ডিজিটাল নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে হবে
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত আধুনিক ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সাথে সাথে ডিজিটাল অপরাধের সংখ্যাও বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুযায়ী ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রদানকারী সদস্যের সংখ্যা অপ্রতুল। নিরাপদ ইন্টারনেট থেকে শুরু করে ডিজিটাল নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) আয়োজিত ‘সেফ ইন্টারনেট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে পারলেও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জাতিকে পুরোপুরি সচেতন করে তুলতে পারিনি। এটা রাতারাতি হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়ও নয়। শিক্ষার্থীদের আগে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে দেয়া হতো না। করোনাকালে ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত হতে পারছে না। আমাদের সমস্যা হলো, আমাদের সন্তানরা ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারলেও অভিভাবকরা এখনো প্রযুক্তিবান্ধব নন। তাই অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো গেলে আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগের পাশাপাশি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহার সম্পর্কে উৎসাহ দিতে হবে।
ওয়েবিনারে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) এর উচিত ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব বাসায় শিশু বা শিক্ষার্থী রয়েছে সেসব বাসায় বিনামূল্যে অভিভাবক সচেতনতা প্রদান করা। এতে শিশুদের ইন্টারনেটে অনেকাংশে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে। গ্রামাঞ্চলের দিকে অভিভাবকদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইস এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান নেই বললেই চলে। অনেকাংশে শিক্ষকদের মধ্যেও ডিজিটাল জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। গ্রামীণফোন এই সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যান্য টেলিকম প্রতিষ্ঠানকেও এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ করতে সাইবার আদালতের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। যতো সেবা বাড়বে তত এই সেবার সাথে সম্পৃক্ত লোকের সংখ্যা বাড়বে। তাই ইন্টারনেট সচেতনতা এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর দেশৗয় বিকল্প তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। ফেসবুক ফিল্টারিং ব্যাপারেও ভবিষ্যতে আমরা কাজ করব।
বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেটের অন্যতম শর্ত হলো ইন্টারনেট ব্যবহারের সচেতনতা। শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটে নিজের ভাষায় পর্যাপ্ত কনটেন্ট পাচ্ছে না। যার কারণে ইতিবাচক বিষয়ের চেয়ে নেতিবাচক বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীরা ঝুঁকে পরছে। শিশুদের জন্য উপযুক্ত কনটেন্ট তৈরির পাশাপাশি যুব সমাজকে সময়ানুবর্তিতার ব্যাপারেও সচেতন করতে হবে। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেফ ইন্টারনেট কার্যক্রম সফল করা সম্ভব বলেই আমার বিশ্বাস।
বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ইনোভিশন কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবায়েত সরওয়ারের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে বিটিআরসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ সুমন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবুসহ জিপি, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এইচএস/এসএস/জিকেএস