এক নজরে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রথম দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’ শুরু হয়েছে। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) চার দিনব্যাপী আইসিটি সেক্টরের মেগা ইভেন্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রথম দিনের আয়োজনে যা ছিল

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবসা বৃদ্ধি
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ব্যবসার প্রচারণার নতুন হাতিয়ার এই ফেসবুক। এই মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবসা দাঁড় করানোর নানা কৌশল নিয়ে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্রো ইয়োর বিজনেস ইউজিং ফেসবুক’ নামে একটি সেমিনার। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রথম দিন সেমিনারটি দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু করে সাড়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফেসবুক ব্যবহার করে কীভাবে ব্যবসার প্রসার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া বর্তমানে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা করছেন, তারা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তা এতে তুলে ধরা হয়। এই আয়োজনে স্পিকার হিসেবে ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ড্রিম৭১ বাংলাদেশের পরিচালক রাশেদ কবির, ই-ক্যাবের পরিচালক নাসিমা আক্তার নিশো ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, আইসিটি বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুনুর রশিদ।

গেইমিং ক্যারিয়ারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
ডেস্কটপ ও স্মার্টফোন উভয় ক্ষেত্রে গেইমিং বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এই খাতটি মাত্র শুরু হয়েছে এবং এর পরিধি ধীরে ধীরে বাড়ছে। গেইমিং নিয়ে ‘ক্যারিয়ার ইন গেইমিং ইন্ডাস্ট্রি : প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ বিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রথম দিনে। সেমিনারটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সেলিব্রেটি হলে বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হয়ে চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। এতে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাংরি বার্ডসের গেইম উন্নয়ন কর্মকর্তা লরি লুকা। বর্তমান বাজারে কোন ধরনের গেইমের চাহিদা বেশি এবং কেমন গেম বানালে তা ভালো হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। গেইমিং শিল্পে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার এবং মোবাইল অ্যাপ ও গেইম মনিটাইজেশনের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয় এতে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ডেভেলপাররাও এতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোনের অ্যাপ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগে। তাই তো মোবাইল অ্যাপের একটি বড় বাজার রয়েছে। এই বাজার সম্পর্কে ধারণা ও নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে আলোচকরা। স্পিকার হিসেবে ছিলেন রাইজ আপ ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এরশাদুল হক, স্পিনওফ স্টুডিওয়ের প্রধান নিবার্হী আসাদুজ্জামান আসাদ, ড্রিম৭১ বাংলাদেশের প্রধান নিবার্হী রাশেদ কবিরসহ আরও অনেকেই।

পেমেন্ট সার্ভিস বিষয়ে সেমিনার
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রথম দিনে ‘পেইমেন্ট সার্ভিস অপরচুনিটি : সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনার চারটা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় সেলিব্রেটি হলে। সেমিনারে বাংলাদেশে পেমেন্ট সার্ভিসেস ইকোসিস্টেমের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের পেমেন্ট সার্ভিসেসের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এসএসএল ওয়্যারলেসের ই-কমার্স বিভাগের প্রধান ন্যাওয়াট আস্কিন, মাস্টার কার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদ এম কামাল, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদীর ও ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমালসহ আরও অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

রোবট সোফিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ
বিশ্বজুড়ে আলোচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট সোফিয়াকে নিয়ে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ আয়োজনে দর্শনার্থীদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেইমে বেলা আড়াইটা হতে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন সোফিয়া। যথাসময়ে মঞ্চে সোফিয়াকে এনে হাজির করা হয়। সঙ্গে ছিলেন সোফিয়ার উদ্ভাবক ডেভিড হ্যানসন।

বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে ঢাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাউছুল আলম শাওনের সঞ্চালনায় ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও উপস্থিত ছিলেন। প্রথমেই সঞ্চালক সোফিয়াকে বাংলাদেশের আসার জন্য অভিনন্দন জানান। জবাবে সোফিয়া বাংলাদেশের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলে, ‘হ্যালো বাংলাদেশ। আই অ্যাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইন্ট্রিগ্রেটেড রোবট সোফিয়া।’

শাওন সোফিয়ার কাছে ইংরেজিতে জানতে চান, ‘সোফিয়া আপনি কি জানেন, এখন কোথায় আছেন?’ জবাবে সোফিয়া জানাল, ‘আমি বাংলাদেশে আছি। এখানে আজ থেকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড শুরু হয়েছে। আমার সামনে হাজারও তরুণ আমার কথা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’

এবার সঞ্চালক সোফিয়ার পরনের পোশাকের তারিফ করেন। বলেন, ‘সোফিয়া আপনি যে পোশাকটি পরেছেন তাতে আপনাকে মানিয়েছে বেশ। আপনি কি জানেন, আপনি কী পোশাক পরে আছেন?’ প্রশংসায় কে না খুশি হয়! রোবট হলেও সেও তো বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। তাই খানিকটা হেসে বলল, ‘আমি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানির তৈরি পোশাক পরেছি। এই জামদানি মিহি সুতার তৈরি। আরামদায়ক এই পোশাকটি পরে আমারও ভালো লাগছে।’

এরপর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সোফিয়ার কাছে জানতে চান, একটি জাতিকে বদলানোর জন্য ডিজিটালাইজেশনের ভূমিকা কী হতে পারে? সব জান্তা রোবট সোফিয়া বলল, ‘একটি জাতিকে বদলাতে হলে ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নাই।’ বাংলাদেশও সোফিয়ার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট তৈরি করতে সক্ষম বলে মন্তব্য করে সোফিয়া।

এরপর সোফিয়ার উদ্ভাবক ড. ডেভিড হ্যানসন সোফিয়ার মতো অত্যাধুনিক তৈরি গল্প বললেন। জানালেন, ছোটবেলা থেকে তিনি রোবট তৈরির স্বপ্ন দেখতেন। তার বিশ্বাস এক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট মানুষের হয়ে কাজ করবে। তিনি বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা চাইলে সোফিয়ার সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এই সফটওয়্যার ওপেন সোর্সে আছে।

অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে রোবট সোফিয়া ও এর উদ্ভাবককে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
চ্যাটবট ও ই-গভর্নেন্স লিভারেজিং শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় গ্রিন ভিউ হলে। আয়োজনটি শুরু হয় দুপুর আড়াইটা থেকে। সেমিনারে এআই নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেমিনারে এআই এবং এর ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এতে স্পিকার হিসেবে ছিলেন রিভ সিস্টেমের হেড অব সেলস তৌহিদুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা নূরনবী সিদ্দিক ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নিবার্হী রেজাউল হাসানসহ আরও অনেকে।

নানা আয়োজনে চার দিনব্যাপী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড চলবে ৯ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে কোনো প্রবেশ ফি নেই। তবে এতে যেতে চাইলে www.digitalworld.org.bd এ ঠিকানায় গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মেলা প্রাঙ্গণেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

এএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।