বাবার কারণে সন্তানকে বের করে দিল বর্ডার গার্ড স্কুল
কুষ্টিয়ায় বাবার অপরাধের কারণে মেধাবী এক শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুরের বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। অমানবিক এ ঘটনার শিকার আকাশ কুমার ওই স্কুলের দশম শ্রেণির একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় কুষ্টিয়া জুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ায় ২০১১ সালে বাবা বাবু বিশ্বাসকে বিডিআর থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হলেও তিনি নিয়মিত রেশন ও পেনশন পেয়ে আসছেন। এ ঘটনায় প্রায় চার বছর পর গত ৩ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্ত বাবু বিশ্বাসের ছেলে মিরপুরের বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র আকাশ কুমারকে বিদ্যালয় থেকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র প্রদান করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মিরপুর ৪৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এবং মিরপুর বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি লে: কর্নেল আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। নিরাপত্তা জনিত কারণে ওই ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তবে ওই ছাত্র বিদ্যালয়ের কী ধরণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছিল এ প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, উপরের লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ীই ওই ছাত্রকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে।
বাবার অপরাধে ছেলেকে শাস্তি দেয়া যায় এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি তিনি।
তবে তিনি বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। বরং মিডিয়ায় এ বিষয়ে কোনো রিপোর্ট প্রকাশ না করার জন্য তিনি এ প্রতিবেদককে অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল রবিউল হক জানান, তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নির্দেশে ওই ছাত্রক ছাড়পত্র প্রদান করতে বাধ্য হয়েছেন।
মিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জুলফিকার হায়দার জানান, ওই স্কুলটি বিজিবি দ্বারা পরিচালিত হয়। বাবার অপরাধে ছেলেকে কোনোভাবেই শাস্তি দেওয়া যায় না। এটা চরম অন্যায় এবং অনৈতিক।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান রবিউল হকের কাছে জানতে চাইলে রবিউল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তাকে জানান, বিষয়টি অনৈতিক মনে করেই তারা ওই ছাত্রকে ছাড়পত্র প্রদান করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তিনি ছাড়পত্র প্রদান করতে বাধ্য হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ তাকে (রবিউল হককে) বলেন, আমি যেটা বলছি এটাই অর্ডার। উপরের নির্দেশনা রয়েছে ওই ছাত্রকে টিসি দিতে হবে।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাদ জাহান বলেন, এ বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। আর তাছাড়া ওই স্কুলটি বিজিবি দ্বারা পরিচালিত। খোঁজ-খবর নিয়ে এ বিষয়ে যদি তাদের কোনো কিছু করণীয় থাকে তাহলে তিনি তা করবেন বলে জানান।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানান, ছুটিতে কুষ্টিয়ার বাইরে অবস্থান করার কারণে বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন না। বিজিবির সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
ওই শিক্ষার্থীর পরিবার জানায়, আকাশ কুমার প্রাথমিক ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কুষ্টিয়ায় বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়ে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে আসছিলো। তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষিত হয়ে আলোকিত মানুষ হওয়া। কিন্তু বাধ্যতামূলক ছাড়পত্রের কারণে তার সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র পাওয়া শিক্ষার্থী আকাশ কুমার বিশ্বাস জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে জানায় বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত কোনো পরিবারের সন্তান তাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষা নিতে পারবে না। তুমি ছাড়প্রত্র নিয়ে চলে যাও। এরপর তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীর মা প্রার্থনা রানী জানান, আকাশের বাবা বাবু বিশ্বাসকে ২০১১ সালে বিডিআর থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সন্তানের শিক্ষা জীবন ধ্বংসের আশঙ্কায় ভেঙে পড়েছেন আকাশের মা ও বাবা।
আকাশের বাবা বাবু বিশ্বাস বলেন, আমার কারণে আমার সন্তানকে বের করে দিয়েছে এটা কতটুকু অন্যায় তা আপনারা ভালো জানেন, আমার কিছু বলার নেই।
আল-মামুন সাগর/এফএ/এমএএস/আরআইপি