ভোটের আগে ভাই ভাই : শেষ হলে খবর নাই
ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে বিরাজ করছে বিয়ে বাড়ির আমেজ। এই আমেজকে বিয়ে বাড়ির সঙ্গে তুলনা করেছেন খোদ পৌর মেয়র প্রার্থীরা।
ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের। ভোট দেবেন একবার, সেবা পাবেন বারবার। ৩০ তারিখ ভোট দিন, মার্কা .... জেনে নিন। এদিক-সেদিক যেদিকে যাই, আপনার কোনো তুলনা নাই। ৩০ তারিখ শুভ দিন, .... মার্কায় ভোট দিন। এই রকম আরো কত ছন্দ মেশানো স্লোগান। প্রতিটি স্লোগানের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে প্রতীক ও প্রার্থীর নাম।
ঠিক এমন সময় পাশ থেকে এক পথচারী নিজেও ছন্দ মিলিয়ে রসিকতা করে বললেন, ভোটের আগে ভাই ভাই, ভোটের পরে খবর নাই ! এতে উপস্থিত কয়েকজন বেশ মজা পেলেন মনে হয়।
মূলত কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের এ রকম জনসংযোগ চোখে পড়ছে। সেই সঙ্গে লিফলেট বিতরণ, পোস্টার সাঁটানো, পথসভা তো চলছেই হরদম। কম যান না মেয়র প্রার্থীরাও। তবে তাদের প্রচারণা আরো আধুনিক ও সু-শৃঙ্খল।
ভোট আসলেই প্রার্থীরা সবাই হামার ভাই-বোন হয়ে যাছে। মাইকে অমুক ভাই, তমুক আপাক ভোট দেন কহে প্রচার করছে। বাড়ি আসিয়া হাসি হাসি মুখে খোঁজ খবর নেছে, দৌঁড়ে বুকত টানেও নেছে। কায় ধনী, কায় গরিব ওমারঠে এলা কোনো ভেদাভেদ নাই। ভোট গেলেই ওমরা হামার ভাই থাকে না, স্যার-ম্যাডাম হয়া যান।
কথাগুলো ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালপাড়া মহল্লার আবদুল আওয়ালের (৫৬)। নির্বাচন নিয়ে এলাকার ভোটারদের ভাবনা জানতে গেলে আবদুল আওয়াল এসব কথা বলেন।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে তহমিনা আখতার মোল্লা, বিএনপির মির্জা ফয়সল আমীন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে এসএম সোলায়মান আলী সরকার ও মাহফুজুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হাজীপাড়া মহল্লার আবদুল আজিজ (৬৭) বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে চমক দেখিয়েছেন। আর বিএনপি সেই চমকের জবাব দিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ছোট ভাইকে মনোনয়ন দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কার মুখ রক্ষা হয় এটাই এখন দেখার বিষয়।
মুন্সিরহাট রাস্তার ধারে বসে থাকা সাবিতা রানী (৫৪) বলেন, তার স্বামী রাজেশ চন্দ্র প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। ছেলে দিনমজুর করে সংসার চালায়। পৌরসভায় কয়েকবার গিয়েও কোনো বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা পাননি তিনি। এই পৌড়া ক্ষোভ মিশিয়ে বলেন, এখন ভোট আসিছে। এলা ওই প্রার্থীলাই দিদি, দিদি করে কত কথা কয়ছে, কত কী দিবা চাহাছে।
শহরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর মনতোষ কুমার দে বলেন, মেয়র প্রার্থীরা ভোটারের কাছে ভোট চাইছেন ঠিকই। কিন্তু পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য শহর বাস্তবায়ন করতে হলে কী কী করবেন তা কোনো প্রার্থীই সঠিকভাবে তুলে ধরছেন না।
পৌরবাসীর সুখ-শান্তির জন্য একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও পরোপকারী পৌর অভিভাবক নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ, যিনি সত্যিকার অর্থেই পৌরবাসীর স্যার-ম্যাডাম নন বরং ভাইবোন হবেন।
বিএনপির প্রার্থী মির্জা ফয়সল আমীন বলেন, আমি একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। সেই পরিবারের অনেকেই এই এলাকার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বারবার জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। আমি সেই পরিবারের সদস্য হয়ে নির্বাচনের পর তাদের সেই আচরণ ধরে রাখবো এটা নিশ্চিত।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তহমিনা আখতার বলেন, আমি তৃণমূলের মানুষ। আমি এলাকার সব শ্রেণির মানুষের ভালোবাসা পেয়েই আজ এই পর্যায়ে। তাদের ভালোবাসা আমি কী করে ভুলে যাব।
রবিউল এহসান রিপন/এআরএ/আরআইপি