মংলা-ঘাষিয়াখালী নৌরুট খননকাজে ৮টি ড্রেজার বন্ধ
মংলা-ঘাষিয়াখালী আর্ন্তজাতিক নৌরুট খনন কাজে নিয়োজিত ১১টি ড্রেজারের মধ্যে ৮টি বন্ধ রয়েছে। বাকি ৪টি দিয়ে ঢিমে তালে চলছে খনন কাজ।
এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (ড্রেজার) বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনা ও প্রকল্প এলাকায় অবস্থান না করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তদারকি ও নজরদারির অভাবে অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই চ্যানেলের খনন কার্যক্রম।
বিশ্বের বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন রক্ষা ও মংলা বন্দর সচলের লক্ষে আর্ন্তজাতিক এ নৌ চ্যানেলটি খননের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে বর্তমানে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ড্রেজিং কার্যত্রুম এমন অভিযোগ অনেকের।
খনন কাজের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কর্মস্থলে না থেকে বেশির ভাগ সময় থাকেন ঢাকায়। ফলে দেখাভালের অভাবে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ধীর গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে চ্যানেল খনন কাজে বিআইডব্লিউটিএর ৬টি ও বেসরকারি সংস্থার ৫টি ড্রেজার খনন কাজে নিয়েজিত রয়েছে। এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খান গ্রুপের ২টি, এসএস রহমান কোং এর ২টি ও চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের ১টিসহ ৫টিই বন্ধ রয়েছে। আর বিআইডব্লিউটিএর বন্ধ রয়েছে ৩টি ড্রেজার।
যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে সংশিষ্টদের দাবি, ত্রুটিতো যে কোনো মেশিনে থাকে। আজকে ত্রুটি আছে ঠিক করার পর আবার চালু হয়ে যাচ্ছে। ত্রুটি থাকলেও সেগুলো সারিয়ে আবারো কাজ করা হচ্ছে।
মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেলের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার ২০১৪ সালের ১৫ জুন মৃত এ চ্যানেলটি সচলের জন্য খনন কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালের ১৫ জুন চ্যানেলটি পুরোপুরি খনন শেষে নৌযান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা থাকলে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রায় ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চ্যানেল হতে প্রায় এক কোটি কিউবিক ঘন মিটার পলি মাটি অপসারণ করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ শুরুতে খনন কাজে যে গতি ছিল বর্তমানে তা অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে খননকৃত স্থানে দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হওয়াতে কাঙ্খিত ফলাফল আসছে না, ঠিক থাকছে না চ্যানেলের নাব্যতা। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথভাবে চিহ্নিত চ্যানেল সংলগ্ন ৮৩টি শাখা নদী ও শাখা খালের জরিপ কাজ গত ২ মাসেও সম্পন্ন হয়নি।
চ্যানেলটির সংযোগ খালগুলোর অবৈধ দখলমুক্ত ও বাধ অপসারণ না হওয়ার কারণে নদীতে স্রোত না বাড়ায় পানি প্রবাহ এবং নাব্যতা কমছে প্রতিনিয়ত।
এ বিষয়ে পরিবেশ সুরক্ষায় উপকূলীয় জোট’র সভাপতি এসএম শাহনওয়াজ আলী বলেন, চ্যানেল খননে পরিবেশবাদী সংগঠনের বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের মতামত অবজ্ঞা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশবাদী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ-সিডিপির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম বলেন, চ্যানেল খননের পূর্বে সংশ্লিষ্ট শাখা নদী-খালগুলো উন্মুক্ত করা জরুরি ছিল। সেই সঙ্গে অবৈধ বাধ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখনও গ্রহণ করা হয়নি। জলাশয়গুলোর পানি চ্যানেলে নামার ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধ বাধ ও পলি অপসারণে এখনই ব্যবস্থা না নিলে এ চ্যানেলটির কাঙ্খিত ফলাফল পেতে বেগ পেতে হবে।
চ্যানেল খননের বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডক্টর শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, খননের বিষয় নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি। চ্যানেলটি প্রথমে যেভাবে খনন শুরু হয়েছে সেটি খুবই ত্রুটিপূর্ণ। কারণ চ্যানেল খননের পূর্বেই প্রভাবশালীদের দখলে থাকা নদী খাল দখল মুক্ত করে অবৈধ বাধ অপসারণ করা প্রয়োজন ছিল।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে জোয়ার ভাটার স্রোত কম তাই পলি কম আসছে। কিন্তু পানি প্রবাহ অনুপাতে পলি ঠিকই পড়ছে। তিনি সেনা ও নৌ বাহিনীর তত্বাবধানে এ চ্যানেলটি খননের দাবি জানান।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ড্রেজার বন্ধ থাকায় খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ড্রেজিং) ফরহাদ উজ জামান বলেন, খনন কাজ তো কিছুটা ব্যাহত হচ্ছেই। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর ৪টি ও বেসরকারি কয়েকটি ড্রেজার বন্ধ রয়েছে। মূলত দীর্ঘদিন লবণ পানিতে কাজ করার কারণে ড্রেজারের বিভিন্ন যস্ত্রপাতি দুর্বল ও অকেজো হয়ে পড়েছে। এগুলোতে দেশীয় পাটর্স লাগালে তা আবারো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বিদেশ থেকে ভালো পাটর্স এনে লাগানোর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঢাকায় অবস্থানসহ প্রকল্পের কাজ তদারকির বিষয়ে তিনি জানান, টেন্ডারসহ বিভিন্ন কাজের কারণে ঢাকায় আসতে হয়। তারপরও সেখানে আমাদের লোকজন থাকে তাতে কাজের কোনো ক্ষতি হয় না বলে দাবি করেন তিনি।
এমএএস/আরআইপি