শতাধিক যুবকের হাতে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে সেনাবাহিনীর বে-সামরিক পদে চাকরি দেয়ার নামে শতাধিক যুবককে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।
জানা যায়, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পাড়ইল গ্রামের আয়েজ উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ হোসেনকে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে তার সঙ্গে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালাদাড় গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে ফজলুর রহমান সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
এরই সূত্র ধরে গত ১০ অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বে-সামরিক পদের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ফরহাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে বলেন ফজলুর রহমান।
এমন লোভনীয় প্রস্তাবে ফরহাদসহ এলাকার আরও ৬-৭ জন ব্যক্তি আগ্রহ প্রকাশ করলে ফজলুর রহমান প্রত্যেকের কাছ থেকে পদ অনুযায়ী ৫/৬ লাখ টাকা করে চুক্তি করেন। চাকরি প্রার্থী যুবকরা চুক্তি মোতাবেক কেউ গহণাসহ আসবাবপত্র বিক্রি করে, কেউ জমি বিক্রি করে, আবার কেউবা সুদের উপর টাকা গ্রহণ করে ফজলুর রহমানকে খবর দেয়।
এরপর ফজলুর রহমান ওই সব চাকরি প্রার্থীদের ঢাকায় নিয়ে গিয়ে তার সহযোগী সাতক্ষীরা জেলার সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর সাইফুল মাগুরা জেলার শরিফ, জাকারিয়া, সুমন, মালেক মুছা, রানা ও আলমের কাছে এই যুবকদের নিয়ে গেলে তারা নিজেদের সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাদের ৭ জনকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেন।
সে অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর একটি প্রাইভেটকারের মধ্যে ৩ জন চাকরি প্রার্থীর নিয়োগ পরীক্ষাও নেয়া হয়। আর অপর ৪ জনের পরীক্ষা নেয়া হয় ঢাকার মহাখালীর জাহাদ হোটেলের ১৩ নম্বর কক্ষে।
এরপর ওইদিন তাদের প্রত্যেককে নিয়োগপত্র দিয়ে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচবিবি উপজেলার পাড়ইল গ্রামের আয়েজ উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ হোসেনকে মমেনশাহী সিএমএসে, বছির উদ্দিনের ছেলে মীর কাশেমকে কাদিরাবাদ সেনানিবাসে, আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর ও ওহেদুল ইসলামের ছেলে ফরিদ হোসেনকে চট্টগ্রামের বিএম ভাটিয়ালী অফিসার ইউনিটে, দড়িপাড়া গ্রামের আজাদুল ইসলামের ছেলে গোলজার হোসেনকে চট্টগ্রামের বিএসডি সেনানিবাসে এবং একই এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আবু তালেব, বাবুল হোসেনের ছেলে আবু মুছা, গোলাম মোস্তফার ছেলে নবীর হোসেন ও ওবাইদুল হোসেনকে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর অর্ডিনেন্স রের্কড স্কুল সেন্টারে যোগদানের জন্য বলা হয়। আর এই বাবদ তারা প্রত্যেক চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৫-৭ লাখ করে হাতিয়ে নেয়। এতে করে ওই ১০ জন বেকার যুবকের কাছ থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।
চাকরি প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ে (২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর) উল্লেখিত ক্যান্টমেন্টগুলোতে যোগদানের উদ্দেশ্যে গেলে তাদের নিয়োগপত্র দেখে সেখানকার কর্মকর্তারা নিয়োগ পত্রগুলো ভুয়া বলে তাদের এক রাত আটক রেখে ছেড়ে দেন।
এদিকে এই হতভাগ্য যুবকরা নিজেদের সর্বস্ব বিক্রি করে ও সুদের উপর ঋণের টাকা নিয়ে এখন মানবতের জীবনযাপন করছেন বলেও অভিযোগ করেন। তারা সাংবাদিকদের জানান, নিযোগপত্র দেয়ার সময় তাদের সকলের কাছ থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল কাগ পত্রও নিয়ে নেন। ফলে এখন তারা অন্য জায়গায় কোন চাকরির আবেদনও করতে পারছেন না। ভুক্তভোগী যুবকরা প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পাঁচবিবি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি বিভিন্ন সূত্রে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাশেদুজ্জামান/এসএস/এমএএস/আরআইপি