ভিপিএন অবৈধ যেসব দেশে, ব্যবহার করলেই শাস্তি
পরিচয় গোপন করে ইন্টারনেট ব্যবহার করার উপায় হচ্ছে ভিপিএন। ভিপিএন-এর প্রাথমিক উদ্দেশ্যই হচ্ছে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখা। ফলে কোনো কারণে ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্তকরণ তথ্যাদি, ধরা যাক ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড গোপন করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
বিশ্বজুড়ে অন্তত ১৬০ কোটি মানুষ বর্তমানে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করছে। এটি সারা বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
বর্তমানে ভিপিএন ব্যবহারকারীর দিক থেকে শীর্ষ দেশ কাতার। দেশটিতে ৭০ শতাংশ মানুষ ভিপিএন ব্যবহার করেন। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬২ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুর ৫৪ শতাংশ। কম ব্যবহারকারীর তালিকায় শীর্ষে সাউথ আফ্রিকা। সেখানে মাত্র ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ মানুষ ভিপিএন ব্যবহার করেন। তবে আমাদের দেশে ভিপিএনের ব্যবহার বৈধ এবং ব্যবহারও কম। সাধারণ মানুষ অনেকে ভিপিএন সম্পর্কে জানেনও না। তবে বর্তমানে এই চিত্র ভিন্ন।
জানেন কি, বিশ্বের এমন কয়েকটি দেশ আছে যেখানে ভিপিএন ব্যবহার সীমিত, আবার কোথাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোথাও কোথাও আছে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। চলুন এমন দেশগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যেন আপনি সেখানে গিয়ে ভিপিএন ব্যবহার করে বিপদে না পড়েন।
উত্তর কোরিয়া
এই তালিকায় প্রথমেই আছে উত্তর কোরিয়া। এই দেশটিতে ভিপিএন সম্পূর্ণ নিষেধ। যদিও এই খবরে পাঠক নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছে না। কারণ সবাই কমবেশি জানেন উত্তর কোরিয়া সবার থেকে আলাদা। তাদের আছে নিজস্ব আইন। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার প্রযুক্তিগত আইনগুলো সবার তুলনায় বেশি কঠোর। সেখানে ভিপিএন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে দাবি করা হয়, উত্তর কোরিয়ায় অনুমোদন ছাড়া ভিপিএন ব্যবহারের ফলে কারাদণ্ড হতে পারে। তবে অল্প সময়ের জন্য সেখানে ভ্রমণ করতে যাওয়া ব্যক্তিরা, দেশটিতে কোনো আইনি সমস্যা ছাড়াই ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন।
চীন
ভিপিএন ব্যবহারের জন্য চীন সরকারের কঠোর নিয়ম রয়েছে। যদিও চীনে ভিপিএন ব্যবহার করা আনুষ্ঠানিকভাবে বেআইনি নয়। তবে দেশে অনুমোদিত ভিপিএনগুলো ব্যবহার করা যাবে। দেশের ইন্টারনেট সেন্সরশিপ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুসরণ করেই আপনাকে ভিপিএন ব্যবহার করতে হবে, যা ‘চীনের গ্রেট ফায়ারওয়াল’নামে পরিচিত। চীনে নিষিদ্ধ এমন ভিপিএন ব্যবহার করলে বিশাল জরিমানা, কারাদণ্ড, এমনকি চাকরি হারাতে পারেন। সেখানে একটি অননুমোদিত ভিপিএন ব্যবহারের শাস্তি ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন
ইরাক
ইরাকে ২০১৩ সাল থেকে সবার জন্য ভিপিএন পরিষেবাগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এটি মূলত সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধ করার জন্য করেছে সেদেশের সরকার। কারণ আইএসআইএস ইন্টারনেটের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করে, এমন খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও সরকার চরমপন্থী অনলাইন সামগ্রীর বিস্তার রোধ করতে চায়। যদিও ইরাকের আইনি ব্যবস্থাগুলো চীন বা উত্তর কোরিয়ার মতো কঠোর নয়। যদি কোনো কারণে কেউ ভিপিএন ব্যবহার করেন তাহলে তার শাস্তি এক বছরের জন্য জেল।
মিশর
মিশরে ভিপিএন ব্যবহার নিষিদ্ধ, তবে তা সোশ্যাল মিডিয়া সাইট, যেমন- ফেসবুক মেসেঞ্জার, ফেসটাইম, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ভাইবারের মতো ভিওআইপি পরিষেবাগুলোর জন্য। তবে সরকারি কাজ বা অন্যান্য কাজে ভিপিএন ব্যবহারের অনুমতি আছে সেখানে। তবে সতর্কতার সঙ্গে ভিপিএনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
রাশিয়া
রাশিয়ায় ভিপিএন অবৈধ তবে সরকারি কাজে ভিপিএন ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর রাশিয়ান সরকারের অবস্থান শক্ত। তারা এখন পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি ভিপিএন প্রদানকারীকে নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া যারা ভিপিএন ব্যবহার করেন তাদেরও আগে সাইনআপ করে নিতে হয়। সেই ব্যবহারকারী ভিপিএন ব্যবহার করে কি কাজ করছেন তার ডাটা সরকারের কাছে চলে যায়। নর্ড, এক্সপ্রেস, আইপি ভ্যানিশ, কিপ সলিড, হলার মতো জনপ্রিয় ভিপিএনগুলোও রাশিয়ায় নিষিদ্ধ।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্যবহার করা অবৈধ। সেদেশের সরকার পর্নোগ্রাফির মতো আপত্তিকর বিষয়বস্তু প্রতিরোধ বা ব্লক করার জন্য এবং হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপ এবং ফেসবুকের মতো ভিওআইপি পরিষেবার ব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য কঠোর নীতি সহ তাদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। এই উদ্দেশ্যেই মূলত ভিপিএন ব্যবহার অবৈধ করেছে দেশটি। সেই সঙ্গে কেউ যদি লুকিয়েও ভিপিএন ব্যবহার করেন তাহলে তার অস্থায়ী কারাদণ্ড। ক্ষেত্রবিশেষে জরিমানা ১ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি হতে পারে।
বেলারুশ
বেলারুশ কঠোরভাবে ভিপিএন ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেখানে ভিপিএন ব্যবহার সম্পূর্ণ অবৈধ করে তোলে। বেলারুশ টর ব্রাউজারও ব্লক করেছে, একটি নেটওয়ার্ক যা ব্যবহারকারীদের বেনামে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করতে দেয়। দেশটি সিগন্যাল এবং টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যাতে বাকস্বাধীনতা সীমিত করা, ভিন্নমত দমন করা এবং সরকারবিরোধী তথ্যের বিস্তার রোধ করা যায়। বেলারুশে একটি ভিপিএন ব্যবহার করার ফলে একটি মোটা জরিমানা হতে পারে।
তুরস্ক
তুরস্কেও ভিপিএন ব্যবহার নিষিদ্ধ। তুর্কি সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই মূলত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা প্রায় ১০টি ভিপিএন প্রদানকারী এবং টর নেটওয়ার্ক, বিভিন্ন নিউজ প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, এমনকি ইউটিউব, ফেসবুক, উইকিপিডিয়া এবং টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্লক করেছে। তবে ভিপিএন তুরস্কে সম্পূর্ণরূপে অবৈধ নয়। সরকারের অনুমোদিত কয়েকটি ভিপিএন সেখানে ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি দেশে ভিপিএন ব্যবহার অবৈধ বা নিষেধাজ্ঞা আছে। তার মধ্যে আছে তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ওমান এবং মিয়ানমার। এই দেশগুলোতে চীন, রাশিয়া বা উত্তর কোরিয়ার মতো ভিপিএন সরকারিভাবে ব্যবহার নিষেধ। লুকিয়ে ব্যবহার করলে জেল, জরিমানার সম্মুখীন হতে হয় নাগরিকদের।
আরও পড়ুন
সূত্র: টম গাইড
কেএসকে/এমএস