মেসিকে থুতু রিভারপ্লেট সমর্থকদের!
ক্লাব ফুটবল তো আর জাতীয় দল নয়। জাতীয় দলেও তো দেখা যায় কোন কোন কোচকে নিজ দেশের বিপক্ষেই ডাগ আউটে দাঁড়াতে। নিজের দেশকে কিভাবে হারাতে হবে, সে পরিকল্পনা, কৌশল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে! বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চেও এমন দৃশ্য হর-হামেশা দেখা যায়। কোন কোন ফুটবলারও তো দেশ বদলে খেলেন নিজের দেশের বিপক্ষে। স্পেনের দিয়েগো কস্তাই তো এখন সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ব্রাজিলের বিপক্ষে স্পেনের ম্যাচ হলে তো তাকেই খেলতে হবে নিজের দেশের জালে বল জড়িয়ে কিভাবে স্প্যানিশদের বিজয় এনে দেয়া যায় সে চেষ্টা করতে।
ক্লাব ফুটবল তো এসব আবেগ কিংবা জাতীয়বাদের অনেক বাইরে। এখানে এক দেশের ফুটবলার আরেক দেশের ক্লাবের বিপক্ষে খেলবেন, এক ক্লাবের সাবেক ফুটবলার সেই ক্লাবেরই বিপক্ষে অন্য কোন ক্লাবের হয়ে খেলতে নামবেন- এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আর্জেন্টিনার রিভারপ্লেট সমর্থকরা যা করেছে, তা অতি ঘৃণ্য এবং খুবই জঘন্য একটি কাজ। জাপানের ইয়োকোহামা বিমানবন্দরে মেসিকে হেনস্তা করাই শুধু নয়, তার দিকেও কেউ কেউ থুতু ছিটিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অপরাধ! আর্জেন্টাইন হয়েও নিজ দেশের ক্লাব রিভারপ্লেটের বিপক্ষে গোল করা। জাপানোর ইয়োকোহামায় অনুষ্ঠিত ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে রিভারপ্লেটের বিপক্ষে প্রথম গোলটা করেছিলেন মেসিই। এছাড়া পুরো ফাইনালে ছিলেন দুর্দান্ত পারফরমার। তো, প্রথম গোলটা মেসির পা থেকে এলেও, উদ্যাপন করতে গিয়ে রিভারপ্লেট সমর্থকদের দিকে চোখ পড়ার পরই ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে দুই হাত তুলেছিলেন মেসি।
তাতেও রক্ষা হলো না। ম্যাচের পর স্পেনে ফেরার উদ্দেশ্যে টোকিওর নারিতা বিমানবন্দরে গেলে সেখানে বোর্ডিং পাস নেওয়ার লাইনেই মেসিকে দেখে তেড়ে আসে একদল ক্ষুব্ধ রিভারপ্লেট সমর্থক। তারা তাকে গালি দিতে থাকে। এমনকি কেউ কেউ টানা-হেঁচড়া করে লাঞ্চিতও করেন মেসিকে। দু’একজন তার দিকে থুতুও ছুড়ে মারে।
অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত সতীর্থকে বাঁচাতে ছুটে আসেন বার্সার ফুটবলাররা। এ সময় মেসিকে বাঁচাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন হ্যাভিয়ের মাচেরানোও। একসময় রিভারপ্লেটের ফুটবলার ছিলেন তিনিও। এ সময় মেসিকে আগলে ধরে রাখতে দেখা যায় লুইস সুয়ারেজকে। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা রক্ষিদের সহায়তায় বিমানবন্দরের ওই এলাকা ত্যাগ করতে সক্ষম হন মেসি এবং তার সতীর্থরা।
রিভারপ্লেট কোচ মার্সেলো গ্যালার্ডো বলেন, ‘আমি ঘটনাটা দেখিনি। শুনেছি এবং এরপর এটা নিয়ে কথা বলেছি। কখনওই এমন ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। আমি এ জন্য নিজেকেও দোষি মনে করছি। মেসি আমাদের দেশে জন্মেছেন। তিনি বিশ্বসেরা এবং দেশের হয়ে খেলেন। অবশ্যই তিনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। তাকে সেটা দিতেই হবে। আমি কোনভাবেই এমন আচরণকে সমর্থণ করতে পারি ন।’
রিভারপ্লেট সভাপতি রোদোলফো ডি’ওনোফ্রিও এরই মধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এ ঘটনায়। সমর্থকদের এমন আচরণে বেশ অবাক রিভারপ্লেট সভাপতি, ‘খুব নরম করেও যদি বলি তবু বলতেই হচ্ছে, সব সময় এমন কিছু অপদার্থ পাবেন আপনি। মেসি আর্জেন্টিনার সেরা খেলোয়াড়, একজন নিপাট ভদ্রলোক। গোল করার পরও সে কিন্তু বিনয়ের ভঙ্গিতে হাতও তুলেছিল।’
উল্লেখ্য, ১২ বছর বয়সে এই রিভারপ্লেটের হয়েই ট্রায়াল দিয়েছিলেন মেসি। ওই সময়ই ক্লাব কর্মকর্তাদের নজরে পড়েছিলেন তিনি। এমনকি তাকে দলে নেয়াটাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল রিভারপ্লেট। কিন্তু, মেসির শারিরীক অবস্থা ও হরমোন থেরাপির চিকিৎসা খরচ মেটাতে পারবে না বলেই তাকে শেষ পর্যন্ত নিল না রিভারপ্লেট। শেষ পর্যন্ত সুযোগ পেয়ে বার্সেলেনায় চলে আসেন মেসি এবং ভর্তি হয়ে যান লা মাসিয়ায়। সেখান থেকেই আজকের ‘মেসি’তে রূপান্তরিত হলেন তিনি। নিশ্চয় রিভারপ্লেট নিজেদের করা ভুলটা নিয়ে এখন আক্ষেপ করে। ক্লাব ইতিহাসে এটাই যে ছিল তাদের সেরা ভুল!
আইএইচএস/এমএস