এক লাফে কেউ সফলতার শীর্ষে উঠতে পারে না
আপনারা এখন একজন সফল অ্যানিমেটর কিংবা অস্কার জয়ীকে দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু এর পেছনে শ্রম ও মেধার সমন্বয় করতে হয়েছে, যা সফলতার মূল চাবিকাঠি ছিল। তিনি বলেন, এক লাফে কেউ সফলতার শীর্ষে উঠতে পারে না।ধাপে ধাপে তাকে এগুতে হয়।
কথাগুলো বলছিলেন দুইবার অস্কারজয়ী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নাফিস বিন জাফর। তিনি একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ। তিনি প্রথম বাংলাদেশি ব্যক্তি হিসেবে ২০০৭ সালে অস্কার পুরস্কার জেতেন। হলিউডের পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : অ্যাট ওয়ার্ল্ডস অ্যান্ড চলচ্চিত্রে ফ্লুইড অ্যানিমেশনের জন্য সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল বিভাগে ডিজিটাল ডোমেইন নামে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ডেভেলপার কোম্পানির হয়ে দুই সহকর্মী ডাগ রোবেল ও রিয়ো সাকাগুচির সঙ্গে নাফিস এ পুরস্কার জেতেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর দ্বিতীয় দিনে হল অব ফেমে অনুষ্ঠিত ‘মিট উইথ নাফিস’ শীর্ষক এক সেমিনারে অ্যানিমেশন ফিল্ম ও তার কাজের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন নাফিস বিন জাফর।
তিনি বলেন, আমি ছিলাম একা। শুরুও করেছিলাম একা। আর এখন আমি টিমকে নেতৃত্ব দেই। সবাইকে ম্যানেজ করাই আমার কাজ। আমার স্বপ্ন আমি অন্যদের সহযোগিতায় পূরণ করছি, যার ফলশ্রুতিতে আমি দুবার অস্কার পেয়েছি। হয়তো আমার গল্প শুনে কেউ কেউ উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। প্রথমেই বলব আমার জার্নিটা মসৃণ ছিল না। আমি কাজ করতে করতে শিখেছি। শুরুতে আমি একা ছিলাম। আর এখন আমার সঙ্গে ৫০০ লোক কাজ করছে। সিনেমা তৈরি একার কাজ নয়। এটি একটি টিম ওয়ার্ক।
নাফিস বলেন, অ্যানিমেশন ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে হলে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানতে হয়। যেহেতু আমি একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী তাই আমার এ সম্পর্কে ধারণা ছিল। বাকিটা আমি কাজ করতে করতে শিখেছি। শুরুতে যে কাজ করতে আমার এক মাস লেগেছে, পরবর্তীতে সেই একই কাজ আমার করতে কয়েক মুহূর্ত লেগেছে। তাই আমি তরুণদের বলব আপনারা হাল ছাড়বেন না। কাজটাকে রপ্ত করতে পারলে আপনি এর ভেতর আনন্দ খুঁজে পাবেন। কাজের মধ্যে আনন্দ না থাকলে আপনি কোনোদিনও সেই কাজে সফল হতে পারবেন না।
অ্যানিমেশন ফিল্মের কাজের ধরন উল্লেখ করে নাফিস বলেন, অ্যানিমেশন ফিল্মে বিজ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহার হয়। এখানে যেমন গ্রাফিক্স লাগে তেমনি লাগে গণিত, জ্যামিতি, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস। এটা আসলে একটা গল্প বলার মত। দৃশ্যকল্পগুলোকে সফটওয়্যারে সাজাতে হয়।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যদি এ সেক্টরে কাজ করতে চান তবে থিয়েটারে কাজ করুন। নাটকে কাজ করুন। প্রথমে ছোট গল্প তৈরি করুন। শট ফিল্ম বানান। প্রয়োজনে টিভিতে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেন। এসব কাজ করতে করতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কোনো কাজটা ভালোলাগে। একটা নাটক কিংবা ছবিতে শুধু ক্যারেক্টার ছাড়াও পেছনে অনেক কিছু থাকে। সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। না হলে ভালো ফিল্ম মেকার হওয়া যাবে না।
নাাফিস জানান, তার ছবিতে হাতেখড়ি হয়েছিল ২০০০ সালে। তখন তিনি ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর নানা ধরনের ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস শিখেছেন।
নাফিস তরুণ ফিল্ম মেকারদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘আপনি যদি ফিল্ম মেকার হতে চান তবে আপনার স্বপ্ন থাকতে হবে। সেই সঙ্গে কাজটিকে ভালোবাসতে হবে। প্রথমে ছোট ছোট কাজ করুন, যা আপনাকে বড় কাজে উৎসাহিত করবে। এখানে সরকারও আপনাকে অনুদান দিতে পারে। যদি আপনার আইডিয়া ক্রিয়েটিভ হয়।
নাফিস জানান, তার পরিচালিত একটি সংগঠন ‘সি গ্রাফ’। এটি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এই সংগঠনটি তরুণদের অ্যানিমেশনের উপর ধারণা দেবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেবে।
প্রসঙ্গত, নাফিসের জন্ম ১৯৭৮ সালের ৮ অক্টোবর, ঢাকায়। তার বাবার নাম জাফর বিন বাশার এবং মায়ের নাম নাফিসা জাফর। তিনি সম্পর্কে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও পাপেট নির্মাতা মুস্তফা মনোয়ারের ভাতিজা এবং প্রয়াত কবি ও লেখক গোলাম মোস্তফার নাতি।
এএস/ওআর/আইআই