‘বাংলাদেশ দখল করবে ভারত’ শঙ্কা মোস্তফা জব্বারের


প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ০৬ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) বাজার ভারত দখল করে নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সফটওয়্যার ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি মোস্তফা জব্বার। সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেন। আউটসোর্সিংয়ের বিষয়ে আমেরিকা নতুন বিল করার উদ্যোগ নেয়ায় এ শঙ্কা প্রকাশ করেন বিশিষ্ট এই আইটি বিশেষজ্ঞ।

মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আমেরিকা ট্রাম্পের যুগে এসে ধারা বদলাইছে। ওরা এখন আর আউটসোর্সিং করবে না। ওরা এখন আর ইংরেজি জানা লোকেরে দিয়া তার নিজের দেশ চালাবে না। এবং ভারত বোধহয় তার জীবনে আইটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, যদি ওদের বিলটা পাস হয়। কারণ আউটসোর্সিংয়ের সবচেয়ে বড় ভিতটি ছিল ভারতের।’

‘ভারত যদি ওইটা মিস করে (আমেরিকার বাজার), তাহলে তাদের খুজতে হবে। আমি ভয় পাইতাছি ওরা না বাংলাদেশ দখল করে। কারণ তাদের বাজার খুঁজতে হবে। বাজার খুঁজতে হলে তাদের আশেপাশে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নাই’ বলেন বেসিসি সভাপতি।

তিনি বলেন, ‘আমার দেশে ১৬ কোটি মানুষ। ১৬ কোটি মানুষের ১৬ কোটি সমস্যা আছে। আমি এই মানুষগুলোর বাজারটাকে ছোট করে দেখি না। ৭২ সালে আমাকে কিন্তু কাপড় কাঁচা সাবানও আমদানি করতে হয়েছে। এখন…. (দেশীয় একটি কোম্পানি) ২০ লাখ ফ্রিজ ম্যানুফ্যাকচারিংয় করে।’

‘আমরা কিন্তু একটা শিফটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি এবং এ শিফটের ভেতর আমি হিসাব করে দেখেছি বাংলাদেশে এখন ছাত্র-ছাত্রী হচ্ছে চার কোটি। আমি কি চার কোটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য সলিউশন বিদেশ থেকে আনবো? আমি কি তাদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইজ বিদেশ থেকে আমদানি করে আনবো? তাদের সমস্যা সমাধান করার জন্য কি আমি বিদেশি এক্সপার্ট ডেকে নিয়ে আসবো? মজার বিষয় হচ্ছে যাহারা বাংলাদেশে এইসব সমস্যার সমাধান দিয়েছেন, তাহারা সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ’ বলেন মোস্তফা জব্বার।

বাংলাদেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে এই আইটি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবলেম অন্য কেউ সলভ করবে না। বাংলাদেশের সিকিউরিটি অন্য কেউ ইনশিয়র করবে না। বাংলাদেশের ডেভলপমেন্ট কেউ করে দেবে না। অতএব ওই জায়গাটাতে যদি আমি দাঁড়াতে পারি, তাহলে আমার অন্য কোনো দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশটা আমার বাড়ি। আমার হোম গ্রাউন্ড। আমার হোম গ্রাউন্ডে আমি যদি শক্তিশালী না থাকতে পারি, তাহলে তো আমার নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।’

মানুষের কাজে লাগে এমন আবিষ্কারের আহ্বান জানিয়ে মোস্তফা জব্বার বলেন, আমি যদি প্রয়োজনের বাইরে অসংখ্য ইনভেশন করি, ওটা কাজে লাগবে না। সো আমার ইনভেশনের প্রথম জায়গাটা হওয়া উচিত ওটি মানুষের কাজে লাগে কি না। মানুষেল কাজে লাগে এমন ইনভেশন করতে হবে।

‘আমি যখন প্রথম সফটওয়্যার তৈরি করি প্ল্যান করি দেড় বছর ধরে। দেড় বছর পরিকল্পনা করার পর বাংলাদেশে কোনো প্রোগ্রামার না পেয়ে দিল্লিতে গিয়ে একজনকে দিয়ে কোড লেখাইছি এবং সফটওয়্যারটির আয়তন হয়েছে ৩ কিলোবাইট। এই ৩ কিলোবাইট সফটওয়্যার বাংলাদেশের প্রকাশনার বিপ্লব করেছে। কয়দিন আগে বইমেলা গেছে। মেলায় যে কয়টি বই ছিল তার প্রত্যেকটি অক্ষর আমার হাতের। এই ৩ কিলোবাইট সফটওয়্যার তৈরি করতে আমরা একটি বিষয় মনে রাখতে হয়েছে এটি মানুষেল কাছে লাগে কিনা’ বলেন মোস্তফা জব্বার।

বাংলাদেশের মেয়েদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়েদের ক্ষেত্রে আমি অনেক বেশি মানে তিরস্কার করার মতো মনেকরি। বাংলাদেশের ৫৩ ভাগ মেয়ে, ১০ ভাগ মেয়েও চাকরি করে না। এমএ পাস করার পরে চুলার দিকে যায়, আর সন্তান মানুষ করে। তাহলে লেখাপড়া করছো ক্যান? ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়বা এবং স্বামীর কাছে চিঠি লিখবা- ওগো আমার জন্য কিছু টাকা পাঠাইয়ো। এমএ পর্যন্ত তো পড়ারই দরকার নেই।’

কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া একজন শিক্ষার্থীকে কমপ্লিটলি সফটওয়্যার বানাতে পারতে হবে। শিক্ষকরা যদি সফটওয়্যারের কনসেপ্টটি শিক্ষার্থীদের না শেখাতে পারেন তাহলে সার্টিফিকেট দিয়ে লাভ কী।

এমএএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।