অসম্পূর্ণ ও ভুলে ভরা ইউজিসির ওয়েবসাইট
অসম্পূর্ণ ও ভুলে ভরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ওয়েবসাইট। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে গেলেও এর ছিটেফোটা লাগেনি এখানে। যেন এখনো প্রযুক্তির কোনো ছোয়া মেলেনি এনালগ ওয়েবসাইটে।
ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ওয়েবসাইটে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেই। তবে থাকলেও অসংখ্য ভ্রান্তির তথ্য সংবাদ। সে তথ্যগুলোও অনেক পুরনো। ইউজিসির এ ভ্রান্তির জন্য সংশ্লিষ্টরা অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন সময়ে ইউজিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা মেলে বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য। ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নাম আছে তো তার ই-মেইল আইডি নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে তো ঠিকানা নেই, ঠিকানা আছে তো অফিসিয়াল ফোন, ফ্যাক্স, অনুষদের সংখ্যাও দেওয়া নেই।
শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদ রেজিস্ট্রার ও ট্রেজারারের নাম নেই ইউজিসির ওয়েবসাইটে। আবার অনেক ক্ষেত্রে নাম দেওয়া থাকলেও তিনি সেখানে আর কর্মরত নন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা অনেক পুরনো। গত ২৪ মে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আলী আকবর। তিনি গত ৮ এপ্রিল অধ্যাপক ড. মো রফিকুল হকের স্থলাভিষিক্ত হলেও ইউজিসির ওয়েবসাইটে তার নাম বর্তমান আছে। এমনকি অনুষদগুলোর সংখ্যাও সেখানে উল্লেখ নেই।
ইউজিসির ওয়েবসাইটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্ষেত্রে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের নাম থাকলেও তার ই-মেইল আইডটি দেওয়া আছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য সিরাজুল ইসলাম খানের (এসআই খান)। এছাড়াও জবির ট্র্রেজারার এবং রেজিস্ট্রারের ই-মেইল আইডি উল্লেখ নেই ইউজিসির ওয়েবসাইটে। অনুষদের সংখ্যাও উল্লেখ নেই।
মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্ষেত্রে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ব্যক্তির নামও ভুল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. একে এম মাসুদ কিন্তু ইউজিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে মো. কামাল আহমেদ। ট্রেজারার নাম, ঠিকানা, ইমেইল আইডি, অনুষদের সংখ্যা উল্লেখ নেই মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটে।
দেশের একমাত্র পোশাক খাতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়- বাংলাদেশ টেক্সাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বলতে গেলে কোনো তথ্য নেই ইউজিসির ওয়েবসাইটে। সেখানে শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের নাম ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই।
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একই চিত্র। ইউজিসির ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা দেওয়া হয়নি। রেজিস্ট্রার, ট্রেজারারের নাম নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির অফিসিয়াল ই-মেইল আইডি, নম্বর, ফ্যাক্স নম্বরও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুষদের সংখ্যাও উল্লেখ নেই ওয়েবসাইটে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একই চিত্র।
ইউজিসির ওয়েবসাইটে মওলানা ভাষানী ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিসিয়াল ই-মেইল আইডি, ট্রেজারারের নাম নেই। টাঙ্গাইলে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইল আইডি ও অনুষদের সংখ্যাও উল্লেখ নেই।
খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রায় একই চিত্র। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও টেজারারের ই-মেইল আইডি এবং অনুষদের সংখ্যা উল্লেখ নেই ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে উপাচার্য ও ট্রেজারারের ঠিকানা নেই, নেই এ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের সংখ্যাও।
ইউজিসির ওয়েবসাইটে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেরারারের নাম, ইমেইল আইডি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়টি অনুষদ রয়েছে তা উল্লেখ নেই। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ট্রেজারের নাম, ইমেইল আইডি, অনুষদের সংখ্যা উল্লেখ নেই। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ও একই চিত্র।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহম্মাদ খানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।
তবে এদিকে এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক হিসেবে ইউজিসির ওয়েবসাইটে এ অসম্পূর্ণ ও ভুল তথ্য কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচিত ওয়েবসাইটি নিয়মিত আপডেট করা। কারণ নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদের পরিবর্তন ঘটে।
বিএ/পিআর