ভারতের মহাকাশযাত্রায় সঙ্গী বাংলাদেশ
ভারতের ৪০ কোটি ডলারে নির্মিত স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। তবে ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’ নামে এ মিশনে যোগ দিলেও এর ফলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হবে না বাংলাদেশের।
গত সপ্তাহে রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মিলনায়তনে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এ সম্পর্কিত এক চুক্তি হয়েছে। ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রমে বাধা হবে না সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট।
‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্মেন্ট অব রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য গভর্মেন্ট অফ দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ কনসার্নিং টু অরবিট ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন অব সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট।’ শিরোনামের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চুক্তির ফলে বিনামূল্যে বিভিন্ন স্যাটেলাইট বেজ সার্ভিসের জন্য প্রস্তাবিত সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের (কেইউ ব্যান্ডে ১২টি ট্রান্সপন্ডার বিশিষ্ট জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট) ‘ক্যাপাসিটি’ ব্যবহার করতে পারবে। এই স্যাটেলাইটে যে ১২টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে তার একটি বাংলাদেশকে বিনামূল্যে দেবে ভারত।
এছাড়া বাংলাদেশ ট্রান্সপন্ডারটি কাস্টমাইজড করে নিজেদের মতো ব্যবহার করতে পারবে। তবে এর ডিজাইন, নির্মাণ, উৎক্ষেপণসহ সব কার্যক্রমে ব্যয়ভার বহন করবে ভারত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষের ওই চুক্তি স্বাক্ষরকারী বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এবং সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের মধ্যকার দূরত্ব ৭০ ডিগ্রির চেয়ে বেশি। ফলে সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সমস্যা করবে না।
তিনি আরও বলেছেন, ভারতের প্রস্তাব আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ইন্দোনেশিয়ার ওপরে এবং সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট আফগানিস্তানের ওপরে মহাকাশে বসবে। ফলে দুই স্যাটেলাইটের ফুট প্রিন্ট (চিত্রধারণের এলাকা) পৃথক হবে।
ভারতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের কাজের দিক দিয়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেবে আর সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জরুরি সেবা, স্যাটেলাইট টেলিভিশন সম্প্রচার, ডাইরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) ইত্যাদি সেবা দিতে কাজ করবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দেশের বাইরে থাকায় ওই অনুষ্ঠানে না থাকলেও এক অডিওবার্তায় তিনি এই উদ্যোগে শুভকামনা জানান। সে সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নির্মাণকাজের ৭৫ ভাগ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়েই তা মহাকাশে পাঠানো যাবে।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশনের (একটি গাজীপুরে, অন্যটি বেতবুনিয়ায়) নির্মাণকাজেরও ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে।
এদিকে, ভারতের এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ মিশনে সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে নেপাল, ভুটান, ইন্দোনেশিয়াসহ ছয়টি দেশ।
সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় যেকোনো সময় এটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হতে পারে।
এদিকে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে।
এসআর/জেআইএম