স্বাবলম্বী হতে আউটসোর্সিংয়ে ঝোঁক বাড়ছে তরুণদের


প্রকাশিত: ১১:০৬ এএম, ০৮ জুলাই ২০১৭

সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় অনলাইনে কাজ করে বিদেশি মুদ্রা আয় করার জন্য আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অনেক তরুণ। বর্তমানে অনেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করে স্বাবলম্বী হওয়ায় শহর ছাড়িয়ে প্রান্তিক পর্যায়েও তরুণদের ঝোঁক বাড়ছে এ পেশায়।

অনলাইনে কাজ করে আয় করা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যার পোশাকি নাম আউটসোর্সিং। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের তরুণরা সফলভাবে এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন। যদিও আগে এই পেশায় শিক্ষিত বেকার তরুণদের খুব একটা আগ্রহ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে এখন অনেক তরুণ-তরুণীই অনলাইনে ঘরে বসে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। ফলে অনেকেরই আগ্রহের জায়গা এখন আউটসোর্সিংয়ে।

ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে বদলে নিতে সক্ষম হয়েছেন অনেকেই। এর একটি বড় কারণ হলো বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি’র হিসাব মতে, দেশে কার্যকর ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা সাত কোটি ছাড়িয়েছে। দেশে ক্রমে ডিজিটালাইজেশন এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এ সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

জানা গেছে, প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এখন প্রায় সাড়ে ৪৪। ইন্টারনেট ব্যবহারের এ মাইলফলক তৈরি হয় গত এপ্রিল মাসে। মে’র শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাহকসংখ্যার হিসাব প্রকাশ করে বিটিআরসি।

ওই তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে কার্যকর ইন্টারনেট সংযোগ ছিল ৬ কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার। এর মধ্যে এপ্রিল মাসে সংযোগ সাত কোটি পেরিয়ে যায়। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল শেষে কার্যকর ইন্টারনেট সংযোগ ছিল সাত কোটি ৭৭ লাখ ৯৬৯টি।

দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী জেলার এক মফস্বল শহর থেকে ‘আউটসোর্সিংয়ে কাজ করছেন সুমন আহমেদ। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে পরিচিত একজনের মাধ্যেমে আউটসোর্সিং বিষয়ে জানতে পারি। এরপর বিভিন্নভাবে কাজ শিখে এখান থেকে আয় করতে পারছি। এ বিষয়ে বর্তমান সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারপরও প্রান্তিক পর্যায়ে তরুণরাও যেন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারে সে কারণে আরও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

আউটসোর্সিংয়ে কাজ করতে কেমন যোগ্যতা দরকার এমন প্রশ্নের জবাবে আরেক ফ্রিল্যান্সার শারমিন আক্তার বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইংরেজিতে একটু ভালো হতে হবে। আর কম্পিউটার বিষয়ক কোনো একটা ব্যাপারে দক্ষ হলে ভালো হয়। শুধু কম্পিউটারের সাধারণ ব্যবহার জানলেও ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ডাটা এন্ট্রি বা প্রবন্ধ লেখা এ ধরনের কাজ পাওয়া যেতে পারে। যেমন কোনো একটি বইয়ের পুরো লেখাটা এমএস ওয়ার্ড এ টাইপ করে দেয়া ডাটা এন্ট্রির এক ধরনের কাজ। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেক ধরনের কাজ পাওয়া এবং কাজের সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ শিক্ষিত তরুণরা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছে, আত্মবিশ্বাস অর্জন করছে।

সম্প্রতি সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তরুণেরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ফ্রিল্যান্সারদের আয় বাড়তে দেখা গেছে। ঢাকা বিভাগে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প থেকে মোট প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১ হাজার ৫৬০ জন। এর মধ্যে সফলভাবে আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হয়েছেন ৪৮৫ জন। ঢাকার বিভিন্ন জেলায় তাদের সম্মিলিত আয় ৪১ হাজার ৫৭৯ ডলার বা ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৩২০ ঢাকা। ফ্রিল্যান্সারদের ব্যক্তিগত এই আয়ের পরিমাণ ক্রমে বাড়ছে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আউটসোর্সিং বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, তরুণরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদলাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে, যার কারণে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

এএস/ওআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।