প্রায় ৮ কোটি মোবাইল গ্রাহক ইন্টারনেট সেবার বাইরে


প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও স্মার্টফোনের ব্যবহার সে তুলনায় বাড়ছে না। ইংরেজিতে দুর্বলতা, প্রয়োজনীয় বাংলা অ্যাপসের অভাব এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের জটিলতাই এর প্রধান কারণ বলে জানা গেছে। এছাড়া স্মার্টফোনের দাম নাগালের মধ্যে না থাকা, বিক্রয়োত্তর সেবার ঘাটতি এবং স্মার্টফোন ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকাও উল্লেখযোগ্য কারণ।

সম্প্রতি ৬৪ জেলায় সাধারণ মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে এবং তাদের হ্যান্ডসেটের ধরন সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এলিট মোবাইল।

বিটিআরসি প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার। তবে বর্তমানে দেশে মোট ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ৫ কোটি ৪০ লাখ ৫৮ হাজার। ফলে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাত কোটি ৯৪ লাখ ৩৬ হাজার গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়েছেন।

এলিট মোবাইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্মার্টফোনে ব্যবহৃত ইংরেজি ভাষা এবং অ্যান্ড্রয়েডের অপারেটিং সিস্টেমের জটিলতা থাকার কারণে সাধারণ মানুষ ফিচার ফোন থেকে স্মার্টফোনে আসার আগ্রহ দেখায় না। স্মার্টফোন ব্যবহারের অজ্ঞতার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষ ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যা তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে স্মার্টফোনের ব্যবহারে আধিক্য থাকলেও গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া বা অল্প আয়ের মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহারে সাহস পায় না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিমানবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) মো. শহীদুজ্জামান সরকার জাগো নিউজকে জানান, ২০১৪ সালে দেশে দুই কোটি ৪০ লাখ মোবাইল আমদানি হলেও স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে ৪০ লাখ। তবে বৈধ পথের পাশাপাশি অবৈধ পথেও আসছে স্মার্টফোন। গত ৫ মাসে বিমানবন্দর কাস্টমস শুল্ক ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করা প্রায় ৯ হাজার স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে।  
 
মোবাইল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) এক জরীপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের চেয়ে বিটিআরসির প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার। একই প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ৫ কোটি ৪০ লাখ ৫৮ হাজার। চলতি ২০১৫ সালে মোবাইল আমদানি বেড়ে ২ কোটি ৬০ লাখ হবে। মোবাইল অপারেটরগুলো যে হারে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে সে হারে স্মাটফোনের ব্যবহার বাড়ছে না।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গত ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডিজিটাল উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশনের সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত ২০১৫ সালের বিশ্ব ব্রডব্যান্ড পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাসা-বাড়ি প্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান অনেকটা পিছিয়ে আছে বলে মনে করছে জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সবার হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে দেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। সহজ যোগাযোগ এবং ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্যও স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা বেশি। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষদের এখনও ফিচার ফোন নির্ভরতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কাস্টমস ও বিএমপিআইএ-এর জরীপও তাই বলছে।

এলিট মোবাইলের গবেষণা প্রতিবেদনে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, দেশে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন, বাংলা মোবাইল অ্যাপস ও ইন্টারনেটভিত্তিক প্রশিক্ষণ বাড়ালে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়বে। এ জন্য সরকার, রেগুলেটরি, মোবাইল অপারেটর ও হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীরা উদ্যোগ নিতে পারেন।

আরএম/একে/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।