ফেসবুক-টিকটকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০৩ এএম, ২৬ জুলাই ২০২৪
ফেসবুক ও টিকটকের লোগো

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে। কিন্তু নিজেদের পলিসি গাইডলাইন অনুযায়ী অনেক ছবি ও ভিডিও ব্লক করেনি ফেসবুক-টিকটক কর্তৃপক্ষ। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

জুনাইদ আহমেদ পলক লিখেছেন, ফেসবুক-টিকটক তাদের নিজেদের পলিসি গাইডলাইনস নিজেরাই মেনে চলে না। তারা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা নেয়। অথচ আমাদের দেশে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে, পুলিশকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করার ছবি-ভিডিও প্রকাশ করে উসকানি ছড়িয়ে দিচ্ছে, যেগুলোকে তারা ব্লক করছে না। এগুলোকে তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে, এমনকি তারা সেই কন্টেন্টের বুস্টিং থেকে আয় করছে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আরও লিখেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে ফেসবুক-টিকটকসহ সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসা হবে। তারা যদি সেখানে অংশ নিয়ে সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারে, তবে তাদের প্রতি আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এদিকে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে গুজব, অপপ্রচার, উসকানি ও সহিংসতামূলক প্রচার-প্রচারণা ঠেকাতে কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে, ফেসবুক-টিকটক কর্তৃপক্ষের কাছে তার জবাব চাইবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তারা জবাব না দিলে অথবা তা সন্তোষজনক না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বিটিআরসি।

বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট দুটি উইংয়ের (শাখা) দুজন পরিচালক জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া বুধবার (২৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোববার (২৮ জুলাই) বিটিআরসির সঙ্গে বসে ঠিক করা হবে ফেসবুক ও টিকটক কর্তৃপক্ষকে কীভাবে, কী ধরনের চিঠি দেওয়া হবে। বার্তা পাঠানোর পর তাদের তিনদিনের মধ্যে বিটিআরসিতে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলা হবে।’

কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে- তা নিয়ে জানতে চাইলে পলক বলেন, ‘তাদের জবাব পেলে আমরা তা বিশ্লেষণ করে দেখবো। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কী রেসট্রিকশন (নিষেধাজ্ঞা) দেওয়া হবে, সেটা তখন ভাবা হবে।’

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া; বিশেষ করে ফেসবুক ও টিকটকের কোনো জবাবদিহি নেই। না বাংলাদেশ সরকারের কাছে আছে, না তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে আছে। ফেসবুক-টিকটক তাদের যে প্রাইভেসি সেটিংস কিংবা পলিসি গাইডলাইন যেগুলো দিয়ে রাখে, এগুলো একেবারেই তারা নিজেরাও মানে না।’

‘তারা একেক দেশের জন্য একেক ধরনের আচরণ করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপপ্রচার হচ্ছে, সে বিষয়ে তাদের এক ধরনের অবস্থান। ইসরায়েল যে ফিলিস্তিনের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে, সেখানে ফেসবুক বা অন্য যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আছে, তাদের ভূমিকাটা কী?’

‘অথচ আমাদের এখানে র‌্যাবের গাড়ি ভাঙচুর করছে, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করছে, পুলিশকে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা হত্যা করছে; সেই ভিডিওগুলো ছড়িয়ে উসকানি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো ব্লক করা হচ্ছে না। যে গ্রুপগুলো থেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য-উপাত্ত, ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো বিটিআরসি থেকে বারবার বলার পরও তারা ব্লক করছে না।’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।

ফেসবুক-টিকটকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি

বিটিআরসির উদ্যোগ কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে সন্দিহান তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির। তিনি বলেন, ‘কোনো কিছু বন্ধ করে দেওয়া সমাধান নয়। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারাটা সাফল্য। যতদিন এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে তাদের কোনো অফিস স্থাপন না করবে, ততদিন তাদের থেকে ভালো রেসপন্স পাওয়া কষ্টসাধ্য।’

বিটিআরসিকে আরও তৎপর হতে হবে এবং ব্যবহারকারীদের সচেতন করতে আরও বড় পরিসরে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলেও মনে করেন এ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গত ১৬ জুলাই থেকে মোবাইলে ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। এরপর ১৮ জুলাই রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। পাঁচদিন পর ২৩ জুলাই রাতে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করে সরকার। ২৪ জুলাই রাত থেকে সব জায়গায় ব্রডব্যান্ড চালু করে দেওয়া হয়।

বিটিআরসি জানিয়েছে, আগামী রবি বা সোমবার (২৮ বা ২৯ জুলাই) মোবাইল ইন্টারনেট চালু করে দেওয়া হতে পারে। তবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আপাতত বন্ধই থাকছে।

তবে বিটিআরসি ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম বন্ধ রাখলেও ভিপিএন ব্যবহার করে বহু ব্যবহারকারী এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। গত দুদিনে পর্যায়ক্রমে ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে।

এমএমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।