অনুদান পেলেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা
দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামাঞ্চলে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ কমানোর কার্যকরী উপায় বের করার জন্য আইসিডিডিআরবি’র অসংক্রামক রোগ প্রোগ্রামের বিজ্ঞানীরা ও তাদের আর্ন্তজাতিক সহযোগীরা সম্মিলিতভাবে যুক্তরাজ্যের আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (ডিএফআইডি), মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং দ্য ওয়েলকাম ট্রাস্ট থেকে একটি গবেষণা করার জন্য বড় অনুদান পেয়েছে।
হাইপারটেনশন অথবা উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকি এবং মৃত্যুর ক্রমবর্ধমাণ কারণ, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায়ই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাকে হৃদরোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব ক্রমবর্ধমাণ, এই দেশগুলো বয়স্কদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে একটি উন্নত স্বাস্থ্য পদ্ধতি গবেষণার আওতায় এনে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং স্বল্প খরচে পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই করা হবে।
এই গবেষণাকে কোবরা-বিপিএস (কন্ট্রোল অব ব্লাড প্রেসার অ্যান্ড রিস্ক অ্যাটেনশন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা হিসেবে অভিহিত করা হবে। সিঙ্গাপুর গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুলের ডিউক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তাজিন জাফর ত্রিদেশীয় এই গবেষণাটির নেতৃত্ব দেবেন। গবেষণাটিতে ৩টি দেশের ৩০টি গ্রামে ২৫০০ জন রোগীকে ৩ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এই গবেষণায় যে পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করা হবে তাহলো, রোগীদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা উচ্চরক্তচাপ নির্ণয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের কাছে রোগীকে রেফার করা, উচ্চ রক্তচাপের জন্য প্রচলিত ওষুধ ব্যবহারসহ উচ্চ রক্তচাপ ব্যবস্থাপনায় ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কার্যকরী চিকিৎসা দেয়ার সুবিধার্থে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসার সু-বন্দোবস্ত করা, ইত্যাদি। আমাদের প্রস্তাবিত গবেষণার কার্যক্রম উচ্চরক্তচাপ কমানোর জন্য কতটুকু কার্যকরী হতে পারে তা জানার জন্য বর্তমানে প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কার্যক্রমের সাথে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হবে এবং পদ্ধতিগুলো সাশ্রয়ী কিনা তা দেখা হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই তিনটি দেশই অসংক্রামক রোগ, যেমন হৃদরোগ, প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং গবেষণাটি থেকে প্রাপ্ত ফলাফল এই দেশগুলোর নীতিনির্ধারকদেরকে জনগণের উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ড. আলিয়া নাহিদ, আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ও অসংক্রামক রোগ প্রোগ্রামের প্রধান এবং এই গবেষণার বাংলাদেশ অংশের প্রধান গবেষক, মনে করেন এই গবেষণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় এবং সরকারের অল্প সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে সরকারি স্বাস্থ্য-কর্মীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা প্রদানে ক্ষমতায়ন করবে এবং গ্রামাঞ্চলে মানুষের মাঝে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব কমাতে সহায়তা করবে। তবে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন পরে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তাই এই চিকিৎসা ব্যয় সংকোচন করার জন্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালু করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশ অংশটি টাঙ্গাইল জেলায় সংঘটিত হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি একটি অসংক্রামক রোগ বিষয়ে ৬ বছরের কর্ম-পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল এক্ষেত্রে সাশ্রয়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে।
বিশ্বে প্রতিবছর সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষ অসংক্রামক রোগের কারণে মারা যায়, যা মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশ এবং যার ৮০ শতাংশেরই মৃত্যু ঘটে স্বল্প এবং মাঝারি আয়ের দেশে। এই ক্রমবর্ধমান মহামারী দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি বড় সমস্যা - এতে অল্প বয়সেই মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয় ও কর্মক্ষম জীবনসীমা কমে আসে এবং মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সংস্থা অসংক্রামক রোগের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যয় বিবেচনা করে এর প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণকে একবিংশ শতাব্দীতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
প্রফেসর জন ডি ক্লেমেন্স, আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক এবং প্রকল্পটির সহ-গবেষক, বলেন, কোবরা-বিপিএস গবেষণায় যে কৌশলগুলোর মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী, টেকসই এবং সাশ্রয়ী সমাধান দেবে যা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করা যাবে। এর মাধ্যমে হাজার হাজার জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
এই গবেষণাটি যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে ডিএফআইডি-র গ্লোবাল হেলথ ট্রায়ালস প্রকল্প, মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং দ্য ওয়েলকাম ট্রাস্ট। এই গবেষণার লক্ষ্য হল স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে নতুন জ্ঞান অর্জন করা যা দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করা যায়।
এমইউ/এসএইচএস/পিআর