যে দেশে ১৭০ লাখ মানুষের ২ কোটি সাইকেল

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩১ পিএম, ০৩ জুন ২০২৪

দুই চাকার যান হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন হচ্ছে সাইকেল। ছোটরা তো বটেই বড় সবারই খুব প্রিয় রাইড রাইড। বাইসাইকেলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো যতই যানজট থাকুক না কেন বা যতই সরু রাস্তা হোক না কেন, এটি সহজেই কারও কোনো ক্ষতি না করেই এগিয়ে যেতে পারে।

ক্রমবর্ধমান দূষণের কারণে, বেশিরভাগ দেশই এখন সাইকেলের পক্ষে। পরিবেশ-বান্ধব রাইড, যা কেবল চালানোই সহজ নয়, প্রত্যেকের বাজেটেও ফিট করে। সাইকেল চালাতে কোনো লাইসেন্সও লাগে না। আজ বিশ্ব সাইকেল দিবস। এই জনপ্রিয় বাহনটির জন্য আছে গোটা একটি দিন। পুরো বিশ্ব পালন করে এই দিনটি।

১৮১৭ সালে জার্মানির বাসিন্দা কার্ল ভন ড্রেস এমন একটি দুই চাকার গাড়ি আবিষ্কার করেছিলেন, যাতে দৌড়োনোর জন্য ঘোড়ার প্রয়োজন না পড়ে। এরপর ওই গাড়িটির মেশিনটি ড্রেজিন নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি থেকে আধুনিক সাইকেল তৈরি হয়। এরপর ১৮৬০ সালে ফ্রান্সে সাইকেলটির নাম হয়। পরবর্তীতে স্কটল্যান্ডের কির্কপ্যাট্রিক ম্যাকমিলান আধুনিক ফ্রেমের সাইকেলের প্রথম মডেল তৈরি করেছিলেন।

যে দেশে ১৭০ লাখ মানুষের ২ কোটি সাইকেল

বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস উদযাপনের ধারণাটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন একজন পোলিশ-আমেরিকান সমাজ বিজ্ঞানী অধ্যাপক লেসজেক সিবিলস্কি, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছিলেন। প্রতি বছর বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস উদযাপনে রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রচার শুরু করেছিলেন তিনি। অবশেষে তুর্কমেনিস্তান এবং অন্যান্য ৫৬টি দেশের সমর্থন পেয়েছিলেন এই ক্ষেত্রে। এরপর ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ ঘোষণা করেছিল যে প্রতি বছর ৩ জুন বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস পালন করা হবে।

নেদারল্যান্ডসকে বিশ্বের সাইকেল রাজধানী বলা হয়। এখানকার জনসংখ্যার মাত্র ১৭০ লাখ মানুষের কাছেই রয়েছে ২ কোটি সাইকেল। সাইক্লিস্টের দিক থেকে আমস্টারডাম পিছিয়ে থাকলেও, আমস্টারডামের এই শহরের মানুষ সাইকেল চালাতে খুবই ভালোবাসেন। এখানকার মানুষ যে কোনো জায়গায় যেতে সাইকেল পছন্দ করেন। এ কারণে নেদারল্যান্ডসকে সাইকেলের দেশও বলা হয়।

সাইক্লিস্টের দিক থেকে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এগিয়ে। সাইকেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বের এক নম্বরে রয়েছে। এখানে ৬২ শতাংশ মানুষ দীর্ঘ দূরত্বের ক্ষেত্রেও সাইকেল চালিয়ে ভ্রমণ করে। স্কুল ও অফিসের মতো জায়গায় যেতে এখানে সাইকেল ব্যবহার করা হয়। কোপেনহেগেনের সাইকেল চালকদের জন্য সেতু ও মহাসড়ক নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা হয়।

এ শহরে নেই কোনো যানবাহনের ধোঁয়া। ফলে সেখানকার পরিবেশও দূষণমুক্ত। কোপেনহেগেনে ৬ লাখ ৭৫ হাজার সাইকেল ও ১ লাখ ২০ হাজার গাড়ি আছে। অর্থাৎ সে শহরের ৬ ভাগের ৫ ভাগ মানুষই সেখানে সাইকেল ব্যবহার করেন। ১৯৭০ সালে সেখানে সাইকেলের ব্যবহার বাড়তে থাকে।

যে দেশে ১৭০ লাখ মানুষের ২ কোটি সাইকেল

২০১৬ সালের তথ্যানুযায়ী, কোপেনহেগেনের সাইক্লিস্টরা মোট ১.৪ মিলিয়ন কিলোমিটার সাইকেল চালায়। ২০০৬ সালের পরে এটি আর ২২ শতাংশ বেড়েছে। কোপেনহেগেন শহর জুড়ে সাইক্লিং সুপার হাইওয়ে ও উদ্ভাবনী সেতুগুলো সবই সাইকেলবান্ধব। সব মিলিয়ে সাইক্লিস্টদের জন্য নিরপদ এক স্থান হলো কোপেনহেগেন।

শহরকে কার্বনমুক্ত করার চেষ্টায় সাইকেলবান্ধব নগরী গড়ে তুলেছেন সেখানকার কাউন্সিলর। দ্রুত যাতায়াত, যানজট কমানো এবং শাররিক অসুস্থতা কমাতে ডেনমার্কের সাইক্লিং দূতাবাস সাইকেল চালানোর পক্ষে বিভিন্ন প্রচারণা করে থাকে। সেখানকার সব সাইকেলের দোকানগুলো প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে ক্রেতাদের কাছে সাইকেল বিক্রি করেন।

সাইকেলবান্ধব শহর গড়তে ২০১৭ সালে কোপেনহেগেন অঞ্চলে ৩.৯ কিলোমিটার নতুন পথ, ৬০০ কিলোমিটার সবুজ সাইক্লিং রুট ও ৫টি নতুন সুপার সাইকেল পথ উদ্বোধন করা হয়। সাড়ে ৩ হাজার নতুন পার্কিং স্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়েছে ও ১২ হাজার ৯০০ পরিত্যক্ত সাইকেল সংগ্রহ করা হয়েছে।

তবে বর্তমানে ডেনমার্কের মতোই প্যারিস, চীনেও সাইকেল ব্যবহার বেড়েছে। চীনের জিয়ামেন শহর সাইকেলের জন্য একটি ৭.৬ কিলোমিটার এলিভেটেড স্কাইওয়ে তৈরি করেছে। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশেই বেড়েছে সাইকেলের ব্যবহার। যাতায়াত খরচ বাঁচানো থেকে শুরু করে সাইকেল চালানোর বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও আছে। সাইক্লিং একটি দুর্দান্ত ব্যায়াম। নিয়মিত সাইকেল চালালে পেশি শক্ত হয়, হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে।

সূত্র: ন্যাশনাল টুডে

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।