বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচারকদের নিরাপত্তার নির্দেশ


প্রকাশিত: ০৮:৪৯ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি গ্রহণকারী হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার স্ব-প্রণোদিত হয়ে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিশেষ বেঞ্চের বিচারপতিরা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ  আদেশ দেন। হাইকোর্টের এই বেঞ্চেই পিলখানা হত্যা মামলায় দায়ের করা সকল ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন চলছে।

পিলখানা হত্যা মামলার বিচারপতিরা হলেন,  মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

আদেশের অনুলিপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম জাহিদ সারওয়ার সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের এ বিশেষ বেঞ্চে পিলখানা হত্যা মামলার আজ (বৃহস্পতিবার)১৩৯তম দিনের শুনানি অনুষ্টিত হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ডেথ রেফারেন্সের সমর্থনে যুক্তি পেশ করছে। আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বৃহৎ মামলা। তাই সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিচারকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর এ নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানান তিনি ।

বহুল আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের এ বিশেষ বেঞ্চে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত ৮ নভেম্বর শুরু হয়।
 
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডে আনা মামলায় দায়ের করা সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে বলে আদালত সূত্র জানায়। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।

রাজধানীর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কজনক এবং সর্ববৃহৎ এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে (তিন বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত) কারাদণ্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাস এবং আর চারজন আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তারা অব্যাহতি পায়। রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ আসামির সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এজন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারোয়ার সাংবাদিকদের জানান, মোট একশ ২৪ কার্যদিবসে মামলায় পেপারবুক উপস্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং পরে  বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। মামলা পরে  নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাঁড়ায় ৮৫০ জনে।  এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বিচার চলার সময়ে বিএডআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু  ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীরও দণ্ড হয়েছে। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মারা যান।  

রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।

এফএইচ/আরএস/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।