বড় পর্দার স্মার্টফোনই বেশি পছন্দ গ্রাহকদের


প্রকাশিত: ০৩:১০ এএম, ০১ জুলাই ২০১৪

বড় পর্দার স্মার্টফোন ব্যবহারেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন মোবাইল ডিভাইস গ্রাহকরা। সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের চেয়ে বড় পর্দার স্মার্টফোনের (ফ্যাবলেট) চাহিদাই বেশি বাড়ছে। সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি বিষয়ে পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাসেঞ্চার তাদের এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। খবর ইয়াহু নিউজ।

সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু এ মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে ছোট পর্দার স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের তুলনায় ফ্যাবলেটের চাহিদাই বেশি। অ্যাসেঞ্চার বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই ডজন দেশের ২৩ হাজার গ্রাহকের ওপর এক জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানায়। এ ২৩ হাজার গ্রাহকের ৫৭ শতাংশই জানান, তারা আগামী বছরের মধ্যে নতুন স্মার্টফোন কিনবেন। ৪৭ শতাংশ জানান, তারা ৫-৭ ইঞ্চি পর্দার স্মার্টফোন কিনতেই বেশি আগ্রহী।

বড় পর্দার স্মার্টফোনের প্রতি গ্রাহক আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার বেশকিছু কারণও অ্যাসেঞ্চারের প্রতিবেদনে উঠে আসে। শুরুর দিকে স্মার্টফোনের প্রতিই ঝোঁক ছিল সাধারণ গ্রাহকের। পরবর্তীতে ট্যাবলেট বাজারে আসার পর ডিভাইসটি নিয়ে বেশ মাতামাতি শুরু হয়। ট্যাবলেটের কারণে কম থাকে পার্সোনাল কম্পিউটারের বাজার। কারণ একটি পার্সোনাল কম্পিউটারে যেসব কাজ করা যায়, তার প্রায় প্রতিটি কাজই একটি ট্যাবলেটে করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ই-কমার্স একটি বড় প্রভাবক। কারণ পিসিতে অনলাইনে কেনাকাটা করতে হলে ঘরে বা অফিসে বসেই করতে হয়। কিন্তু গ্রাহকরা ট্যাবলেটের মাধ্যমে যে কোনো জায়গা থেকেই কেনাকাটা করতে পারছেন। আকারে পিসির চেয়ে ছোট হওয়ায় এর চাহিদা বাড়তে থাকে।

বড় পর্দার স্মার্টফোন বা ফ্যাবলেট এখন ট্যাবলেটের এ বাজারে ভাগ বসাচ্ছে। ট্যাবলেটের বাজার অনেকখানিই দখল করে নিচ্ছে বড় পর্দার স্মার্টফোনগুলো। ফ্যাবলেটের চাহিদা বাড়ার একটি অন্যতম কারণ, ট্যাবলেট ও ফ্যাবলেটে একই কাজ করা গেলেও ফ্যাবলেটের আকার ছোট হওয়ায় তা বহন করা সহজ।

গ্রাহক চাহিদার কথা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন বিপুল হারে ফ্যাবলেট বা বড় পর্দার স্মার্টফোন উত্পাদন শুরু করেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি এসফোর ডিভাইসটি ৫ দশমিক ১ ইঞ্চির পর্দা দিয়ে বাজারে আনে। প্রতিষ্ঠানটির গ্যালাক্সি সিরিজের অন্য পণ্য গ্যালাক্সি নোট থ্রির পর্দার আকারও ছিল ৫ দশমিক ৭ ইঞ্চি। কিন্তু মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলকে এত দিন ফ্যাবলেটের এ ধারা এড়িয়ে চলতে দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির আইফোন সিক্স নিয়ে বর্তমানে প্রযুক্তি বিশারদদের মধ্যে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, অ্যাপল তাদের এ পরবর্তী সংস্করণের আইফোনটিতে বড় পর্দা ব্যবহার করবে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের ধারা এড়িয়ে চলা সম্ভব না। তাই অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহক চাহিদার কথা মাথায় রেখে বড় পর্দার ডিভাইস বাজারে আনতে হচ্ছে। অ্যাসেঞ্চারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বড় পর্দার পরবর্তী সংস্করণের আইফোনের কারণে অ্যাপলের বাজার বাড়তে পারে। কারণ বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোয় এখন ফ্যাবলেটের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ করা যাচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, উদীয়মান মোবাইল ডিভাইস বাজারগুলোয় ফ্যাবলেটের চাহিদা বাড়ছে। ভারতের ৬৭ শতাংশ মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারী এখন ফ্যাবলেটের দিকে ঝুঁকছেন। চীনে এ হার ৬৬ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় ফ্যাবলেটের প্রতি আগ্রহী মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোটের ৬১ শতাংশ। তুরস্কে এ হার ৬৪ শতাংশ। ফ্যাবলেটের এ চাহিদার দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও জাপান। যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাবলেটের প্রতি আগ্রহী মোবাইল ডিভাইস গ্রাহকের সংখ্যা মোটের ৪০ শতাংশ। জার্মানিতে এ হার ৩০ শতাংশ। এদিকে জাপানের মাত্র ১৯ শতাংশ মোবাইল ডিভাইস গ্রাহক বড় পর্দার স্মার্টফোনের প্রতি আগ্রহী।

গত তিন বছরে ক্রমবর্ধমান ট্যাবলেট বাজার চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে হ্রাস পেয়েছে। মূলত ফ্যাবলেটের চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই ট্যাবলেটের বাজার নিম্নমুখী হচ্ছে বলে অভিমত বাজার বিশ্লেষকদের। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ট্যাবলেটের চেয়ে ফ্যাবলেটের দাম তুলনামূলক কম। এ কারণে একই সেবা গ্রাহকরা বেশি দামে ব্যবহার করতে এখন আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

স্যামসাং, অ্যাপল, গুগলের মতো শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, যারা ফ্যাবলেট তৈরিতেই বেশি মনোনিবেশ করছে। অনেক দেশে স্থানীয় এ ধরনের অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান নিজ দেশের গ্রাহকদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গড়ে উঠছে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমচালিত ফ্যাবলেট তৈরিতেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকের আগ্রহের কথা মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।