বিষয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়; তাই এ খাতের সাথে যারা জড়িত আছেন তারাও সবসময় ঝুঁকির মধ্যেই থাকেন। কয়লা শ্রমিকদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আমরা বেশ কিছু সমাধান নিয়ে এসেছি। বলা যায়, আমাদের ইলেকট্রনিক, সফটওয়্যার এবং কম্পিউটিং সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কথা। এছাড়াও ফাইভজি অ্যাপ্লিকেশনগুলো প্রতিটি খাতের কাজকে সহজ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন খাতের জন্য একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও অ্যাপ্লিকেশনগুলো থেকে ভিন্ন। লোহা, স্টিল প্ল্যান্ট, নৌবন্দর ও বিমানবন্দরে যে প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবা প্রদান করছি; একইভাবে আমরা কয়লাখনির জন্য অনুরূপ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবা দেব। এতে করে নিরাপদ ও দক্ষভাবে কাজের বিষয়টি নিশ্চিত হবে। কয়লাশিল্প ইতোমধ্যেই আমাদের ইলেকট্রনিক সিস্টেমগুলো গ্রহণ করেছে। এতে করে আমাদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি যেমন বাড়বে তেমনি করে কয়লা উত্তোলনে সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত হবে।

‘বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে আপনাদের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। কয়লা উত্তোলন খাতের জন্য সদ্য চালু হ্ওয়া ইন্টেলিজেন্ট মাইনিং ইনোভেশন ল্যাবের মাধ্যমে এ খাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার মাধ্যমে আপনারা কতটুকু সাড়া ফেলতে পারবেন?’ এ প্রশ্নের উত্তরে ঝেংফেই বলেন, দেখুন বিশ্বব্যাপী আমাদের একশরও বেশি গবেষণা কেন্দ্র ও যৌথ ল্যাব রয়েছে। এগুলো বিশেষ করে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও নন্দনতত্ত্বে বেশ সমৃদ্ধ। এগুলোর অল্প সংখ্যক প্রায়োগিক গবেষণার জন্য তৈরি, যা আমরা ক্রেতাদের জন্য তৈরি করেছি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য যৌথ ল্যাব তৈরি করেছি, যেখানে টেলিকম খাতের গ্রাহকদের প্রয়োজনের মেটাতে গবেষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এখন কয়লাখনির জন্য যৌথ ল্যাব তৈরি করেছি্। এছাড়াও অন্যান্য খাতের জন্যও যৌথভাবে ল্যাব তৈরি করেছি। এই ল্যাবগুলোর সবগুলোই প্রায়োগিক গবেষণা করবে। ইন্টেলিজেন্ট মাইনিং ইনোভেশন মূলত শানঝির সহস্রাধিক কয়লাখনির কার্যক্রমে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতে উন্মুক্ত কয়লাখনিতে অটোমটেড প্রযুক্তির প্রসারে আমাদের সাহায্য করবে। ইন্টেলিজেন্ট মাইনিং অর্জনের জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা যাক। শানঝির কয়লাখনিগুলোতে গ্যাস বিস্ফোরণ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে; তবে তাদের মোট চারটি ক্যাবল প্রয়োজন: দুটি পাওয়ার ক্যাবল ও দুটি সিগন্যাল ক্যাবল। আমাদের সম্মিলিত প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্যাস ডিটেক্টরগুলোর কোনো ক্যাবলের প্রয়োজন পড়বে না। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা ডাটা ট্রান্সমিট করতে পারবে।

কোল মাইনিং খাতে হুয়াওয়ে করপস নামে একটি মডেল গ্রহণ করেছে। এই মডেলের ধরন নিয়ে ঝেংফেই বলেন, এই মডেলটি অনেক খাতেই ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণত করপস গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীদের, প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ, পণ্যবিশেষজ্ঞ, প্রকৌশল খাতের বিশেষজ্ঞ, বিক্রয়খাতের বিশেষজ্ঞ ও ডেলিভারি ও সেবাখাতের দক্ষদের নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করে। এর মাধ্যমে নতুন পণ্যের টাইম-টু-মার্কেট কমিয়ে দেয় এবং এর মাধ্যমে সবকিছু আরও দক্ষও হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নদীবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে এই মডেলটি ব্যপকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে এই মডেলটি ব্যবহারের ফলে কাজের গতিতে বিশেষ অগ্রগতি হয়েছে। যেমন- বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ফ্লাইটগুলোকে নতুন করে বিন্যাস করার প্রয়োজন পড়ে। এটি করতে ম্যানুয়ালি চার ঘণ্টার প্রয়োজন পড়ে। এই মডেলটি খুব অল্প সময়ের মাধ্যমে এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারে। তবে কয়লা উত্তোলনে আমরা প্রথমবারের মতো এই মডেলটি প্রয়োগ করেছি। একটা বিষয় আমি আপনাকে বলতে পারি, কোনো খাতে যদি গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন পড়ে তখন অবশ্যই আমরা করপস মডেলটি ব্যবহার করব। অন্যথায় আমরা সাধারণ ম্যাট্রিক্স মডেল ব্যবহার করব।

প্রসঙ্গত, গত দশকে দেশের অন্যান্য খাতের ন্যায় এগিয়েছে বাংলাদেশের খনিজসম্পদ খাত। খনিজসম্পদের মধ্যে কয়লা অন্যতম। দেশে এখন পর্যন্ত পাঁচটি কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লাক্ষেত্রে কয়লার মোট মজুতের পরিমাণ আনুমানিক ৩৩০০ মিলিয়ন টন। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় কয়লা উত্তোলনের জন্য ১৯৯৪ সালে খনি ইজারা মঞ্জুর করা হয়। বর্তমানে উক্ত কয়লাক্ষেত্র থেকে ভূ-গর্ভস্থ খনি পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে এবং উত্তোলিত কয়লা দ্বারা কয়লাখনি এলাকায় অবস্থিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ উৎপাদিত কয়লা বিক্রয় করে সরকারি রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। দেশে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে।

এইচএস/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।