আওয়ামী লীগের কৌশলেই ধরাশায়ী বিএনপি


প্রকাশিত: ০৩:১০ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

পৌরসভা নির্বাচনে এবারও আওয়ামী লীগের কৌশলের জয় বলে মনে করা হচ্ছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের ঘরে তুলেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের এমন কৌশলে ধরাশায়ী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি। দিশেহারা জামায়াত-জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। প্রচার রয়েছে সরকার দলের আওয়ামী লীগের ‘বালুর ট্রাক’ কৌশলেই আটকে যায় বিএনপি’র নির্বাচন ঠেকানোর সকল পরিকল্পনা। একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।

বিএনপির আন্দোলন নস্যাৎ করতে সরকার বিশেষ কৌশল নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে নানা গড়িমশি করলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা। শুরুতে ভালো করলেও পরের ধাপগুলোতে সরকার পক্ষের শক্তির কাছে হেরে যায় বিএনপি। বিশেষ কৌশলে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের মাঠ দখলে রাখে আওয়ামী লীগ।

বছর গড়িয়ে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে সরকার পতনের ডাক দিয়ে ফের আন্দোলনে নামে বিএনপি-জামায়াত জোট। টানা তিন মাসের আন্দোলনে সহিংসতার মাত্রা যখন বেড়েই চলছে, ঠিক তখনই বিশেষ কৌশল হিসেবে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে সরকার। এখানেও অংশগ্রহণ করা নিয়ে নানা ধুম্রজাল সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী দেয় বিএনপি। নির্বাচনের দিন রণে ভঙ্গ দিয়ে দুপুরের আগেই নিজেদের গুটিয়ে নেয় বিএনপির প্রার্থীরা। সরকারের কৌশলে ভোটের মাঠ ছাড়া হয়ে নেতাকর্মীদের হতাশ করে বিএনপি।

সরকারের কৌশলী এই অবস্থানের ধারাবাহিকতায় এবারের পৌর নির্বাচন। এই নির্বাচনে সরকারের প্রধান কৌশল ছিল দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে সরকারের সিদ্ধান্ত বিরোধীতা করলেও উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পৌর নির্বাচনে অংশ নয় বিএনপি। নানা নাটকীতায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিরোধীতা ছিল খোদ নিজেদের মধ্যেই। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে যেতে হয় বিএনপিকে। আর এটিই ছিল পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের অন্যতম কৌশল। এবারে বর্জনের পরিবর্তে সারাদিন নির্বাচনে থেকেও ভরাডুবি বিএনপির।

তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই সরকার প্রশাসন দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে কোণঠাসা করতে থাকে। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শত শত মামলায় হাজার হাজার আসামী করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ঘর ছাড়া করা হয় অনেক আগে থেকেই। নির্বাচনের আগে এসব মামলায় অনেককেই গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এই মামলা, গ্রেফতার আতঙ্কেই পৌর নির্বাচনের মাঠে নিষ্ক্রিয় ছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা।

জাগো নিউজ রিপোর্টিং টিম সরজমিনে গিয়েও গ্রেফতার আতঙ্কের সত্যতা পায়। ঢাকার অদূরে সাভারে নির্বাচনের সারা দিনে কোনো বিএনপির নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। তাদের কোনো নির্বাচনী সহায়তা কেন্দ্রও ছিল না। এজেন্ট ছিল না অনেক কেন্দ্রেই। সাভার পৌরসভার গোটা নির্বাচনী এলাকা ঘুরেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর ধানের শীষ প্রতীকের একটি পোস্টারও দেখতে পাওয়া যায়নি।
২০১৬ সালের সরকারের পতন আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলে আসছিলেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। ধারণ করা হচ্ছে, বিএনপির আন্দোলনের সেই শক্তি গোড়াতেই ভেঙ্গে দিতে সরকারের এই পৌরসভা নির্বাচনের কৌশলী খেলা। যে খেলায় বিএনপি আবারও ধরাশায়ী।

এএসএস/এআরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।